"I may disagree of what you say, but I will defend to the death - your right to say it." – Voltaire
আজ ধর্ম,যুক্তি,গ্লোবালাইজেশনের সুর দিয়ে আমরা ভালোবাসা দিবস পালনের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছি। আমরা ভুলে গেছি ভালবাসা দিবস নামে এই দিনটিকে আমদানী করা হয়েছে কেন। বেহায়া শফিক রেহমানের তৈরী করা হুজুগ কর্পোরেট সাপোর্টে এখন ভ্যালেন্টাইন ডে হিসেবে গোল্ডফিশ মেমরির জনগণের উদযাপনের দিন হিসেবে তৈরী করে ফেলেছে। ইতিহাস ঢেকে দেয়া এইসব তৎপরতার প্রতিরোধ জরুরী।
"আমি লেফটেন্যান্ট জেনারেল হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাহায্য ও করুণায় এবং আমাদের মহান দেশপ্রেমিক জনগণের দোয়ায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বুধবার থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সকল ও পূর্ণ ক্ষমতা গ্রহণ করছি এবং ঘোষণা করছি যে গোটা বাংলাদেশ অবিলম্বে সামরিক আইনের আওতায় আসবে।
প্রধাণ সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে আমি বাংলাদেশের সকল সশস্ত্র বাহিনীর পূর্ণ ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করছি। "
সেনাপ্রধানরা বরাবরই ভাবেন তিনি ছাড়া আর কেউ বাংলাদেশটাকে ঠিকঠাক চালাতে পারবেন না, এরশাদও এরকম হাজারটা ফিরিস্তি দিয়ে ২৪ মার্চ '৮২ তারিখে গোটা দেশটা দখল করে নিলো। শুরু হলো স্বৈরশাসন।
শিক্ষাই যে জাতির মেরুদন্ড, এটা এরশাদ জানতেন। জাতির মেরুদন্ড ভাঙার জন্য ক্ষমতা গ্রহণ করে এরশাদ প্রথমেই দায়িত্ব নেন শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করার।
১৬ জুলাই '৮২, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সদস্যদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি জানান তার সরকার একটি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করবে। যা দেশের শিক্ষার উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ বংশধরদের চরিত্র গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য। সেই সভাতেই তিনি শিক্ষার মানোন্নয়নে নিজে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করেন, এবং এর কিছুদিন পরেই তিনি এই সংগঠনের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন! শিক্ষক না হয়ে পৃথিবীর আর কেউ কোনোদিন শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের চেয়ারম্যান হতে পেরেছেন কী না আমার জানা নাই।
যখন সারাদেশে প্রকাশ্য রাজনীতি নিষিদ্ধ, সামরিক আইনের সমালোচনা মানেই সাত বছরের কারাদন্ড, তখন এরশাদের বিরুদ্ধে প্রথম রাস্তায় নামে ছাত্ররাই। প্রথম মিছিল বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী।
এদিকে এরশাদের সুযোগ্য শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খান ২৩ সেপ্টেম্বর '৮২ তারিখে একটি নতুন শিক্ষানীতির প্রস্তাব পেশ করেন। প্রথম শ্রেণী থেকেই আরবি ও দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়। আরেকটি বিতর্কিত বিষয় ছিলো উচ্চশিক্ষা। উচ্চশিক্ষা অর্জনের মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয় মেধা অথবা পঞ্চাশ শতাংশ ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা!
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা এই শিক্ষানীতিকে আইউব খানের শরীফ শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের নবায়ন ভিন্ন সংস্করণ হিসেবে আখ্যা দেন।
সারাদেশের ছাত্র ও শিক্ষক সমাজ এই নীতির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন।
শুরু হয় মিছিল প্রতিবাদ।
৮২'র ৮ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের লাঠিপেটায় গুরুতর আহত হন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নুরুল আমিন বেপারীসহ ছাত্র, কর্মচারী ও সাংবাদিক। গ্রেফতার করা হয় ৩০ জনকে। এর প্রতিবাদে পরদিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়, প্রতিবাদ মিছিল হয়। বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় খুললে ১৪টি ছাত্র সংগঠন একযোগে আন্দোলন কর্মসূচী চালায়। ছাত্রদল আর ছাত্রশিবির পৃথক কর্মসূচী পালন করে। একদিকে প্রতিবাদ আন্দোলন আরেকদিনে দমন নিপীড়ন চলতে থাকে। ছাত্ররা ২৯ ডিসেম্বর দাবি দিবস ও ১১ জানুয়ারি সচিবালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করে।
কিন্তু এরশাদ তাতে একটুও না থেমে '৮৩র জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশের ১৪২টি থানার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বাধ্যতামূলক আরবি শিক্ষা শুরুর আদেশ দেন।
একই সঙ্গে ১১ জানুয়ারির কর্মসূচির বিরুদ্ধে কড়া প্রেসনোট হুমকি দেয়। কিন্তু তাতেও ছাত্ররা পিছপা না হলে এরশাদ ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব দেয়। ছাত্ররা ৭ জানুয়ারি '৮৩র সেই প্রস্তাবিত বৈঠক প্রত্যাখ্যান করে।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঘোষণা করে- "শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষায় অতিরিক্ত দুইটি বিদেশী ভাষা বাধ্যতামূলক করিয়া মূলত বাংলা ভাষাকেই আঘাত করা হইয়াছে। শিক্ষা সংস্কারের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাজীবনে এক অরাজক ও নৈরাজ্যজনক অবস্থার সৃষ্টি করা হইতেছে এবং শিক্ষাকে উচ্চশ্রেণীর ব্যয়বহুল বিনিয়োগ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলিতেছে।
ছাত্রসমাজের উপর চলিতেছে চাপ ও নিপীড়ন। ... ... ... ... ... ...। এই পরিস্থিতিতে সংগ্রাম পরিষদ শিক্ষা, গণতন্ত্র ও মৌল অধিকারসহ শোষণমুক্তির দাবি লইয়া একুশ পালনের আহ্বান জানায়। "
বিপরীতে সরকারী প্রেসনোটে বলা হয়- "গত নভেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেসব গণবিরোধী ও সমাজবিরোধী ঘটনা ঘটছে সরকার তা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করে আসছেন। ... ... ... ... ...।
সরকার এসব বিপথগামী ব্যক্তিদের ধ্বংসাত্মক পথ পরিত্যাগ করার জন্য হুঁশিয়ার করে দিচ্ছেন। অন্যথায় তাদের গুরুতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। "
১১ জানুয়ারি প্রস্তাবিত তারিখে হাজার হাজার ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবেশে সমবেত হয়। অপরদিকে অস্ত্রসজ্জিত প্রচুর দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সচিবালয়ের চারপাশে। ব্যাপক সংঘর্ষ এড়াতে ছাত্ররা সচিবালয়ে না গিয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে আন্দোলন তীব্রতর করার শপথ গ্রহণ করেন।
একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। এরশাদ এবার একুশের চেতনায় আঘাত হানতে শুরু করে।
জানুয়ারির মাঝামাঝিতে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেসিন আয়োজিত আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে এরশাদ বলেন: “বাংলাদেশ মুসলমানদের দেশ, বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র করার জন্যই আমাদের সংগ্রাম। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছিলো শহীদ মিনার। কিন্তু আমরা দেখি সেখানে আল্পনা আঁকা হয়।
এ কাজ ইসলাম বিরোধী। শহীদ আবুল বরকত আল্লাহর বান্দা, তার জন্য আল্পনা কেন, কোরানখানি হবে। গত ২৪ মার্চ আমি দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। কিন্তু সেদিন আমি আল্লাহর কাছে হাত তুলে কেঁদেছি, আমার জীবনে একটা অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে। ২৬ বছরের বিবাহিত জীবনের পরও আমার কোন সন্তান নেই।
গাউসুল আজমের সেই চাদর হাতে নিয়ে আল্লাহর কাছে আমি কেঁদেছি, একটি সন্তান চেয়েছি, আল্লাহ আমার কান্না শুনেছেন। আমাদের সন্তান হবে ইনশাল্লাহ। “
এরই মধ্যে এরশাদ ফরিদপুরের আটরশির পীর হজরত মওলানা শাহ্ সুফী হাশমতউল্লাহ সাহেবের কাছে মুরিদ হন। চারজন জেনারেলকে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে পীরের ছবক নিয়ে আসেন। বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার ব্যাপারে পীর সাহেব পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে এরশাদ ও তার দোসর মজিদ খান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টেডিয়াম উদ্বোধন করতে গেলে ছাত্ররা তা বর্জন করে। বর্জন প্রতিবাদের মুখে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসব বাতিল হয়। এদিকে চলতে থাকে ছাত্রনেতাদের গ্রেফতার অভিযান। ছাত্রলীগ [মু-হা] সাহিত্য সম্পাদক মোহন রায়হান, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ও ইকসুর সহ সভাপতি খন্দকার মোহাম্মদ ফারুক এবং ছাত্রলীগ [মু-হা]র কেন্দ্রীয় নেতা আতাউল করিম ফারুক ও খোন্দকার আবদুর রহীমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই সময়ে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি সাইফুল আলম খান মিলন ও সাধারণ সম্পাদক তাসনীম আলম এক যুক্ত বিবৃতিতে ঘোষিত শিক্ষানীতিকে "আদর্শহীন" উল্লেখ করে শিক্ষানীতির আদর্শ হিসেবে দেশের শতকরা ৮৫ জন মানুষের আদর্শ ইসলামকে গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
১১ জানুয়ারির সচিবালয়ে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি রদবদল কেন করা হলো এই নিয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে অসন্তোষ তৈরি হয়। প্রতিবাদে ছাত্ররা ডাকসু অফিস ভাংচুর করে। তবু ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ শান্তিপূর্ণ পথেই দাবি আদায়ের সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়ার পথে অবিচল থাকেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
৬ ফেব্রুয়ারি ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ বিরোধী আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়া হয়।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর বিরোধিতা করলে সংঘর্ষ হয়, আহত হয় অর্ধশত ছাত্র। এই ঘটনার খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশেই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এদিকে ছাত্রদের কঠোর মনোভাবে এরশাদ কিছুটা বিচলিত হয়, ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির ব্যাপারে একটি জনমত যাচাই কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়।
কিন্তু ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলন অব্যাহত রাখে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী মিছিলসহ স্মারকলিপি পেশ করতে সচিবালয়ের দিকে ধেয়ে যায়।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও এই আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং আন্দোলনে অংশ নেয়।
মিছিলটি যখন হাইকোর্ট এলাকায় পৌঁছেছে তখন মিছিলের ওপর পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে। আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চল ঘিরে রাখা হয়েছিলো। নিরস্ত্র ছাত্র ছাত্রীদের ওপর পুলিশ লাঠি, টিয়ারগ্যাস, জল কামান ব্যবহার করেই ক্ষান্ত হয়নি, গুলিও চালায়। গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে রূপান্তরিত হয়।
একসময় ছাত্ররা আশ্রয় নেয় শিশু একাডেমীতে। সেখানে তখন শিশুদের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিলো। পুলিশ সেখানেও ঢুকে যায় অস্ত্রহাতে। কোমলমতি শিশুরাও সেদিন রক্ষা পায়নি এরশাদের পেটোয়া বাহিনীর হাত থেকে।
প্রায় সারাদিনব্যাপী এই অসম সংঘর্ষে জাফর, জয়নাল, দীপালী সাহা, আইয়ুব, ফারুক, কাঞ্চন প্রমুখ নিহত হন।
দশ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়, কিন্তু সরকারি প্রেসনোটে দাবী করা হয় ১ জনের মৃত্যুর কথা। আর আহতের সংখ্যা অগুনতি। গ্রেফতারের সংখ্যাও অগুনতি।
সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ও ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করে।
এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পরদিন, অর্থাৎ ১৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্রজনতা রাস্তায় নেমে আসে।
সংঘর্ষ হয় মিরপুর, আমতলী, তেজগাঁ, বাহাদুরশাহ পার্ক, ইংলিশ রোড, মতিঝিল এবং অবশ্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুধু ঢাকাতেই না, আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। পুলিশ গুলি চালায়। চট্টগ্রামে নিহত হন মোজাম্মেলসহ আরো কয়েকজন। যদিও এদিনও সরকারী প্রেসনোটে নিহতের সংখ্যা ১জন দাবী করা হয়।
ভীত সন্ত্রস্ত এরশাদ শাহী ঢাকা ও চট্টগ্রামের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে। জাহাঙ্গীরনগর ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে সারাদেশে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এসব খবর যাতে সারাদেশে ছড়াতে না পারে, সেজন্য সংবাদপত্রগুলোতে আরো কড়াকড়িভাবে সেন্সরশীপ আরোপ করা হয়।
১৪ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সারাদেশে প্রচুর গ্রেফতার অভিযান চলে।
শেখ হাসিনা, মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, মেনন, জলিল, অলি, তোফায়েল, মান্নান, সামাদ আজাদ থেকে শুরু করে শীর্ষস্থানীয় প্রচুর ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করে এরশাদ বাহিনী। তবু আন্দোলনকে দমাতে পারেনি।
ব্যাপক ছাত্রগণআন্দোলনের মুখে ১৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে এরশাদ বলতে বাধ্য হয় যে- "জনগণের রায় ছাড়া শিক্ষা সম্পর্কে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। " এক সরকারি প্রেসনোটে বলা হয় গ্রেফতারকৃত ১২২১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
সেবছর সারাদেশে আক্ষরিক অর্থেই শোকাবহ একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হয়।
বাংলা ভাষা ও শিক্ষার দাবীতে সারাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়। কিন্তু রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে একুশের কর্মসূচি পালন করা যায়নি।
মজিদ খান প্রস্তাবিত স্বৈরশাসক এরশাদের বিতর্কিত শিক্ষানীতির প্রতিবাদে সামরিক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, লাঠি গুলি টিয়ার গ্যাসকে পরোয়া না করে, গ্রেফতার নির্যাতন হুমকি হত্যার তোয়াক্কা না করে সেই যে মানুষ রাস্তায় নেমেছিলো '৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে, সেখান থেকেই মূলত এরশাদ বিরোধী গণআন্দোলনের সূত্রপাত। '৮৩র ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখেই এদেশে সামরিক শাসনের ভীত কাঁপিয়ে দেয় সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্ররা। ধীরে ধীরে যা সার্বিক গণআন্দোলনে রূপ লাভ করে।
এবং সবশেষে ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ঘটে।
বস্তুতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের পর মধ্য ফেব্রুয়ারির এই আন্দোলনই বাংলাদেশের প্রথম গণ আন্দোলন। এবং যা বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত থামেনি।
১৪ ফেব্রুয়ারি তাই যেন তেন কোনো দিবস না...
খ)
এই অবিস্মরণীয় বিপ্লব এবং বিজয়কে বহুবছর পরে ভালোবাসা দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে এগিয়ে আসেন শফিক রেহমান নামক একজন সাংবাদিক। লাল গোলাপ হাতে তিনি বিপ্লব ভুলে ভালোবাসার জয়গানে দেশবাসীকে মাতোয়ারা হতে আহ্বান জানান।
দেশে ঢুকে যায় আর্চিস হলমার্ক।
প্রেম ভালোবাসাবাসির এই জোয়ার আমরা এখনো দেখি। সম্প্রতি আমরা দেখছি একটি সিনেমা বানিয়ে একটি গোষ্ঠী আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধকে "প্রেম" দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে চাইছেন। ডিকন্সট্রাকশন! তার হাতে গোলাপ ফুল নেই, তবে ফিল্ম জুড়ে গোলাপী রঙ ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। গোলাপ এবং প্রেম ভালোবাসার কাছে সর্বদাই কি হেরে যাবে আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জনগুলো?
তথ্যসূত্র:
গনআন্দোলন ১৯৮২-৯০, সৈয়দ আবুল মকসুদ
লেখকের রোজনামচায় চার দশকের রাজনীতি পরিক্রমা প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ ১৯৫৩-৯৩, আব্দুল হক
দৈনিক ইত্তেফাক
ছবিসূত্র: প্রগতির পরিব্রাজক দল
Written by: Najrul Islam
Link : http://www.sachalayatan.com/nazrul_islam/37626
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।