নিপুণ লেখনীর শানিত গর্জন / লিখব আজ নিপুণ কথন
ভুল চিকিৎসার অভিযোগে গতকাল ল্যাবএইড ঘেরাও হয়েছিল । ঘেরাও করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীদের একাংশ । তাঁদের অভিযোগ, সময়মত সঠিক চিকিৎসা হলে তাঁদের সহপাঠী মোস্তাফিজুর সামান্য পায়ের টিউমার থেকে আজ মৃত্যুর মুখোমুখি এসে দাঁড়াত না । ঘটনা শুনে মর্মাহত হলাম । তাই, বিবেকের তাড়নায় কিছু কথা না লিখলেই নয় ।
স্বাস্থ্য খাত এমন এক খাত, যেই খাতে নির্ভরতা, সততা আর বিশ্বাস থাকা উচিৎ সবচেয়ে বেশী । অথচ, এই খাতটাই বরাবর দুর্নীতির দায়ে প্রশ্নবিদ্ধ, যদিও দুর্নীতির লিস্টে এই খাতের নাম কখনও এসেছে কিনা জানা নেই । মানুষের দেহটা নশ্বর, রোগ-বালাইয়ের আশ্রয়। অসুস্থ হলে তাকে ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে –এর কোন বিকল্প নেই । মানুষ তার সবকিছু দিয়ে হলেও প্রিয়জনের সুচিকিৎসা করাতে চায় ।
এই একটা ক্ষেত্রে অর্থের ব্যাপারে কার্পণ্য করার কোন সুযোগ নেই । তাই তো জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও উন্নত চিকিৎসার আশায় দামী সব হাসপাতালে অসুস্থ প্রিয়জনকে নিয়ে যাওয়া । আমাদের দুর্ভাগ্য, এই সুযোগটাই কাজে লাগায় এক শ্রেণীর দুর্বৃত্ত চিকিৎসক নামের কসাই । “কসাই” শব্দটি সব ডাক্তারের জন্য নয়, বরং কিছু অসাধু ডাক্তারের জন্য প্রযোজ্য । এঁরা না লাগলেও একগাদা টেস্ট এর রসিদ ধরিয়ে দেন, চিকিৎসার সাধারণ খরচকে অসাধারণ উচ্চতায় নিয়ে পকেট খালি করতে এঁরা ওস্তাদ ।
রোগীর আত্মীয়-স্বজনেরাও রোগীর কথা ভেবে টাকার দিকে তাকান না । আসলে এমন পরিস্থিতিতে তাকানোর সময় কই? এভাবে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিয়ে টাকা আদায় করে কারা? ডাকাতেরা ।
মোস্তাফিজের জন্য খারাপ লাগছে । বেচারা পায়ের সামান্য টিউমারের অপারেশন ভালভাবে করাতে গিয়ে শেষে ক্যান্সারই বাধিয়ে বসল । এখন সেই ক্যান্সার পা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সাড়া দেহে ।
নিজের সব তো খুইয়েছেই, ভার্সিটির বন্ধুদের সহায়তায় কলকাতা গিয়ে এখন আর সময় নেই, প্রাণটাই না খুইয়ে বসে! মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এই ছেলেটি কি ভাবছে এখন? দেশের একটা মানুষের প্রতি তার মনে কি এখন কোন বিশ্বাস আছে? থাকার কথা? ডঃ মৃদুল ভট্টাচার্য স্যারেরও কি ছিল?
এমন অবস্থা দেখলে আসলে মানুষের প্রতি বিশ্বাস থাকে না । সবচেয়ে বেশী বিশ্বাস যেখানে থাকা উচিৎ, সেই জায়গাটারই যখন এই দশা, তখন হতাশ হতেই হয় । দেশের সব ডাক্তার খারাপ না । সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখনও সুচিকিৎসা হয় । ঢাকা মেডিক্যাল আর বারডেম তো মুমূর্ষু রোগীর শেষ ভরসা –এখনও ।
আমি একটা ছোট অনুরোধ করতে চাই আমার ডাক্তার ভাইবোন ও বন্ধুদের প্রতি । সেটা হল- আপনারা যারা এখনও সেবায় বিশ্বাসী, অর্থের কাছে যারা এখনও নিজেদের বিবেককে জলাঞ্জলি দেন নি, তাঁরা প্লিজ এগিয়ে আসুন । সহকর্মীদের মাঝে যারা অসাধু আছেন, তাঁদেরকে বোঝান । মানুষের জীবন নিয়ে খেলতে মানা করুন । আমার বিশ্বাস আপনারা পারবেন ।
না পারলে হয়তো একদিন আপনারই খুব কাছের কেউ এমন দুর্ভাগ্যের শিকার হবে । তখন কি জবাব দেবেন তাকে? কিংবা নিজের বিবেককে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।