গেল কয়েকদিনে সারা দেশে প্রকৌশলী হওয়ার চক্করে হয়ে গেল ব্যাপক দাঙ্গা-হাঙ্গামা। বিভিন্ন সময়ে এই নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বাংলাদেশে প্রকৌশল পেশার সার্বিক মানোন্নয়নে কোন আন্দোলন হয়েছে বলে শুনা যায় না।
একদল(যারা স্নাতক) তারা নিজেদের বেশী মেধাবী হওয়ার দাবিতে বড় পদ ও পদমর্যাদার দাবী নিয়ে সোচ্চার। আর আরেক দল নিজেদের অধিক বাস্তব জ্ঞানের দাবিতে আজ আন্দোলনরত। কিন্তু আধুনিক বিশ্বের সাথে তুলনার ক্ষেত্রে কোন পক্ষেরই মেধা বা বাস্তব জ্ঞানের কোন প্রমান পাওয়া না।
তাই ত আজ ও পদ্মাসেতুর নকশা বা নির্মান কাজের জন্য বিদেশীদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। দেশে আজ মানসম্মত প্রকৌশলীর সত্যিই বড় অভাব।
মেধা ছাড়া অভিজ্ঞতার মুল্য যেমন সীমিত তেমনি অভিজ্ঞতাহীন মেধাও ফলপ্রসূ নয়। বাংলাদেশের এই অবস্থার মূলে রয়েছে দুর্বল প্রকৌশল শিক্ষা। বিদেশে বড় বড় Company তে অনেক ছাত্র চাকরি করলেও আমাদের দেশের জ্ঞানের ভান্ডার বলে স্বীকৃত BUET,KUET,RUET,CUET,DUET etc এর মহাজ্ঞানী শিক্ষকগনের
লিখিত কোন বই
at lest তাদের ই বিশ্ববিদ্যালইয়ে পাঠ্য, তা শুনা যায় না।
সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীরা আজ বিদেশমূখী। তাদের ই বা দোষ কী...দেশে থেকে ইজ্জত ই যখন বাঁচে না।
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ করা রা ত দেশে থাকতে চাইবে ই না। এত্ত টাকা দিয়ে পড়ে কে যাবে ৮০০০ টাকা বেতনের চাকরি করতে। আর যারা চাকরি দাতা,তাদের ই বা করার কী আছে।
টাকা যখন যাবে তাদের নিজের পকেট থেকে,আবার সামান্য কোন সমস্যার জন্য যখন বিদেশ থেকেই টেকনিশিয়ান ডাকতে হয় তাই তারাই বা কেন বেশি টাকা দিয়ে মাকাল ফল কিনতে যাবেন। আর বাংলাদেশের প্রকৌশল ক্ষেত্রে এই ধরনের জটিল সমস্যার সমাধাণ না করতে পারলে আর যে সব সমস্যা রয়েছে তার জন্য ৪০০০০ টাকা মাস করে গাল ভর্তি নাম ওয়ালা ইঞ্জিনিয়ার রাখার দরকার হয় না। এই ধরনের কাজ ত যে কেউ ই করতে পারে। আর এই অবস্থার ই সুযোগ নিচ্ছে একদল অযোগ্য।
পলিটেকনিক গুলোর অবস্থা আরোও বেহাল।
যে প্রতিষ্ঠানগুলো হওয়া উচিত ছিল কারিগরী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র সেখান থেকে আজ আমরা তেমন হাতেকলমে শিক্ষিত মেধাবীদের পাচ্ছি না। তার পরও বর্তমানে সরকারী পলিটেকনিকগুলোর অবস্থা অনেক ভাল হয়েছে। এখন মাধ্যমিক পর্যায়ের পর অনেক মেধাবীদের আগমন হচ্ছে। তবে বেশীরভাগই আসছেন সমাজের unprivileged অংশ থেকে। পলিটেকনিক সম্পর্কে এখনও আমাদের সমাজের একটা বিরাট অংশের বিরূপ ধারনা রয়েছে যা নিছক অমূলক।
যেখানে একদম সাদামাটা বিষয়ে স্নাতক করে লাখ লাখ ছেলে মেয়ে চাকরীর জন্য হন্য হয়ে ঘুরছে সেখানে ডিপ্লোমা করার পর বেকার থাকতে তেমন দেখা যায় না। সত্যিকার অর্থেই এই পলিটেকনিক গুলো হওয়া উচিত বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পেশাজীবি তৈরীর সুতিকাগার।
আর এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হচ্ছে কারিগরী বোর্ডের নিম্নমানের সিলেবাস,বিরুপ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সরকারের অবহেলা।
বাংলাদেশের প্রকৌশল পেশা ধ্বংসের মূলে যে কারনটি রয়েছে তা হল মানহীন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আর পলিটেকনিক গুলো। এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তৃত করে বলার কিছুই নেই।
মেধা আর অভিজ্ঞতার যে সম্নয় হওয়ার কথা ছিল তা কখনোও হয় নি।
তার বড় প্রমান বৈদেশিক শ্রম বাজারে আমাদের প্রকৌশলীদের চাহিদা থেকে। উদাহরণ স্বরুপ মধ্যপ্রাচ্যের কথাই বলা যেতে পারে। ওখানে ভারত,পাকিস্তান বা ফিলিপাইনের প্রকৌশলীদের তুলনায় আমদের বাংলাদেশের প্রকৌশলীদের সংখ্যার নগন্নতাই তা চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
বাংলাদেশের প্রকৌশল পেশার উন্নতি ও মানোন্নয়ে নিচের পদক্ষেপ গুলো খূবই জরুরী।
এতে করে দেশ প্রকৌশল ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে উন্নত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বলে আশা করা যায়।
১)ডিপ্লোমাদের কোর্স এ আমূল পরিবর্তন আনা হোক। কমপক্ষে ভারতে যে কোর্স আছে তার আদলে করা হোক। টোটাল ইংরেজী মাধ্যমে ৩ বছর মেয়াদী কোর্স পড়ানো হোক। একই লেভেলের ডিপ্লোমা নার্সিং বা মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্টদের কোর্স অনেক উন্নত ও মানস্মত।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে "মাসুদ রানা" টাইপের বই পড়ে কী মানের প্রকৌশলী হয় তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।
২) ভর্তির জন্য মেডিকেল পরীক্ষার আদলে সারাদেশে সম্মিলিত ভাবে পরীক্ষা নেওয়া হোক।
৩)সকল সরকারী ও বেসরকারী পলিটেকনিকে শিক্ষকতার নূন্যতম যোগ্যতা হতে হবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ।
৪) সরকারী পলিটেকনিকের শিক্ষকদেরকে ক্যাডার সার্ভিসের আওতায় আনা হোক। এতে করে মেধাবীরা এই পেশায় আগ্রহী হবে।
৫)সরকারী পলিটেকনিক গুলোতে দ্বৈত ডিগ্রী দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। ডিপ্লোমা কোর্সের মেয়াদ হবে ৩ বছর আর যারা ডিপ্লোমাতে ৩.৭০/৪ সিজিপিএ পাবে তাদের জন্য সরাসরি ভর্তির মাধ্যমে আরোও ৩ বছরের কোর্সের মাধামে স্নাতক ডিগ্রীধারী হবেন। আর যারা এর চেয়ে কম সিজিপিএ পাবে তারা হয় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে অথবা আবার সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে পলিটেকনিকেই স্নাতক ভর্তি হবেন। সেক্ষেত্রে ২ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
৬)বেসরকারী পলিটেকনিকেও একই ব্যাবস্থা থাকবে কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ হবে সরকারীভাবে সারাদেশে নেওয়া নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে।
৭)সকল পলিটেকনিকের শিক্ষাব্যাবস্থা নিয়ন্ত্রিত হবে ,বিভাগ ভিত্তিক স্থাপিত কারিগরী বিশ্ববিদ্যলয়ের মাধ্যমে। এতে করে সেশনজট থাকবে না।
পলিটেকনিকগুলোতে কেবল সর্বোচ্চ স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা পর্্যন্ত নেওয়া যাবে। মাস্টার্স কেবল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে করা যাবে।
৮)এইচ.এস.সি এর পরে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই হোক বা পলিটেকনিক থেকেই হোক,সকল স্নাতক ডিগ্রীধারীকে অবশ্যই IEB এর মাধ্যমে নেওয়া সনদ পরীক্ষায় পাশ করতে হবে।
যেকোন ধরনের সরকারী বা বেসরকারী চাকরীতে,এই সনদ ছাড়া কেউ আবেদন করতে পারবেন না। এই সনদ হবে এল.এল.বি. ডিগ্রীধারীদের সনদ বা আমেরিকার F.E Examination এর মত। তাহলে যারা বিভিন্ন নামসর্বস্ব বেসকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক প্রকৌশলী হয়েছেন বা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে নামমাত্র লেখাপড়া করে পাশ করেছেন বা রাজনীতি করে পাশ করেছেন তাদের একটা সুরাহা হবে।
৯)ডিপ্লোমাদেরক্ষেত্রে ও এই রকম সনদের ব্যবস্থা থাকবে।
১০)ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারীদের কোনভাবেই কোটার ভিত্তিতে ১ম শ্রেনীর পদে পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।
তারা ৫ বছরের অভিজ্ঞতা ধারী হলে স্নাতক প্রকৌশলীর সনদ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সনদ অর্জন সাপেক্ষে ১ম শ্রেনীর নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে তাদের চাকরীর বয়স শিথীল করে ৩৫ করা যেতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।