আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিউশনি বৃত্তান্ত (পর্ব-৩): ওস্তাদের মাইর শেষ রাইতে

sorry vai টিউশনি নিয়ে যত রোমাঞ্চকর কথাই বলিনা কেন,মূল উদ্দেশ্য তো পেটচর্চা। তাই চাতকের মত পাচ তারিখের জন্য অপেক্ষা করতাম। আর সারামাস ঐ একটা তাকিখের উপর ভরসা করে ধারের বন্যা বয়ে দিতাম। তো, এমন দুটো মাস আমার জীবনে এসেছিল যে দুইমাস পাচ তারিখ এসেছিল মাগার সেলারির খবর নাই। ছেছড়ামি কাহাকে বলে শুনুন এবার: ১ সেটা ছিল ছাত্র।

ক্লাস টেন। বাপ উকিল। আমি পড়াই এক ঘন্টা আর উকিল মশায়ের উপদেশ শুনি দুই ঘন্টা করে। যেন উনি উকিল না, এডুকেশনিষ্ট। তবে সব কথার মূলকথা হল, মাইরের উপে কোন ওষুধ নাই।

ও ঘর থেকে কান খাড়া করে থাকত আর ছেলে পড়া না পারলেই কোন আওয়াজ ছাড়াই মাইর। তাও আবার আমার সামনে। ছেলেটাও চুপ করে থাকত মার খেয়ে। আমার বড় কষ্ট লাগত। উকিল ছেলেকে মেরে আবার আমাকেও উপদেশ দিত, স্যার শুনেন, এইটা কোন মাইর ই না।

আমার বাপে তো আমারে বাশের উপরে রাখত। এই জন্যই মানুষ হইছি (!!!)। মাইরের উপরে রাখবেন । নইলে আপনার মুখেও ছাই দিবে আমার মুখেও। এভাবে চলতে থাকলো।

ছেলেটি এত পড়ার প্রেসারে থাকে যে কিছুই মাথায় থাকেনা। আমি ওর বাবা চলে গেলে মানসিক সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করতাম যতটুকো পারি। তো, মাসের শেষের দিকে একটা পরীক্ষার রেজাল্ট এলো। সে ফেল করেছে। আর যায় কই।

এবার বাপ পারলে ছেলেকে মেরে হাসপাতালে পাঠাবে। আর আমাকে নোটিশ দিয়ে দিল যে, আপনার মত শিক্ষকের আর দরকার নেই। আমি তো অবাক। ছাত্র মার খেয়েও এবার প্রতিবাদ করলো, আমি ফেল করেছি তাতে স্যারের কি দোষ? অমনি কান বরাবর আরেক থাপ্পড়। আমার ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল।

বললাম, শুনুন, আমিও আর আপনার বাসায় এই অসুস্থ পরিবেশে পড়াতে আগ্রহী না। আমার বেতন দিয়ে দিন, চলে যাই। অমনি সে পকেট থেকে একটা পাচ শো টাকার নোট বের করে দিয়ে বলল, আপনি আসতে পারেন। আমি অবাক হয়ে বললাম, বাকী পচিশশো? সে দাত খিচিয়ে বলল, কিছু যে দিয়েছি এটাই তো আপনার ভাগ্য। ছেলেতো ফেল করেছে।

অনেক তর্ক করলাম। লাভ হলনা। উল্টা সে আমাকে নানান ধারায় মামলার হুমকি দেয়। আমি আর কথা না বাড়ীয়ে বেরিয়ে আসি। সব কথা শোনার পর আমার এক ঘনিষ্ট বান্ধবী নীলা (ছদ্মনাম)যায় ক্ষেপে।

ও বলে, অত সোজা নাকি? ওর মামলা আমি ওর ইয়ে দিয়ে বের করব। আমি বললাম বাদ দে। না ও বাদ দিবে না। ও উকিলের মোবাইল নাম্বার নিল আমার কাছ থেকে। তারপর বলল, এবার খেলা দেখবি।

পরের কয়দিন নীলার দেখা নেই। হঠাত সপ্তাখানেক পর নীলার ফোন, তাড়াতাড়ি ছবির হাটে আয়। ওর নির্দেশনা অনুযায়ী গেলাম ছবির হাটের গেটে। নীলাকে কল দিলাম। ও ফিসফিস করে বলল, ডানে তাকা।

তাকিয়ে দেখি নীলা উকিলের সাথে চা খাচ্ছে আর হেসে হেসে ঢলে পড়ছে। এবার আর বুঝার বাকি রইলনা। আমি আর আগালাম না। ওদের সুযোগ দিয়ে চলে এলাম। পরের দিন নীলা তিন হাজার টাকা নিয়ে আমার কাছে হাজির, নে, তোর টিইশনির টাকা।

পাচশো লাভ। এটা দিয়ে ভরপুর লাঞ্চ হয়ে যাবে দুইজনের। আমি বললাম, কিভাবে। ও বর্ণণা করল, বেটার কাছে চেয়ে নিয়েছি। আরও অনেক নিতে পারতাম, নিলাম না।

বাড়তি পাচশো হল সার্ভিস চার্জ। নে, এবার বেটাকে কল দিয়ে প্রাপ্তি স্বীকার কর। আমি বোকার মত কল দিলাম। উকিল: হ্যা, কেমন আছেন? আমি: ভালো। উকিল: হঠাত কি মনে করে? আমি: না মানে, টিউশনির বাকি টাকাটা পেয়েছি এটা জানানোর জন্য কল দিলাম আর কি।

নীলা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে আর আপনাকে বলতে বলেছে, ওস্তাদের মাইর শেষ রাইতে। (আগাগোড়া সত্য কাহিনী) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।