আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবন কথা : পর্ব চার ( শারিরিক অসুস্থতা )

আসছে নতুন প্রজন্ম , আসবে নতুন দিন !

৩য় পর্বের পর , পরে মাসে এক তারিখেই ১৭ দিনের বেতন পাই । গার্মেন্ট সেক্টরে এক তারিখে বেতন দেয় এমন কম ফ্যাক্টরিই আছে । এপেক্স তাদের মধ্যে একটা । এপেক্সের মালিক শ্রমিকের বেতন , পিএফ, বোনাস ইত্যাদি ব্যাপারে আন্তরিক কখনো বকেয়া রাখেনা । এপেক্স ফ্যাক্টরিটা গাজীপুর চন্দ্র (চান্দুরা) মোর থেকে একধম কাছে।

আশে পাশে গজারির বন । প্রাকৃতিক পরিবেশ বেশ সুন্দর , আমার খুব ভালো লাগে । অক্টোবর মাসের এক তারিখ থেকেই ইকবাল স্যার আর অপিসে আসেনা (রিজাইন দিয়েছেন) । স্বাভাবিক ভাবেই আমার উপর প্রডাকশনে কাজের চাপ এসে পড়ে আর এই সুযোগেই আমি সময়ের আগেই কাজ শিখতে থাকি । মাঝে মাঝে কাদরি স্যার আমার কাজের খুজ খবর নিতেন ।

এক দের মাসের মধ্যেই আমি মোটামোটি মার্কারটা আয়ত্ব করে ফেলি। আমার কাজের পারফরমেন্স এ মাহমুদ স্যারও সন্তুষ্ট আর কাদরি স্যারও খুশি। ছয় মাস পর আমার বেতন দুই হাজার টাকা বাড়িয়ে পাঁচ হাজার করে । জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করেও আমি যে ক্যাডে এতো ভালো করেছি এতে কম্পানি খুবই খুশি হয়। একদিন কাদরি স্যার আমায় ডেকে বললেন তোমার মত তোমার যদি আরও বন্ধু থাকে নিয়ে এসো ভালো চাকরি দেবো ।

আমার খুব কাছের বন্ধু জাহাঙ্গির চাকরি খুজতে ছিলো প্রথমে তাকে নিয়ে আসলাম । যদিও প্রথমে তাকে সরাসরি ক্যাডে ঢুকাতে পারি নাই । তারপর নিয়ে আসলাম আমাদের গ্রামের সম্পর্কে আমার এক মামাকে । যদিও সে বেশিদিন চাকরি করে নাই । তারপর নিয়ে আসলাম আরেক বন্ধু মারফি কে ।

জাহাঙ্গির ও মারফি এখনও এপেক্স এ আছে ক্যাড ম্যানেজার হিসাবে । সবকিছু্‌ই ঠিকমত চলছিলো । প্রতি বছরই ইনক্রিমেন্ট হতো , কাজ দ্রুত শিখতে ছিলাম । ক্যাডে কাজ করার সুবাদে কম্পিউটার মেইনটেনেন্স টা আছতে আছতে শিখতে থাকি যে বিষয়ে ছিলো আমার প্রচুর আগ্রহ । কর্মক্ষেত্রে অনেকেরই সাথে ভালো সম্পর্ক হয় ।

বাপ্পি ভাই , রোফ , শামিম , মনিদ্র বাবু আরো অনেকেই । ২০০৪ সালের প্রথম দিকেই হঠাৎ আমার পেটে ব্যাথা হয় । ( শুরু হয় আমার কপালে ভোগান্তি ) আমার আগে থেকেই আই,বি,এস এর সমস্যা ছিলো । প্রথম দিকে ভেবেছিলাম এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে কিন্তু যখন তিন চার দিনেও ব্যাথা কমলো না তখন ডাক্তারের কাছে গেলাম । ডাক্তার প্রথমে কিছু ঔষধ দেন তেতেও না কমলে আল্ট্রাসোনোগ্রাম করতে বলেন ।

কিন্তু রিপোর্ট এ কোনো সমস্যা ধরা পড়ে না । ডাক্তার আমাকে কিছু গ্যাসট্রিক এর ঔষধ দিয়ে বিদায় দেয় কিন্তু আমার তো সমস্যা কমে না । পেট ফেঁপে থাকে , সব সময় কম বেশি ব্যাথা থাকেই সাথে একটি অসস্তি ভাব । তারপর গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট দেখাতে লাগলাম । প্রথমে সাভার তারপর গাজীপুর তারপর ঢাকার পপুলারে কিন্তু না কিছুতেই সমাধান হচ্ছিলো না ।

সব ধরনের টেস্টই করি এনডোস্কপি , কলনোস্কপি আরো যা যা আছে । পেট ব্যাথা শুরু হবার কয়েকদিন পরেই ঘুমের সমস্যা শরু হয় । প্রথম প্রথম গুরুত্ব দেই নাই । কিন্তু যখন তিন চার দিন একটানা ঘুম না হয়ে মাথা ব্যাথা শুরু হলো তখন বাধ্য হয়ে নিউরোমেডিসিন ডাক্তার দেখালাম । ডাক্তারকে পেটের গ্যাস সমস্যার কাথাও বললাম ।

ডাক্তার ইসমোপ্লাজল , ট্রিপটিন, ক্লোনোজিপাম , ডায়াজিপাম ইত্যাদি ঔষধ দিলেন । ঔষধগুলি খেয়ে ঘুম এর সমস্যা কিছুটা কমে কিন্তু দিনের বেলাও ঝিমাতে থাকি । অফিসের ডরমেটরিতে সবার সাথে ঘুমাতে সমস্যা হতো বলে শুধু রাতে ঘুমাবার জন্য আমি একটি আলাদা রুম নিয়েছিলাম । এই ভাবে প্রায় তিন বছর কেটে যায় । একসময় আমি প্রচন্ড শারিরিক দুর্বলতা অনুভব করি ।

এতো দুর্বল যে একদিন ক্যারাম খেলতে গিয়ে আমার হাত কাঁপতে দেখে জাহাঙ্গির বললো কিরে তোর শরিরের অবস্থা তো আসলেই বেশি খারাপ । এর ভিতরে ফোনে একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হয় । (এর কথা আগামী পর্বে বলবো ইনশাআল্লাহ ) বাড়ি থেকে শরিরের সব অবস্থা শুনে সিদ্ধান্ত নেয় ছেলেকে বিয়ে করাতে হবে । কারন বাহিরের খাবার খায় বলে তার পেটে সমস্যা করছে । আর একা একা থাকে বলে মানসিক কারনে তার ঘুমে সমস্যা হচ্ছে ।

আর এই দুই করনে তার শরির এতো দুর্বল । বিয়ে করালে সব সমস্যাই সমাধান হবে । আমি বললাম ঠিক আছে , শুরু হলো পাত্রী দেখার অভিযান । সে এক লম্বা কাহিনী , কতো পাত্রীই যে দেখলো / দেখলাম । যেহেতু আমি গার্মেন্ট এ চাকরি করতাম আর অসুখের কারনে ওজন চার কেজি কমে চেহারা কিছুটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো তাই আমাদের প্রত্যাশার পাত্রীরা রাজি হচ্ছিলো না ।

অবশেষে যারা রাজি হতে পারে তাদের দিকে ছুটলাম কিন্তু বিভিন্ন কারনে একটা না একটা কাহিনী হয়ে বিয়ে পিছাচ্ছিলো । অবশেষে আসে মুক্তির দিন । আল্লাহর রহমতে একটা একটা করে প্রবলেম সল্ভ হতে থাকে .... চলবে ..... আগের পর্বগুলি প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় পর্ব

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.