মেহেরপুরের গাংনী পৌর এলাকার জপমালা রানীর গির্জা থেকে নগদ অর্থ, মুঠোফোন ও মূর্তির গায়ে থাকা অলংকার লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় বাধা দেওয়ায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তিনজন আহত হন।
গতকাল রোববার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, দুর্বৃত্তরা প্রায় সাত লাখ টাকার জিনিস লুট করে নিয়ে গেছে।
ঘটনার সময় গির্জার ভেতরে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী ভক্ত দমু মণ্ডল (৪৯) জানান, রাত দুইটার দিকে গানবাজনা উত্সব শেষে তারা ৫৩ জন গির্জার ভেতরে মেঝেতে ঘুমাচ্ছিলেন।
এ সময় গির্জার পেছনের পাকা সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ১৫ থেকে ২০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি ভেতরে ঢোকে। তারা প্রথমে গির্জার ভেতরের মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম ভাঙচুর করে।
আরেক ভক্ত অমিত মণ্ডল (৩৯) জানান, ঘুম থেকে জেগে উঠে তিনি দেখেন, ওই ব্যক্তিরা অকথ্য ভাষায় তাঁদের গালিগালাজ করছে। তারা গির্জার ভেতরে থাকা লোকদের ধারালো অস্ত্র উঁচিয়ে ভয় দেখিয়ে বলে, চেঁচামেচি করলে লাশ ফেলে দেবে। এরপর সবার দেহ তল্লাশি করে প্রত্যেকের মুঠোফোন ও টাকা নিয়ে নেয়।
তারা ভক্তদের কাছ থেকে স্বর্ণের আংটি ও চেইন ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা গির্জার প্রভু বেদির ওপর উঠে সেখানে রক্ষিত জিনিসপত্র তছনছ করে। স্বর্ণ ভেবে কিছু মূর্তি ও মূর্তির শরীরের অলংকার লুট করে। এ সময় তাদের বাধা দিতে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সুফল দফাদার (৫১), জয়ন্ত মণ্ডল (৪৩), গোপাল মণ্ডল (৪৪) ও বিকাশ মণ্ডল (৪১) আহত হন। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত সুফল মণ্ডলকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্বৃত্তদের সবার মুখে গামছা বাঁধা ছিল। কাউকে চেনা যায়নি। চলে যাওয়ার সময় তারা দুটি বিস্ফোরণ ঘটায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
ভক্তরা জানান, গির্জাটি ১৯৬১ সালে স্থাপিত। গির্জাটি গাংনী পৌরসভার চৌগাছা পশ্চিমপাড়া ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ১১ বিঘা জমির ওপর ।
ভক্তরা জানান, এই ঘটনায় তাঁরা খুবই আতঙ্কিত।
আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গাংনী পৌর মেয়র আহম্মদ আলী, গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদুল আলম, খ্রিষ্টান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের বিশপ ডমেনিক হালদার প্রমুখ। তবে ভক্তরা অভিযোগ করেন, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাননি ।
উত্সব আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক সমর বিশ্বাস জানান, গির্জার আশপাশে প্রায় ৩৩টি খ্রিষ্টান পরিবার আছে। গত সাত দিনে তাদের নয়টি বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে।
তিনি এ ঘটনায় মামলা করবেন বলে জানান।
বল্লভপুর চার্চ গির্জা পরিচালনা কমিটির সম্পাদক বাবুল মল্লিক জানান, নানা ধরনের ভীতির কারণে প্রতি রোববার তাঁদের ধর্মীয় উপাসনার জন্য গির্জায় উপস্থিতির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পৌর মেয়র আহম্মদ আলী জানান, গির্জায় হামলা, লুটপাট ও তছনছের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। তিনি জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে দ্রুত গ্রেপ্তার করার দাবি জানান। তিনি বলেন, পুলিশ অর্থলোভী হয়ে পড়েছে।
তাই গাংনী শহরে চুরি, ডাকাতি হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুল আলম প্রথম আলো ডটকমকে জানান, ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে কয়েকজন সন্দেহভাজনের নাম পাওয়া গেছে। গির্জা কমিটিকে থানায় মামলা করতে বলা হয়েছে। পুলিশ মামলা নেওয়ার পর জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে অভিযানে নামবে।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।