মানবিক, যৌক্তিক আর অযৌক্তিক। সোজা কথা আরেকটা মানুষ। দশ জনের ভীরে ডুবে থাকার প্রানান্ত চেষ্টায় থাকা মানুষ।
চাকরী খোঁজার দিনগুলি খুব অদ্ভুত। আর দশটা পরীক্ষার মত নয়।
প্রথম চাকরী খোঁজার অনুভূতি-টাই এমন মিশ্র, তা বহন করাটাই কঠিন।
ফটিকের কথা মনে আছে। রবি বাবুর ফটিক! ওখানে বয়সন্ধি-কালীন মানব জীবনের জটিলতার কথা বলেছেন লেখক। ওই বয়সে আধো আধো বোল মনে হয় ন্যাকামি আর একটু ভারী কথাই পাকনামি। অথচ; মানুষের এই যে বিশাল মানস পরিবর্তন, সারাদিনের আড্ডাবাজি, চিন্তামুক্ত জীবন, অবাধ-উচ্ছল- স্বাধীন- প্রেমময়- ছন্দময় জীবন থেকে তার কর্মজীবনের কঠিন শৃঙ্খলে বাধা পড়ার সময়ের টানাপড়েন; তার কথা বলেন নি কেউ।
বড় অন্যায়।
সে যাই হোক; মূল অংশে ঢুকি।
বিবিএ শেষ করেই অনেক বন্ধু-বান্ধবের মাথায় ভাজ দেখতে পেলাম। নিজের মাথার ভাজটা খামখেয়ালীর কারণে দেখিনি তখনও। অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় সিভি ড্রপ করলো।
আমি খাই আম্মার হোটেলে। আম্মাও দেখি ধীরে ধীরে একটু পার্টে। মাঝে মাঝে বেশ ম্যাক্সিম গোরকি টাইপ কথা- বার্তা ভেসে আসে ওদিক থেকে। বুঝলাম- দিস ইজ দা ওয়েক আপ কল।
ইচ্ছেমত সিভি ড্রপ করা শুরু করলাম।
যেখানে- সেখানে। কোন বাছ বিচার নাই। আমি কিন্তু এমন একটা ছেলের গল্প বলছি যে কখনই খুব সিরিয়াস ছিলনা কিছু নিয়েই। তাই, শুধুমাত্র ব্যাকবেঞ্চার-রাই হয়তো আমার চাকরী খোঁজার কাহিনী থেকে উপকৃত হবেন।
ক্লাস খুব একটা করতাম না; আমার টিউটোরিয়াল মার্কস তাই তরমুজ ক্ষেতের আরেক নাম।
কিন্তু, ফেবুতে প্রচুর সময় কাটানোর কারণে ওই সময় আমাদের ভার্সিটির দোহা স্যার আর ফুয়াদ স্যারের সাথে অনেকটাই হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। বলে রাখি- এই দুইজন শিক্ষক পুরাই আউট অব দা বক্স। ব্যাবসায় শিক্ষার জন্যে যদি পারফেক্ট শিক্ষক বলে তবে দোহা স্যার-শুড বি দা ওয়ান। তার ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা আছে, ব্যাবসায়ের অভিজ্ঞতা আছে।
দোহা স্যার সবসময় নিজে থেকেই ছেলেপেলে-দের সাহায্য করতে আগ্রহী।
এমন নয় যে আপনি বার বার গিয়ে ধর্না দেবেন। তো একদিন দোহা স্যার আমার একটা সিভি চাইলেন। দিলাম। জিজ্ঞেস করিনি কেনো চেয়েছিলেন? তার কিছুদিন পর ট্রান্সকম লজিস্টিক্স এবং এইচ এস বি সি থেকে আমাকে ফোন করা হল। আমি জানিই না, ব্যাপার টা কি? আসলে- ভার্সিটি থেকে আমাদের কয়েকজনের সিভি পেয়েছিল তারা।
এইচ এস বি সি- তে ভাইবা দিতে গেলাম না। ইচ্ছে হচ্ছিল না। ওরা যেদিন ভাইবা সেদিন আমাকে ফোন করেছিল। আমার মাথাই নষ্ট অবস্থা।
ট্রান্সকম লজিস্টিকস এর ভাইবা টা হয়েছিল পাক্কা ২ ঘন্টা ওভার ফোন।
ফোন চার্জে রেখে বাম কানের অবস্থা বারোটা বাজিয়ে কথা বলেছিলাম। তার পরের দিনই তারা আমাকে কাজে যোগদান করতে বলে। ওই দিনই কোনমতে ব্ল্যাকে ট্রেনের টিকিট কেটে ঢাকায় যাই। তখন, ২০০৯ এর শুরুর দিক। এমবিএ ক্লাস চলছে।
ওরা বলল- দু’মাস ঢাকায় ট্রেইনিং।
পসিবল ছিল না এই কন্ডিশন মেনে নেয়া। সারাদিন ঘুরলাম, দুপুরে প্যাকেট ভর্তি চিকেন বিরিয়ানী খেলাম, তারপর ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এলাম। মাঝরাতে খেলাম আম্মার দেয়া ডাল- ভাত। হা হা হা হা... আহ... আই লাভ দিজ মেমরিজ গাইজ...আই সিম্পলি লাভ দোজ ডেইজ...
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।