আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাহলে কি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত না??????



ছোট বেলায় প্রথম সারির স্টুডেন্ট ছিলাম বলে, বাবা-মা স্বপ্ন দেখতেন ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবে। শুনতাম ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য এইচএসসিতে ভালো রেজাল্ট করতে হয়। তাই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য এইচএসসিতে হাড়ভাঙা শ্রম দিয়েছি। মা-বাবা স্যারদের কাছে খোঁজ নিয়েছেন, আমি ঠিকমত পড়াশোনা করি কিনা। এইচএসসি পরীক্ষা শেষে ভর্তি পরীক্ষা নামের এক ভয়ংকর প্রতিযোগিতা আছে, যেখানে আত্নবিশ্বাসটাই মূলশক্তি।

এখানে প্রতিনিয়ত টিকে থাকার জন্য প্রতিযোগিতায় নামতে হয়, যেখানে মূলনীতি হচ্ছে যুদ্ধ কর অথবা মরো। মামা-খালু বাপ থাকলেও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ নাই। সে সুযোগ থাকলে আমাদের ক্যাম্পাসের প্রভাবশালী স্যারদের ছেলে-মেয়েরা পড়ার সুযোগ পেত। প্রতিযোগিতার জন্য নির্দিষ্ট পয়েন্ট থাকতে হবে, পয়েন্ট অর্জন করার পর পরীক্ষায় টিকতে হবে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য। ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হওয়ার পর, বাঁশ খেতে খেতে এক সময় জানতে পারলাম, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য শর্টকাট উপায় আছে।

এসএসসি পাশ করেই যে কোন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করলেই ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায়। দেশের সরকার এই সুযোগ করে দিয়েছে। রেজাল্ট কোন ব্যাপার না, কিসের গোল্ডেন A+, পাশ করলেই ইঞ্জিনিয়ার। এই দেশে চাল-ডাল-তেল কিংবা রাস্তা ভাড়া দামী হলেও, ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দটা সস্তা হয়ে গেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পাঠানোর জন্য এসএসসি ও ভর্তি হওয়ার পূর্ববর্তী মুহুর্তের একজন শিক্ষার্থী এবং তার বাবা - মার শ্রম ও সময়ের কোন মূল্য নাই।

মাঝে মাঝে প্রশ্ন হয়, স্যারদের কষ্ট করে মাস্টার্স বা পিএইচডি ডিগ্রীর আনার দরকার কি? কিংবা একটা শিক্ষার্থীর পেছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করার যুক্তি কি? যেখানে চাইনিজ প্রডাক্টের মত সস্তা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুযোগ আছে, সেখানে সরকারের লাখ টাকার খরচ করার কোন মানে হয় না। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গুলো কি বন্ধ করে দেওয়াই উচিত নয়?????? ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য এইচএসসিতে অনেক কষ্ট করেছি। ভোরের সূর্যোদয়ের সাথে সাইকেলে ১০কিমি চালিয়ে প্রাইভেট পড়তে গেছি, সূর্যাস্তের সময় প্রাইভেট শেষ করে বাড়ি ফিরেছি। ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রতিদিন দুশ্চিন্তার সময় কাটিয়েছি। ক্লাশের শেষ রোলের ছাত্রটি যখন জেলার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পড়ে, নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার বলে দাবী করে, কখনও সে বলে না, সে ডিপ্লোমা, সে বলে ইঞ্জিনিয়ার।

তখন নিজের শ্রমগুলোকে ব্যর্থ মনে হয়। সাধারণ মানুষ জানে ইঞ্জিনিয়ার মানে ইঞ্জিনিয়ার। তারা ডিপ্লোমা বা বিএসসি বুঝেনা। তাদের কাছে কোন পার্থক্য নেই। আমার পলিটেকনিকে পড়া বন্ধুরা খুব সহজে নিজেদেরকে আমাদের বিএসসি পড়ার সাথে তুলনা করে, তারা বলে তোদের আর আমাদের মধ্যে তেমন কোন প্রার্থক্য নাই।

আমাদের গ্রামে একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের নাম করলে সহজে চিনবে, কিন্তু বুয়েট পাশ ইঞ্জিনিয়ারকে কেউ সহজে চিনেনা। অনেকেই বলে ডিপ্লোমারাও প্রথম সারির ছাত্র। কিন্তু প্রথম সারির ছাত্র হলে সে কিভাবে ডিপ্লোমা পড়ে? আমার দেখা যত ডিপ্লোমাকে দেখলাম সব পেছন সারির। যার রেজাল্ট ভাল সে কখনও ডিপ্লোমা পড়তে যাবে না, সে অবশ্যই বড় স্বপ্ন দেখবে। আর যে বড় স্বপ্ন দেখেতে জানেনা সে কি করে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে???? আমাদের ক্যাম্পাসে একজন খুব দরিদ্র পরিবারের ছেলে পড়ে।

তার বাবা ভ্যানচালক। এসএসসি তে তার রেজাল্ট ভাল ছিলো। তার স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবে। সে এখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এবং ভাল সিজিপিএ নিয়ে ক্লাশের প্রথম পজিশনে আছে। দারিদ্রতা কখনও বড় স্বপ্নকে আটকে রাখতে পারে না।

প্রায় শুনি বাইরের দেশে আমাদের তেমন মূল্য নেই, বাংলাদেশী শুনলে হেয় করা হয়। আমরা নিজেরাই নিজেদের সঠিক মূল্য দিই না। যে দেশে একজন পলিটেকনিকে পড়া শিক্ষার্থীকে সহজে ইঞ্জিনিয়ার সম্মান দেওয়া হয়, সে দেশের ইঞ্জিনিয়ারকে বা সে দেশকে বাইরের দেশ কি সম্মান দিবে? সম্মান অর্জন বড় একটা ব্যাপার, কিন্তু কোন সম্মান যদি সস্তা হয়ে যায়, তবে সেটা সম্মানে পর্যায়ে আর থাকে না। পরিশেষে আমার একটাই দাবী - একটাই অনুরোধ বিএসসি পাশ ছাড়া খুব সহজে কাউকে যেন ইঞ্জিনিয়ার পদবী না দেওয়া হয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.