ডেস্ক রিপোর্ট : যাদের হাতে এ রায় প্রথম দেখা গেছে তারাই এর সঙ্গে জড়িত বলেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম। কিন্তু গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার একেএম নাসিরুদ্দিন মাহমুদ স্বীকার করেছেন, ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটার থেকেই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের খসড়া ফাঁস হয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে ট্রাইব্যুনালও এমনটাই ভাবছে।
তিনি বলেছেন, খসড়া রায়টি ট্রাইব্যুানালের কম্পিউটারে কম্পোজ করার পর কোন না কোনভাবে লিকড হয়ে গেছে। তবে ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটার থেকে রায়ের কপি ফাঁস হয়ে যাওয়াকে অত্যন্ত বিপদজনক বলে অভিহিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, আমরা প্রথম থেকেই ট্রাইব্যুনালের সব ধরনের নিরাপত্তার বিষয় কথা বলে আসছি।
বিভিন্ন ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট, প্রশাসসিক কাজে দক্ষ জনবল বিষয় নিয়ে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আসছি, কিন্তু সরকার আমাদের কথায় কর্ণপাত করেননি বলেই আজ এসব বিষয়ে ট্রাইব্যুনালকে বিভিন্ন ভাবে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এটা কি সরকারের জ্ঞানের অভাব নাকি অনীহা সেটাই এখন বিবেচ্য বিষয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট যে সব কর্তৃপক্ষ আছে অর্থাৎ আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে এতোই অভিজ্ঞতার অভাব নাকি তারা ট্রাইব্যুনালকে সিরিয়সালি নেয়নি সে বিষয়ে আমরা সন্দিহান। না হলে যেসব বিষয়ে আমরা বলে আসছি সে বিষয় তারা একটু হলেও কর্ণপাত করতো। ভবিষ্যতে যদি এ ধরনের ঘটনা আবারও ঘটে তাহলে এর সম্পূর্ণ দায়ভার সরকারকে নিতে হবে এবং এর জন্য সরকারকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে বাংলাদেশের জনগণের কাছে।
শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, আমরা বলেছিলাম, ট্রাইব্যুালে যাদের নিয়োগ দেয়া হবে বা হয়েছে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড, ছাত্রজীবন, রাজনৈতিক দর্শণ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে নিয়োগ দেয়া হোক। কারণ যারা বিচারের বিপক্ষে তারা নানাভাবে এ বিচারকে বাধাদান করবে, কোটি কোটি টাকা তারা লগ্নি করবে এর পেছনে। কিন্তু সেভাবে ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ দেয়া হয়নি যার প্রমাণ আমরা একের পর এক দেখতে পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এর আগে গোলাম আযমের মামলা চলাকালে তুর্কি সরকারের লোক মানবাধিকার সংস্থার নামে ট্রাইব্যুনালে এসে গোলাম আযমের সঙ্গে কথা বলে গেছেন। তাহলে তখন নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা কোথায় ছিল।
এমনকি স্কাইপে কেলেংকারির পরও বলেছিলাম, ট্রাইব্যুনাল অনিরাপদ। তখনও কেউ আমাদের কথা শোনেনি।
প্রশাসনের অন্যান্য জায়গায় জামায়াতের লোকেরা যেমন ঘাপটি মেরে বসে আছে এখানেও সেরকম লোক অবশ্যই আছে আর তারা তাদের মতো করে কাজ যাচ্ছে যেটি সরকারকে বিভিন্নভাবে বিব্রত করছে। সরকারকে বিভিন্ন সময়ে পরমর্শ দিয়ে এর প্রতিকার করার জন্য অনুরোধ করেছি কিন্তু সরকার নীরব থেকেছে বলেই এখন এটি প্রতীয়মান হচ্ছে।
অপরদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বাংলনিউজকে বলেন, ট্রাইব্যুনালে শুরু থেকেই বিপক্ষ শক্তি কাজ করে চলেছে কিন্তু কেন যেন আমরা সেগুলোকে বারবার উপেক্ষা করে এসেছি।
যাদের এখানে বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কি চেক করা হয়েছে, হয়নি। নিয়োগের পরও সেটা করা হয়নি। তারা যদি এতোটা সুযোগ পায় তাহলে তারা যে কাজ করবে সেটাইতো স্বাভাবিক। তাদের বিষয়ে কোন পলিসিই গ্রহণ করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনালের সবাই শারীরিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু এখানে তথ্যের নিরাপত্তাটাই সবচেয়ে বড়।
কিন্তু সে বিষয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। এর ফলে শুধু ট্রাইব্যুনাল নয় পুরো বাংলাদেশ ইমেজ ক্রাইসিসে পড়েছে। প্রসিকিউশনের একটি কম্পিউটারেও অ্যান্টিভাইরাস দেয়া হয়নি, এখানে বিচারপতিদের রায় লিখতে হয়, কিন্তু কি উপযুক্ত লজিস্টিক সাপোট দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়নি, আমরা দিতে পারিনি। আর এভাবে কি এই বিচার হতে পারে, নাকি হয়?
অপরদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুানালের রেজিস্ট্রার নাসিরউদ্দিন মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, রায় ফাঁস হওয়ার পরে ট্রাইব্যুানালের ভেতরে বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
কিন্তু ট্রাইব্যুানালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে, নথিপত্রের বিষয়ে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। এমনকি কী কী প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে সে বিষয়েও কিছু বলেননি।
স্কাইপে কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তেজগাঁও থানায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র একটি জিডি করা হয়েছিল কিন্তু পরে এ বিষয়ে কোন মামলা হয়েছে কি না কিংবা তদন্ত হয়েছে কি না তিনি সেটি জানেন না বলে জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপও স্কাইপে বিষয়ে গ্রহণ করা হয়নি বলে তিনি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার এক তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, স্কাইপে কেলেংকারির পর যদি সরকার ঠিক পদক্ষেপ নিতো তাহলে হয়তো আজকের এই রায় ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটতো না।
এই লজ্জায় আমাদের মুখ দেখাবার জো নেই, এতো লজ্জায় জীবনে কোনদিন পড়িনি।
উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গত মঙ্গলবার ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-০১। কিন্তু রায় ঘোষণার আগেই গত সোমবার রাতে ১৭২ পৃষ্টা রায়ের ১৬৪ পৃষ্টা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। ঘটনাটি নিয়ে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় তোলপাড়। আপত্তি তোলা হয় সাকা চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকেও।
বাংরানিউজ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।