আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।
হস্তে লাঠি লইয়া জমিদার বাবু আরাম কেদারা থেকে উঠিয়া উঠানে আসিয়া দাঁড়াইলেন । এক হস্তে তো আরেক হস্তে চাবুক । নিমাই ভয়ে থরথর করিয়া কাঁপিতেছে । মস্তক উঁচু করিয়াও তাকাইতে পারিতেছেনা ।
জমিদার বাবুর চারপাশে তাহারই চামচাকূল , মোসাহেবরা আসন্ন বিনোদনের আনন্দে ইতোমধ্যেই আমুদে মেজাজে নিজেদের সহিত হাসি - তামাশায় মত্ত হইয়াছে । শূদ্রের পুত্র নিমাইয়ের অবমাননা তাহাদের নিরানন্দ জীবনে হাসির খোরাকের যোগান দিতে যাইতেছে । প্রকৃতপক্ষে এই সকল শূদ্রের সন্তানরাই তাহাদের জীবনে হাসি , ঠাট্টার উৎস হইয়া বছরের পর বছর তাহাদের জীবনের আয়ু বর্ধিত করিয়াছে । এই নীম্নবর্গের শ্লেচ্ছকূল যে তাহাদের ন্যায়ই রক্ত - মাংসের আদমসন্তান এই পরম সত্যও তাহাদের তোষামোদীর মগজে প্রবেশ করিতে পারেনাই , কখনো পারিবে এই আশাও দূরাশা ।
জমিদার বাবু নিমাইয়ের সন্নিকটে আসিয়া খাড়াইলেন ।
ভালো করিয়া এই বাঁদীর সন্তানের মুখখানার দিকে ভালো করিয়া চাহিলেন । কোন এক আশ্চর্যজনক উপায়ে তাহার মনে হইলো একদা এরুপ চেহারারই এক বাইজীর সহিত দিন পনেরো যাবত ঘনিষ্ঠতা করিয়াছিলেন শহর হইতে বেশ দূরে অবস্থিত এক কুঠিবাড়ীতে । তাহারই পুত্র কিনা তাহা ভগবানই জানেন । তিনি আর এই মুহূর্তে অতশত লইয়া মাথা ঘামাইতে চাহিলেন না । অনেকদিন হইলো এইসব অজাত - কুজাত লইয়া কোনরুপ মৌজ - মাস্তি সংঘটিত হয়না ।
নিজ দাঁড়িতে হাত বুলাইতে বুলাইতে ভাবিলেন এরুপ হাস্যকর কিছু করিবেন । ভাবতে ভাবতেই এক চাকরকে ডাকিয়া আদেশ দিলেন নিমাইয়ের নীম্নাঙ্গের পরনের কাপড় খুলিয়া ফালাইতে । ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতেও নিমাই প্রাণপনে বাঁধা দান করিবার চেষ্টা করিলে সপাং সপাং করিয়া তাহার পীঠে গোটা ছয়েক চাবুকের বাড়ি পড়িবার পর নিমাইয়ের শরীরে আর কোন জোর অবশিষ্ট থাকিলোনা । নিমেষের মধ্যেই সে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হইয়া গেলো । এবারে জমিদার বাবুর মনে অতীব ঘৃণ্য এক বাসনা জাগ্রত হইলো ।
তিনি শলার কাঠি দিয়া নিমাইয়ের অন্ডকোষে খোঁচা মারিতে আরম্ভ করিলেন । নিমাইয়ের মনে হইতে থাকিলো যেন সে দুঃস্বপ্ন দেখিতেছে । এদিকে জমিদার বাবুর মোসাহেব , চামচাকূল এই দৃশ্য দেখিয়ে হাসিতে লুটোপুটি খাইতেছে । এরুপ বিনোদন তাহাদের জীবনে আর হইতে পারেনা । নিমাই কাঁদিতেছে আর চোখ মুছিতেছে , চামচাকূল হাসিয়া হাসিয়া একে অপরের শরীরের উপর পড়িয়া যাইতেছে আর জমিদার বাবু দাঁড়িতে হাত বুলাইতে বুলাইতে মিটিমিটি হাসিতেছে ।
মানবসভ্যতা সেই সময়ে এইভাবেই নির্ণিত হইতো ।
উপরিউক্ত সময়ের জমিদার বাবুরা কালের গর্ভে , সময়ের প্রয়োজনে হারিয়ে গেছে । কিন্তু তার জায়গায় এফ্লুয়েন্ট , ইকুয়েলী ডার্টি সোসাইটিকে টিকিয়ে রাখতে পয়দা হয়েছে মর্ডান জমিদারেরা । তারা বহুজাতিকের শক্তিতে গণতন্ত্র কেনে , শিল্প - সাহিত্য কেনে , আদর্শ - মূল্যবোধ , ইজম কেনে এবং নিজেদের মাপে বেঁচে । সাদা শুয়োরের বাচ্চা এবং কালো শুয়োরের বাচ্চার মধ্যে যে কোন একটিকে বেছে নিতে দেওয়ার ক্ষমতাই এদের ভাষায় আম পাবলিকের গণতন্ত্র চর্চা ।
এই জমিদারদের সাথে সাথে তার চামচা , মোসাহেব , তল্পিবাহকদেরও পরিবর্তন ঘটেছে । শিক্ষা হাইলী প্রফিটেবল কমোডিটি বলে মগজে দুই সের বিদ্যা জুটেছে , উচ্চবেতনের কেরানীর যোগান বেড়েছে বলে স্যুট , বুট , টাই , পালিশ করা শু এর সব হাতের নাগালে চলে এসেছে বলে মোসাহেবী , চামচামী , তেলবাজি করাটাই এদের কাছে স্মার্টনেস । আদিকালের চামচা , জমিদার বাবুর চাপরাশির সাথে এদের বাহ্যিক চেহারায় কোন প্রকারের সাদৃশ্য না থাকলেও সারবস্তুতে কোন পার্থক্য নেই । তারা তখনও অসংবেদনশীল ছিলো , আজও তাই । কেউ অপদস্থ হলেই তাদের আনন্দের সীমা থাকেনা ।
বন্ধু বান্ধব থেকে শুরু করে অপছন্দের সহকর্মী , গরীব - গুর্বো , পাগল , অসুস্থ যেই হোক এদের অপমানিত হতে দেখলেই এদের অর্গাজমিক আনন্দ । আনন্দ মানেই এদের কাছে অন্যের অপদস্থ হবার দৃশ্য সরাসরি প্রত্যক্ষ করা । ঠিক এমনই এক নষ্ট সময়ে নবাবপুরের এক রাস্তায় এক অদ্ভুত দৃশ্য
এক পাগলী ছুটছে । কিছুক্ষণ থেমে চারপাশ তাকিয়ে দেখছে , আবার ছুটছে । কারণ অজানা ।
সে দৌড়ে কাকে খুঁজছে কেউ ঠাহর করতে পারেনা । অথচ সে এই পাড়ারই । জনশ্রুতি আছে আঠারো বছর বয়সে কোন এক হারামজাদা একে পোয়াতী বানিয়ে ভেগে গেলে তার প্রথম মস্তিষ্ক বিকৃতির লক্ষণ দেখা দেয় । অথচ এমনটা হবার কথা নয় । পাগলীটা আজন্মই গরীব ঘরের মেয়ে ।
বাপের তৃতীয় বউয়ের সন্তান । জন্মের তিন বছরের মাথাতেই বাপে আরেক শাদী করে ফুটে গিয়েছিলো । এদিকে পাগলী ছুটছে তো ছুটছেই । এক গাড়ীর গোত্তা খেয়ে হাঁটুতে একটু ব্যাথা পেলে রাস্তার কোণে কসাইখানার কাছে বসে পড়লো । এদিকে পাবলিক এই দৃশ্য দেখে আর আনন্দ ধরে রাখতে পারলোনা ।
নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে ,
" হে হে হে , আজকে আবার পাগলীর মাথায় মাল উঠছে । অনেকদিন তো দেখিনাই এই দিকে । যাক আজকে আবার মজা পাওয়া যাবে । " রাস্তার বখাটে তার সঙ্গীকে বলে উঠলো ।
" এ মা , পাগলী দেখি আজকে বহুদিন পর ক্ষেপেছে ।
দেখেছেন ভাবী ? আহা পাগলী মেয়ে কি যে হবে ওর । " পাড়ার দোকান থেকে চিনি কিনতে এসে এক গৃহবধূ আরেকজনকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলে । পাগলীর প্রতি এই মাখো মাখো দরদ ভালোবাসা নাকি সহানুভূতির নিকৃষ্ট রুপ তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে ।
এদিকে উচ্চ মধ্যবিত্ত এক দুঃখ বিলাসী কন্যা রিকশায় যেতে যেতে পাগলীকে দেখে নিজ বান্ধবীকে বলে উঠে " ইস দেখেছিস কি অবস্থা মেয়েটার ? এতো খারাপ লাগছে । কেন যে মানুষের এতো কষ্ট ? " অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই তিন সেকেন্ডের বেশী সেই মানবপ্রেম থাকলোনা ।
তারা দুইজনে নিজেদের মধ্যে কি এক রসিকতায় মেতে উঠলো ।
এদিকে কসাইখানার কসাইয়ের চোখ জোড়া ঝলসে উঠে । আজকে প্রথম কাছ থেকে পাগলীটাকে দেখতে পারছে । পরনে নোংরা সাদা এক কাপড় গোপনাঙ্গ পর্যন্ত ঢেকে রেখেছে । উরুর বাকি অংশ পুরোটাই দেখা যাচ্ছে ।
উপরের দিকে তাকালে দুধ দুটার আকারও ভালো করে বোঝা যায় । কসাই চারপাশে সতর্ক চোখে তাকিয়ে দেখে লোকজনেরা কি করছে । কিছুক্ষণ আগে আড্ডা দেওয়া বখাটেরা এখন আর নেই । লোকজনও এদিকে তেমন দেখা যাচ্ছেনা । কেউ এদিকে তাকাচ্ছেনা তেমন ।
ধীরে ধীরে পাগলীটার নিঃশ্বাস নেওয়ার দূরত্বে গিয়ে ডান হাত দিয়ে পাগলীর বাম স্তন খামচে ধরে । পাগলীটা অতর্কিত এই আক্রমনে কিছুক্ষণ নির্বাক চেয়ে থাকে বিস্ময়ে । এদিকে কসাইয়ের হাত পাগলীর নাভি থেকে ধীরে ধীরে নিচে নেমে গেলো । নীম্নাঙ্গে কোন কাপড় নেই দেখে অনায়াসে হাত ঢুকে যাচ্ছে । পাগলী হাতে এক কামড় দিয়েই ছুট দিলো ।
হারামজাদী , মাগী কোনহানকার । রক্ত বাইর কইরা দিলো বলতে বলতে কসাই নামাজঘরের দিকে পা বাড়ালো । বছর পাঁচেক হলো এক ওয়াক্ত নামাজও তার মিস হয়না ।
এদিকে পাগলী ছোটা শুরু করলো । ছুটছে আর চারপাশে সাবধানে তাকাচ্ছে ।
স্পষ্ট উচ্চারণে বলছে " তোরা কেউ আমার কাছে আইবিনা । তোগো আমার সহ্য হয়না । তোরা কেউ কাছে আইবিনা কইলাম । " এই তীব্র বিতৃষ্ণা সমাজে ক্রমবর্ধমান মনোবৈকল্যের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করেন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানীরা ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।