নীল পাগলের দেশ থেকে
এয়ারটেল 3G এর একটা এড দেখে একটু আগে আমি রীতিমত তব্দা খেয়ে গেলাম। এডে দেখা গেল ছেলে মাকে ফোনে বলছে মা আমি গ্রুপ স্টাডিতে,কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে মেয়ে নিয়ে ফুরতি করছে। 3G আসার ফলে ভিডিওতে মা-বাবা ছেলের কুকর্ম দেখে ফেলে,তখন ছেলে আবার সুকৌশলে মিথ্যে বলে বাবা-মাকে বেকুব বানিয়ে হিরো বনে যায়। শেষে তিন পাশ থেকে তিনটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ডায়লগ,''3g আসছে বস,চাপাবাজি এখন অন্য লেভেলে। ''
বাহ! কি সুন্দর! কি চমৎকার করে রঙচঙে মোড়ক দিয়ে আমাদের সামনে মিথ্যা নামক জিনিসটাকে আকর্ষণীয় একটি বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হল।
কিছুদিন আগে এটম ক্যন্ডিরও প্রায় একইরকম একটা এড দেখেছিলাম। আর গায়ের চামড়া সাদা করার বিজ্ঞাপনগুলোর কথা না হয় বাদ-ই দিলাম,কি অবলীলায় দেখানো হয় কালো হওয়ার কারণে কারো বিয়ে হয় না তো কারো আবার চাকরি হয় না,খুব সুক্ষ্মভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয় কালোমেয়েরা সমাজের ফেলনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
অনেকেই হয়তো এখন বলতে পারেন এগুলো তো শুধুমাত্র মজা করার জন্য,এগুলো থেকে কোন পাগলে শিক্ষা নেবে?তাদের বলতে চাই,ভাই,একটু আপনার আশপাশটায় চোখটা মেলে দেখুন, আমাদের কোটি টাকার ফ্ল্যাটে বাবা-মায়েদের আজ দু' দণ্ড সময় নেই সন্তানের জন্য। শৈশব থেকেই তার মা বলুন অথবা খেলার সাথীই বলুন সেটা হচ্ছে ড্রয়িং রুমের কোনায় ঠায় দাড়িয়ে থাকা ৫২'' ইঞ্চির টিভি সেটটা।
আচ্ছা,একটাবারও কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি এধরনের জিনিস দিনের পর দিন হজম করে বেড়ে ওঠা একটি শিশুর মানসিকতাটা কেমনভাবে হবে? তার কাছে মিথ্যা বলাটা কতটা আধুনিক কিংবা রঙচঙে উত্তেজনাপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়াবে? আজ টেলিভিশন নামক মা আমাদের শিক্ষা দেয় সিগারেটের ধোয়া কিভাবে কায়দা করে ছাড়লে দেখতে স্মার্ট লাগে,Dexter টাইপের সিরিয়াল শিক্ষা দেয় কিভাবে খুন করেও ধরা না খেয়ে বাচা যায়।
IPL শিক্ষা দেয় কি করে নারীকে ভোগ্যপণ্য করে মাঠের বাউন্ডারি লাইনে নাচানো যায়। কিংবা শিশুটির প্রিমিয়ার লীগের 'আইডল' ওয়েন রুনির নিজ সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে রেখে পরনারীগমনের মত মুখরোচক গল্পগুলো তাকে শিক্ষা দেয়। আর উপড়ে বর্ণিত সবকিছু একসাথে ঘুটা দিয়ে যে জিনিসটা তৈরি হয় তা হল হিন্দি সিরিয়াল, কি নেই তাতে? সেক্স,পরকীয়া,মদ,জুয়া, নারী, মিথ্যা,কুটনামি,পরনিন্দা কি নেই তাতে?
সত্যি বলতে কি দেশি- বিদেশি সব মিডিয়াই এখন ভয়ংকর ! মারাত্মক ভয়ংকর ! অনেক ক্ষেত্রে ব্যপারটা প্রাণঘাতীও হতে পারে,এর প্রমান হরহামেশাই বাবা-মাকে হত্যা করা ঐশী কিংবা টাপুর-টুপুর সিরিয়াল দেখতে বাধা দেওয়ায় আত্মহত্যা করা বাংলাদেশের কিশোরী মেয়েটি আমাদের দিয়ে যাচ্ছেন।
মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই ভাইয়েরা আর কত নিচে নামাবেন এই সমাজটাকে? আর কত? একটাকা দামের একটা লজেন্স বিক্রির জন্য ছোট নিষ্পাপ শিশুগুলোকে মিথ্যা শেখানোটা কি খুব,খু-উ-ব বেশী প্রয়োজন ছিল? কিংবা খুব বেশী কি প্রয়োজন ছিল শেভিং ক্রীম বিক্রির জন্য কিছু মেয়েকে রাস্তায় নাচান-কুদন করানোর? মেয়েরা কি আদৌ ওই জিনিসটা ব্যবহার করে? তাদেরকে প্রতিনিয়ত পন্য বানানোটা কি খুব বেশী প্রয়োজন ছিল?
আপনি সমাজকে নিচে নামাতে থাকুন,আপনাকে জাহান্নামের নিচে নামিয়ে দেওয়া হবে। জাহান্নামের গভীরতা কত জানা আছে ভাই? না জানা থাকলে wait করুন জেনে যাবেন
সংগৃহীতঃ ফেসবুক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।