নীলফামারীর সৈয়দপুরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিকের) শিল্পনগরে কোনো শিল্পপ্লট খালি নেই। উদ্যোক্তারা কয়েক দফা এ শিল্পনগর সম্প্রসারণের দাবি জানিয়েছেন। একই অবস্থা বগুড়া, রাজশাহী, যশোরসহ আরও কয়েকটি শিল্পনগরেরও।
অথচ, সারা দেশে বিসিকের শিল্পনগরগুলোতে ৬৭৬টি শিল্পকারখানা করার মতো প্লট অব্যবহূত পড়ে আছে। এই পরিমাণ শিল্প করার কথা বলে এসব প্লটমালিক বিসিকের কাছ থেকে প্লট নিয়েছিলেন।
কিন্তু কারখানা আর হয়নি।
এ হিসাব অবশ্য চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সময়ের। সম্প্রতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের বিসিকের কার্যক্রম নিয়ে তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিসিক চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিল্পপ্লট নিয়ে তাতে শিল্পকারখানা করেনি এমন প্লটের তালিকা করা হচ্ছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত সেসব প্লটে শিল্প করা না হলে তাদের প্লট বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
’
বিসিকের ৭৪টি শিল্পনগরে এখন মোট শিল্পপ্লট আছে ১০ হাজার ৩৩৯টি। এর মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে নয় হাজার ৮৩৭টি। এসব প্লটে শিল্পকারখানা হয়েছে পাঁচ হাজার ৭৪৫টি। তবে বর্তমানে উৎপাদনরত আছে চার হাজার ২০৫টি শিল্পকারখানা। শিল্পকারখানা তৈরির কাজ চলছে ৫৭৯টি।
আর বন্ধ হয়ে আছে ২৮৫টি শিল্পকারখানা।
বিসিকের প্লট মূলত ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। উদ্যোক্তারা চাইলে একবারে প্লটের পুরো মূল্য পরিশোধ করতে পারেন। আবার অর্ধেক নগদ এবং বাকিটা ১০ বছরে কিস্তিতে পরিশোধও করতে পারেন। তবে ৯৯ বছরের ইজারা হলেও যেকোনো শর্ত ভঙ্গ করলে বিসিক ওই প্লট বাতিল করতে পারে।
কোথায়, কত প্লট খালি: বিসিকের হিসাবে, ঢাকা অঞ্চলের শিল্পনগরে সবচেয়ে বেশি খালি প্লট পড়ে আছে। ঢাকা অঞ্চলের ২৪টি শিল্পনগরে তিন হাজার ৭৩০টি প্লট থাকলেও বরাদ্দ হয়েছে তিন হাজার ৬৯৩টির। এর মধ্যে দুই হাজার ৭৯০টি শিল্প হওয়ার কথা থাকলেও আছে দুই হাজার ৩৮টি। ৩০৩টি শিল্পকারখানার নির্মাণকাজ চলছে। আর নির্মাণকাজ শুরুই হয়নি ৩৬৪টির।
ঢাকার শিল্পনগরগুলোর মধ্যে বেশি প্লট অব্যবহূত আছে নেত্রকোনার বিসিক শিল্পনগরে, ৫৯টি। এ ছাড়া শরীয়তপুর শিল্পনগরে ৪৩টি শিল্পকারখানা করার মতো প্লট অব্যবহূত পড়ে আছে।
চট্টগ্রামে বিসিকের শিল্পনগর আছে ২২টি। এতে দুই হাজার ৪৪০টি প্লট থাকলেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই হাজার ২৫২টির। এসব প্লটে এক হাজার ২৭৮টি শিল্পকারখানা করার কথা থাকলেও বর্তমানে উৎপাদনে আছে ৯৩৫টি শিল্পকারখানা।
নির্মাণকাজ চলছে ১৩১টির। আর শুরুই হয়নি ১২৬টি শিল্পকারখানার নির্মাণকাজ।
চট্টগ্রামের নোয়াখালীর শিল্পনগরে ৩২টি এবং লক্ষ্মীপুরের শিল্পনগরে ২৬টি শিল্পকারখানা করার মতো প্লট খালি পড়ে আছে।
খুলনা অঞ্চলের ১১টি শিল্পনগরে প্লট আছে মোট এক হাজার ৭৯১টি। এর মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া এক হাজার ৫৯৮টি প্লটে শিল্পকারখানা হওয়ার কথা ছিল ৭০০টি।
কিন্তু বর্তমানে উৎপাদনরত শিল্পকারখানা আছে ৪০৭টি। নির্মাণকাজ চলছে ৬৭টি শিল্পকারখানার। আর ১৪৭টি শিল্পকারখানা করার জায়গা অব্যবহূত ফেলে রেখেছেন প্লটমালিকেরা।
রাজশাহী অঞ্চলে বিসিকের শিল্পনগরগুলোতে প্লট নিয়ে শিল্প না করে ফেলে রাখার নজির কম। রাজশাহীতে বিসিকের ১৭টি শিল্পনগর আছে।
এখানে দুই হাজার ৩৭৮টি শিল্পপ্লটের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই হাজার ২৯৪টি প্লট। এতে ৯৭৭টি শিল্পকারখানা হওয়ার কথা থাকলেও উৎপাদনে আছে ৮২৫টি শিল্পকারখানা। নির্মাণকাজ চলছে ৭৮টি শিল্পকারখানার। আর শুরুই হয়নি ৩৯টি শিল্পকারখানার নির্মাণকাজ।
রাজশাহী অঞ্চলের বিসিক শিল্পনগরগুলোর মধ্যে কেবল কুড়িগ্রাম শিল্পনগরেই শিল্পপ্লট ফেলে রাখার প্রবণতা দেখা গেছে।
এখানে ১৩টি শিল্পকারখানা না করে এর প্লটগুলো ফেলে রাখা হয়েছে।
বিসিকের সৈয়দপুর শিল্পনগরের উদ্যোক্তা রাজ কুমার পোদ্দার সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, দেশের বেশির ভাগ বিসিক শিল্পনগর যখন গোচারণভূমিতে পরিণত হয়েছে তখন সৈয়দপুরের এ শিল্পনগরের সম্ভাবনা আকাশছোঁয়া। এখানে একটি বাদে সবগুলো শিল্পকারখানা সচল রয়েছে। নতুন আরও উদ্যোক্তা আসতে চান। কিন্তু প্লট দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
সৈয়দপুর শিল্পনগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ শিল্পনগরটি যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। এখানে শিল্প গড়তে প্রতিদিন উদ্যোক্তারা ভিড় জমাচ্ছেন। কিন্তু প্লট না থাকায় তাঁরা শিল্পকারখানা করতে পারছেন না। ’
জানতে চাইলে বিসিকের পরিচালক আবু তাহের খান প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের উদ্যোক্তারা প্লট নেওয়ার সময় কোন ধরনের শিল্প করবেন, কত দিনের মধ্যে করবেন, তা উল্লেখ করেন। আবার প্লট বরাদ্দ দেওয়ার সময় বিসিক কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেন।
কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে শিল্পকারখানা করছেন না অনেক উদ্যোক্তা।
আবু তাহের খান বলেন, ‘একজন উদ্যোক্তা সর্বোচ্চ কতটুকু পর্যন্ত প্লট পাবেন সে বিষয়ে আগে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ছিল না। সে কারণে অনেকে বেশি প্লট নিয়ে ফেলে রাখতেন। এটি যেন আর না হয়, সে জন্য একটি নীতিমালা করা হচ্ছে। ’
বন্ধ শিল্পকারখানা: বিসিকের শিল্পনগরগুলোতে প্লট নিয়ে শিল্পকারখানা না করার পাশাপাশি আরেকটি চিত্রও দেখা গেছে।
বিদ্যমান অনেক কারখানাই এখন বন্ধ হয়ে আছে। সারা দেশে শিল্পনগরগুলোতে এমন বন্ধ শিল্পকারখানার সংখ্যা ২৮৫।
বিসিকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা অঞ্চলের শিল্পনগরগুলোতে ৮৫টি, চট্টগ্রাম অঞ্চলের শিল্পনগরগুলোতে ৮৬টি এবং খুলনা অঞ্চলের শিল্পনগরগুলোতে ৭৯টি শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে আছে। এ ক্ষেত্রেও রাজশাহী অঞ্চলের শিল্পনগরগুলোর অবস্থা ভালো। এখানকার ১৭টি শিল্পনগরের ৩৫টি শিল্পকারখানা বন্ধ রয়েছে।
৬৭৬ টি শিল্প করার মতো প্লট সারা দেশে অব্যবহূত পড়ে আছে
৩৬৪ টি শিল্পকারখানার প্লট খালি শুধু ঢাকার শিল্পনগরগুলোতে
২৮৫ টি শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে আছে
উদ্যোক্তা সর্বোচ্চ কত আয়তনের প্লট পাবেন, সে বিষয়ে নীতিমালা হচ্ছে
প্লট নিয়ে শিল্পকারখানা যাঁরা করেননি, তাঁদের তালিকা হচ্ছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত শিল্প করা না হলে তাঁদের প্লট বাতিল করা হবে
শ্যাম সুন্দর শিকদার বিসিক চেয়ারম্যান
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।