আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার চাকরী খোঁজার দিনগুলি-শেষ পর্ব।

মানবিক, যৌক্তিক আর অযৌক্তিক। সোজা কথা আরেকটা মানুষ। দশ জনের ভীরে ডুবে থাকার প্রানান্ত চেষ্টায় থাকা মানুষ।

হুম্মম্ম...শেষদফায় শেষ করেছিলাম ব্যাংকে প্রথম আবেদন করা ও স্রেফ অজ্ঞতার কারনে যোগ্যতার চেয়ে নিচের পদে আবেদন করা দিয়ে। সে যাই হোক, আবেদন করেছি, তা গৃহীত হয়েছে এবং আমার নামে ছাপার অক্ষরে একটা প্রবেশপত্র এসেছে একখানা ব্যাংক হতে, সেটাই মনে হতে লাগলো অনেক কিছু।

নির্ধারিত দিনে সব বন্ধু- বান্ধব মিলে পরীক্ষা দিতে গেলাম। তূর্ণা নিশীথায় চেপে, সারারাত ঘুমালাম না কেউই। হে হে হে... আহা ধীরে ধীরে... সারারাত পড়ালেখা করেছি, তা মোটেও না। সারারাত ওয়ারফেইজ ভেজে ভেজে পুরো ট্রেনের যাত্রী দের ঘুম হারাম করেছিলাম। গার্ড ভাই এসেছিলেন গালি ভাজবেন বলে, তিনিও পরে অসামাজিকের দুই লাইন কলি ভেজে গেলেন!!!! পরের দিন শুক্রবার।

পরীক্ষা শুরু হোল- একটা দুটো বাদে কিচ্ছুই পারিনা। আমার মাথা ঘুরোতে লাগলো। তত্ত্বীয় পরীক্ষা হলে আমি ফুল আন্সার- ভুল আন্সার করে দিয়ে আসতে পারি, কিন্তু এযে মাল্টিপল চয়েজ!!! কই যাই, কই যাই, মুখ কোথায় লুকাই? দেড় ঘন্টার যুগব্যাপি পরীক্ষা শেষ হোল। অপমানে- লজ্জায় আমি শেষ। মনে হোল, ব্যাংকে চাকরি করা সম্ভব না।

আমি কখনই চাকুরি পাবোনা। আশাহত হইনি, কারণ আশা করিইনি। কিন্তু, আমার একটা অহংবোধ ছিল- সেটায় ঘা লাগলো। আত্ববিশ্বাস ভেঙ্গে পড়লো সেই প্রথম পরীক্ষাতেই। আদর করতেন বলেই দোহা স্যার বলতেন- চাকরি তোমাদের পেছনে দৌড়ুবে, সেই প্রথম মনে হোল- স্যার বুঝি আমাদের সাথে মিষ্টি আচরণের ছুতোয় প্রহসন বা ব্যাঙ্গ করেই কথাটা বলতেন।

এইযে সব অনুভূতি, এসব কিন্তু পরীক্ষা শেষ হবার পর প্রথম দশ মিনিটের। তারপর ভাবলাম, বিশ্বাস রাখা মানুষ গুলোর সম্মানে এমন আঘাত দিলাম, কোন প্রিপারেশন ছাড়া আসা আর ঢাকা মুখোই হবনা। যাবার পথে নীলক্ষেতে গিয়ে সাইফুরসের ব্যাংক রিক্রুটম্যান্ট গাইড, এনালজি, গ্রামার থেকে শুরু করে চান্দে গমনের বই কিনে বস্তাবন্দী হয়ে ঘরে ফিরলাম। তার মাস খানিক পরে একের পর এক ব্যাংক রিক্রুটম্যান্ট সার্কুলার। আহত বাঘ আমরা সবাই, একের পর এক আবেদন করতে শুরু করলাম।

কিন্তু, আবেদনে প্রতিবার ৩০০ থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা ড্রাফট লাগে। মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ৫০০ টাকার গুলোতে আবেদন বন্ধ করে দিলাম(স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ছিল একটি এর মধ্যে)। টানা দু’ এক সপ্তাহে সাইফুরস গেলার চেষ্টা করলাম। বইয়ের পাতায় পাতায় এক পা সাইফুরসে আরেক পা চান্দে, মহাবিশ্বে, ব্ল্যাকহোলে টাইপ বিজ্ঞাপনে ভর্তি।

হাসতে হাসতেই দিন শেষ। যাই হোক, এক ধরণের প্রিপারেশন হোল। এর পরের পরীক্ষা, সেটা আমার ২য় ব্যাংক রিক্রুটম্যান্ট পরীক্ষা। এবার সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ওয়ারফেইজ। উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডে-র প্রবেশনারি অফিসার পরীক্ষা।

মিরপুরে সেন্টার পড়লো। পরীক্ষা দিলাম। এবার আগের চেয়ে সামান্য ভালো হোল। পরীক্ষা দিয়ে আবার চট্টগ্রাম ফিরে আসলাম। মাস খানেক পেরুলো।

মাঝে আরও একটা পরীক্ষা দিলাম। উত্তরার কথা ভুলতে বসেছি, এমন সময় দু’ মাস পরে রেজাল্ট বেরুলো। আমার রোলটা আছে। একটা চিৎকার দিলাম, আম্মা ভাবলো আমি ট্রমাতে আক্রান্ত হয়েছি, দৌড়ে আসলো, তারপর একটু ইমোশোনাল অত্যাচার। যতটুকু না ওখানে রোল টা দেখে, তারচে ঢেঁড় বেশী নিজের কাছে একটু হৃত সম্মান ফিরে পাওয়াতে।

ভাইবা হোল। ভাইবায় জিজ্ঞেস করা হোল- -Describe yourself. -What is your father? -Okay, if we recruit you, you will be posted to THAKURGAON. You are from Chittagong, who are homesick & Your mother will be alone in Chittagong, what will you do then? তখন, এত কিছু মাথায় নাই, চাকরি লাগবেই... বললাম- “Sir, my mom has brought up the family after expiration of my father like a real fighter, she can manage everything. N I can go anywhere you want me to go, I can do anything you want me to do…!!!!” ভাবের ঠেলায় কাজ হইল- চাকরি পেয়ে গেলাম। পোস্টিং হইল নরসিংদী। আম্মাকে ছেড়ে, বোনদের ছেড়ে, বন্ধুবান্ধব ছেড়ে প্রথমবারের মত একা একা অনেক দিনের জন্যে কোথাও যাচ্ছিলাম। কিন্তু, যেতে হবে।

এটাই জীবন। প্রথম রাতটা ছিল অসহনীয়। ছারপোকার কামড় খেয়ে রাত কাটালাম একটা হোটেলে। সকালে ব্যাংকে রিপোর্ট করলাম। সবার সাথে পরিচিত হলাম।

রাতে ব্যাবস্থাপক মশাই আমাকে তাদের সাথে নিয়ে গেলেন তাদের বাসভবনে। মেঘনা নদীর পাড় থেকে দু’ তিনশ গজ সামনেই তিনতলা ভবন। অদ্ভুত সুন্দর বাতাস, তাতে মন আরও নস্টালজিক হোল, আমি আরও ট্রমায় ভুগতে শুরু করলাম। হোমসিকনেস কাকে বলে টের পেলাম হাড়ে হাড়ে। সকাল হলে অফিসে যাই, সারাদিন রোবটের মত কাজ করি, মন পড়ে থাকে আমার এই চট্টলায়।

মায়ের কাছে- বন্ধুদের কাছে। অদ্ভুত অভিমানে তারা ফোন করলে দেই ঝাড়ি। আবার চাকরি খুঁজবো বলে ঠিক করলাম। চট্টগ্রাম না হলে কোথাও না। আবার পরীক্ষা দেয়া শুরু করলাম।

এর মাঝে একবার পোস্টিং হোল লক্ষ্মীপুর- রায়পুরে। উত্তরা ব্যাংক এক অদ্ভুত ব্যাংক। প্রবেশন পিরিয়ডে চার জায়গায় পোস্টিং। আর কখনই নিজ জেলায় যাতে সেটা না হয়, সেদিকে তাদের খেয়াল। এটাকে বলে- personnel department not human resources. PD- theory তে কর্মী-কে দেখা হয় cost হিসেবে।

ধরেই নেয়া হয় সে ফাঁকিবাজ। তার বাসার কাছে পোস্টিং হলে সে ফাকি দেবে। উত্তরায় বেতন দিত সাকুল্যে ১৫ হাজার, সাথে লাঞ্চ কুপন প্রতিদিন ১৫০ টাকা করে। ছুটি নিলে লাঞ্চ কুপন বাদ। এটা অনেক সরকারি ব্যাঙ্কেও চালু আছে।

যাই হোক, ওখানেও কিছুদিন করলাম চাকরি। শেষে confirmation এর ১১ দিন আগে আমার আবার পোস্টিং হোল- সিলেটের বড়লেখায়...!!!... ১১ দিন পরেই আমি Senior Officer হিসেবে কনফার্ম হব, সেই চিন্তা ছাপিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি যাবোনা। ওই দিনই রিজাইন দিলাম। সবাই মনে করলো আমি সিউর পাগল হয়ে গেছি। মা/ বন্ধু/ বান্ধব সবাই গালাগালি শুরু করলো।

হাতে চাকুরি নেই, আমি ব্যাক টু চিটাগাং। মাঝে অনেক ব্যাংকে পরীক্ষা দেয়া ছিল। ইট ইজ মিরাকল, একসাথে অনেকগুলো ব্যাংকেই আবার ফ্রেশ হিসেবে টিকে গেলাম। ২৪ শে মার্চ ২০১১ সকালে চাকরি ছেড়ে রায়পুর থেকে বাসায় এসে রাতে দেখি প্রাইম ব্যাংকে টিকেছি। এক সপ্তাহের মধ্যে প্রাইমে ভাইবা হোল, এর আগে ভাইবা দেয়া ছিল যমুনা ব্যাংকে আর ওয়ান ব্যাংকে।

তিনটি থেকেই শর্ট লিস্টেড হলাম। আই থট প্রাইম ওয়াজ দা বেস্ট ওয়ান। তারপর থেকে এখানেই আছি। আপাতত এই হল আমার চাকুরি খোঁজার কাহিনী। আমার চাকরি খোঁজার কাহিনী এখানেই শেষ; আপাতত।

ব্যাংকে যাদের আগ্রহ আছে, তাদের জন্যে পরীক্ষার প্যাটার্ন আর ভাইবার বিষয় নিয়ে আরেকদিন লিখব। সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন, থেকো, থাকিস সবাই। LOVE U ALL…

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.