আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈর্ষা



গত বুধবার শর্মি আমার বাসায় এসেছিল। অবশ্য আসার উদ্দেশ্য অতি মহৎ, আর তা হল আমার হাতে তৈরি আইস টি খাবে। আমিও সানন্দে ওকে আমার বাসায় নিয়ে আসলাম। ওকে বাসায় আনার আগে আমার মনের মধ্যে একটা ভয় সুরু থেকেই কাজ করছিল, তারপরও আমি শর্মি কে আমার বাসায় নিয়ে আসলাম। কারন মনে হচ্ছিল যে আমার ভয়টা পুরোই অমুলক।

কিন্তু না, বাসায় ঢোকার সাথে সাথেই ও আমার ভয়টাকে যথার্থ বলে প্রমান করল। আমি কি নিয়ে ভয় করছিলাম, তা তহ বলাই হয়নি! আমি মানুষটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলেও, ভীষণ রকমের অগোছালো। সারা ঘর জুরে আমার ব্যাবহারের জিনিস-পত্র গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তাই শর্মি আমার বাসায় আসার আগে আমার ভয় হচ্ছিল, ও আমার অগোছালো ঘর দেখে কিছুক্ষন আমার সাথে রাগা-রাগি করবে তার পর আমার ঘর গোছান সুরু করবে। (আমি আমার মা আর ছোট বনকেও আমার ঘর গোছাতে দেইনা জিনিস খুজে পাব না এই ভয় এ, সেখানে অন্য কারো হস্তক্ষেপ কেমনে সহ্য করব?? ) সে যাই হোক, আমাকে আইস টি তৈরি করে নিয়ে আসতে বলল।

তাই আমি রান্না ঘর এ চলে গেলাম। রান্না ঘর থেকে ঝাড়ুর শব্দে আমি আমার ঘরের দিকে দৌড় দিলাম। কিন্তু এসে দেখি, অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি মানা করার পরও সে আমার ঘর গোছান শুরু করে দিয়েছে। আমি রাগ হওয়াতে সে আমাকে বলে, "ঘরটাকে তো গোয়াল ঘর বানায় রাখসিলা, এটাকে মানুষের বসবাস যোগ্য করার একটু চেষ্টা করলাম! "।

ও এই কথা বলার পরে আমার বলার মত আর কিছুই থাকল না, তাই আমি আবার রান্না ঘরে ফিরে গিয়ে চা বানানোর বাকি কাজ সম্পন্ন করতে লাগলাম। শর্মির জন্য বানানো আইস টি ওর হাতে দিয়ে পিসি তে গান ছারলাম, এবং আমার ঘরটা ওর কেন গোছান উচিত হয় নাই তা বোঝাতে লাগলাম। হটাত দেখলাম শর্মি আমার আয়নাটার দিকে এক রকম দৌড় দিয়ে গেল এবং গিয়ে যে কাজ টা করল, তা আমি কখন কল্পনাও করিনি। তা হল, আমার আয়নাটাতে একটা টিপ লাগান ছিল, বড় লাল টিপ। ও সেই টিপ টিকে এক টানে আয়না থেকে তুলে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিল।

আমি শুধু দেখলাম, কিন্তু বলার কিছুই ছিল না। ফেলে দিয়ে ও আমাকে বলল, "টিপ টা যার ই হোক, তোমার ঘর এ অন্য কোন মেয়ের জিনিস থাকতে পারবে না!" আমি একটু অবাক হলেও, ওর এই ব্যাবহারটা কিন্তু আমার খুব ভাল লেগেছিল, জদিওবা প্রকাশ করিনি। চা খাওয়া শেষ করে ও চলে গেল, আমিও ক্যাম্পাস এ যাওয়ার জন্য বের হয়ে গেলাম। গতকাল আমি আমার এক মাত্র খালার বাসায় গিয়েছিলাম। প্রতিদিনের অভ্যাস মত আমি রাত এ শর্মি কে ফোন দিলাম।

খালা বাসায় আমি যে রুমটাতে থাকি, সেটা ৭তলায় এবং আমার রুমের জানালা থেকে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। বৃষ্টির দিনে বরই রোমান্টিক লাগে জানালা থেকে দুরের বাসা গুলো দেখতে। এবং কাল রাতেও বৃষ্টি হচ্ছিল.... আমার এবং শর্মির কিছু জায়গায় অনেক বেশি মিল রয়েছে। যেমন আমারা এত বড় হয়ে গেছি, তার পরও কার্টুন মুভি দেখি, কমিক্স পরি। তাই গত বই মেলাতে শর্মি যে কমিক্স গুলো কিনেছিল তা আমাকে দেয়ার কথা ছিল।

সময়ের প্রবাহে আমি অগুলোর কথা একদম ভুলে গিয়েছিলাম। কালকে কথা বলার সময় আমার কমিক্স গুলর কথা মনে পরে গেলে আমি ওর কাছে সেগুল চাই। কিন্তু শর্মি বলল যে, কমিক্স গুলো ওর কাছে নেই, অন্য একজন কে সে দিয়ে দিয়েছে। আমিও নাছরবান্দা, আমার অগুলো চাই ই। শেষ পর্যন্ত জানতে পারলাম, ও কমিক্স গুলো আদনান কে দিয়ে দিয়েছে।

আরাদনান এখন অ্যামেরিকা তে অবস্থান করছে, তাই অগুলো ফেরত পাওয়া সম্ভব না। কথা প্রসঙ্গে আরও বলল, আগে আদনান এর সঙ্গে ওর যেদিন ই দেখা হত, আদনান শর্মির কপাল থেকে টিপ খুলে নিয়ে নিজের মানিব্যাগ এ রাখত। এরকম প্রায় ২০০-২৫০ টিপ আদনানের কাছে থাকার কথা। (মানে ও আদনানের সাথে কম করে হলেও ২০০-২৫০ বার দেখা করেছে, এইডা কিছু হইল???) ওর কথা শুনে আমি কোন কথা বলার অবস্থায় থাকলাম না। অতঃপর ফোন টা রেখে দিয়ে আমি ভাবতে লাগলাম, আমার ঘর এ একটা টিপ দেখেই ও যদি ঈর্ষা কাতর হতে পারে, তাহলে আদনানের কাছে ওর এতগুল টিপ ছিল, এটা জানার পর আমার অভিব্যাক্তি কি হওয়া উচিত?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।