সতর্ক করন " জামাত শিবির , যে কোন রকমের মৌলবাদী, ধর্ম ব্যাবসাই ও বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত সকল জানয়ারের প্রবেশ নিষেধ"
কুরবানী শব্দের উৎপত্তি হলো কুরবান শব্দ থেকে। কুরবান শব্দের অর্থ নৈকট্য, সান্নিধ্য, উৎসর্গ। সুতরাং কুরবানী অর্থ হলো উৎসর্গ করার মাধ্যমে আল্লাহ তা’য়ালার নৈকট্য লাভ করা। কুরবানীর ইতিহাস আমাদের কমবেশী সকলেরই জানা আছে। হযরত ইব্রাহিম (আ.) কে আল্লাহ তা’য়ালা প্রিয় জিনিস কুরবানী করার জন্য হুকুম দিলেন।
প্রিয় জিনিস ছিলেন হযরত ইসমাইল (আ.)। যদিও ইহুদীদের মধ্যে এ নিয়ে মতভেদ আছে। ইহুদীরা মনে করে যে, কুরবানীর জন্য হযরত ইসমাইল (আ.) কে নয়, বরং হযরত ইসহাক (আ.) কেই মনোনিত করা হয়েছিল। যাহোক আমাদের ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে হযরত ইসমাইল (আ.) এর নামই প্রচলিত। হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর আত্মত্যাগই হলো কুরবানী যেহেতু আল্লাহ তা’য়ালা তাঁকে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কুরবানী করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
শোনা যায় ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে নির্দেশ পাওয়ার পর উট কুরবানী দিয়েছিলেন। কিন্তু তা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হয়নি। কেননা আল্লাহর হুকুম প্রিয় জিনিস কুরবানী করতে হবে। তাই তিনি তাঁর প্রিয় জিনিস হযরত ইসমাইল (আ.) কে কুরবানী করতে উদ্যোত হয়েছিলেন। সূরা হজ্জের ৩৪ নং আয়াতে দেখতে পাই সকল যুগেই সকলের জন্য কুরবানীর প্রচলন ছিল।
হযরত আদম (আ.) এর সময়ও কুরবানীর প্রচলন ছিল। তাঁর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল কুরবানী করেছিলেন শস্য ও পশু দ্বারা। সে সময় পাহাড়ের উপর কুরবানীর জিনিস রাখা হতো। যার কুরবানী কবুল হতো তার জিনিস আসমান হতে আগুন এসে ভস্ম করে দিত। আমাদের নবীজি (সা.) হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর ধারায় এই কুরবানী অব্যাহত রাখেন।
প্রতিবছর জিলহজ্জ মাসে হজ্বের পরে এই কুরবানী করতেন। সেই ধারাবাহিকতায় আজও কুরবানী বিশ্বের সমস্ত মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত আছে।
বর্তমানে মাদ্রাসা নামে অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বের হয়েছে, যারা কুরবানীর পশুর চামড়া সংগ্রহ করার জন্য হুরোহুরি, পালাপালি করে থাকে। অথচ মাদ্রাসায় কুরাবানীর পশুর চামড়া দান করা যায়েজ নাই। অধিকাংশ মাদ্রাসায় পশুর চামড়া বিক্রি করে শিক্ষকদের বেতন, মাদ্রাসা মেরামত, ইত্যাদি করে থাকেন।
তারা বলে থাকেন তাদের মাদ্রাসায় এতিম থাকে, কিন্তু আদৌই সেই এতিমেরা সেই চামড়া বিক্রির টাকা পায় কিনা সন্দেহ।
কুরবানীর গোশত আমরা তিন ভাগ করে বন্টন করি। গোশত নিয়ে কোন অনিয়ম হয় না, এটা মোটামুটিভাবে বলা যায়। তবে কুরবানীর পুশুর চামড়া নিয়ে যত হ-য-ব-র-ল অবস্থা। আমাদের অধিকাংশ লোকের কুরবানীর পশুর চামড়া ইসলামী মতে সঠিক স্থানে দান করা হয় না।
যার কারণে কুরবানী করতে গিয়ে শেষে গলদ রয়ে যায়। বর্তমানে মাদ্রাসা নামে অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বের হয়েছে, যারা কুরবানীর পশুর চামড়া সংগ্রহ করার জন্য হুরোহুরি, পাল্লপাল্লি করে Quarbani Chamra Leatherথাকে। অথচ মাদ্রাসায় কুরাবানীর পশুর চামড়া দান করা যায়েজ নাই। অধিকাংশ মাদ্রাসায় পশুর চামড়া বিক্রি করে শিক্ষকদের বেতন, মাদ্রাসা মেরামত, ইত্যাদি করে থাকেন। তারা বলে থাকেন তাদের মাদ্রাসায় এতিম থাকে, কিন্তু আদৌই সেই এতিমেরা সেই চামড়া বিক্রির টাকা পায় কিনা সন্দেহ।
আমার বাস্তব জীবনের একটি কাহিনী বলি। আমার জেলা শহরে নামকরা একটি কওমী মাদ্রাসা আছে। কুরবানীর দিন অনেক চামড়া সংগ্রহ করেছে। সেই চামড়াগুলি বিক্রি করে টাকাগুলো মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হুজুর কিছু এতিম ছেলের হাতে দিয়ে দিল। এবার অধ্যক্ষ সাহেব বললো বাবা তোমরা বল হুজুর আমরা চামড়া বিক্রির টাকা পেয়েছি এবং তা এই মাদ্রাসায় দান করে দিলাম।
এখন ছেলেরা কি করবে, হুজুরের আদেশ মানতেই হবে। তা নাহলে মাদ্রাসায় থাকা যাবে না। তাই ছেলেরা হুজুরের শিখানো কথাগুলো বলেই অধ্যক্ষ হুজুরের হাতে টাকাগুলো দিয়ে দিল। এবার সেই টাকা কি হবে সেটা সবাই ভাল জানে।
তাই মাদ্রাসায় যাকাত বা কুরবানীর চামড়া দান করা মোটেই ইসলামী মত নয়।
কেননা নবীজি (সা.) এর সময় কোন মাদ্রাসার অস্তিত্ব ছিল না। সাহাবায়ে কেরামগণও কুরবানীর চামড়া মাদ্রাসায় দান করতেন না। মাদ্রাসায় যাকাত ও কুরবানীর চামড়া দান করার পদ্ধতি নবীজি (সা.) এর ওফাতে বহু বছর (প্রায় ১০০০ বছর) পরে একশ্র্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ী আবিস্কার করেছে। তারা যাকাত ও কুরবানীর চামড়া সংগ্রহের জন্য ধর্মের নামে মাদ্রাসায় লিলাহ বোর্ডিং খুলেছে। অথচ অধিকাংশ মাদ্রাসায় লিলাহ বোর্ডিং এর কোন অস্তিত্ব নাই।
আবার থাকলেও এ টাকা লিলাহ বোর্ডিং এ খরচ করা হয় না। তাই কুরবানীর চামড়া কোন মাদ্রাসার হক্ব নয়। ইসলামের ইতিহাসে কুরবানীর চামড়া মাদ্রাসায় দান করার কোন প্রমাণ নেই। কুরবানীর চামড়ার মাসয়ালা হলো যদি আপনি চামড়া বিক্রি না করেন, তবে তা নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন। যেমন, চামড়া দিয়ে জায়নামাজ, পানির মশক ইত্যাদি তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।
কুরবানী চামড়া বিক্রি করে পশু জবেহ ও কুটা-বাছা বাবদ মুজুরী দেওয়া যাবে না। চামড়া বিক্রি করে টাকা নিজের প্রয়োজনে ব্যয় করতে পারবেন না। যখনই কুরবানীর চামড়া বিক্রি করবেন, তখনই তা দান করতে হবে। এবার প্রশ্ন হতে পারে তাহলে কুরবানীর চামড়া কোথায় দান করবো? এর সঠিক উত্তর কুরআন শরীফেই আছে। একটা কথা জানা দরকার যারা সদকা বা যাকাত পায়, তাদেরকেই কুরবানীর চামড়া দান করতে হয়।
মহান আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেন-
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَاِبْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
অর্থাৎ “সদকা হল কেবল ফকীর, মিসকীন, সদকা আদায়কারী কর্মচারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষন করা হয় তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে, ঋণগ্রস্তদের জন্যে, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে- এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। ” (সূরা তাওবা-৬০)
উল্লেখিত আয়াতে সদকা বা যাকাত আদায়ের ৮টি খাত মহান আল্লাহ তা’য়ালা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন। অতএব এই ৮টি খাতেই সদকা বা যাকাত এবং কুরবানীর চামড়া দান করতে হবে। কেননা সদকা এবং কুরবানীর চামড়া দান করার খাতসমূহ একই।
সদকা বা যাকাত আদায়ের ৮টি খাতঃ
১. ফকির (ْفُقَر)
২. মিসকীন (الْمَسَاكِينِ)
৩. সদকা আদায়কারী কর্মচারীর (الْعَامِلِينَ عَلَيْهَا) পারিশ্রমিক, যাকাত হতে ব্যয় করা
৪. وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ অর্থাৎ যাদের চিত্ত আকর্ষন করা হয় তথা নও মুসলিম। তাদেরকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তথা ইসলাম গ্রহণের প্রতি উৎসাহিত করতে বা ইসলামে দৃঢ় রাখতে যাকাত দেওয়া
৫. গোলাম বা দাস মুক্তির জন্য (الرِّقَابِ)
৬. ঋণগ্রস্থদের ঋণমুক্তির জন্য (َالْغَارِمِينَ)
৭. আল্লাহর রাস্তায় যারা জিহাদ করবেন, তাদের সাহায্যার্থে।
৮. মুসাফিরদের জন্য
সুনানে আবু দাউদ যিয়াদ ইবনে হারিস সুদাঈ (রা.) হতে বর্ণি হয়েছে, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (সা.) এর দরবারে হাজির হয়ে তাঁর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছি, এমন সময় একটি লোক এসে তাঁর কাছে আবদেন করে- “সদকার (যাকাতের) মাল থেকে আমাকে কিছু দান করুন। ” তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “সদকার ব্যাপারে আল্লাহ নবী বা অন্য কারো ইচ্ছার উপর সন্তুষ্ট নন, বরং তিনি নিজেই তা বন্টনের আটটি ক্ষেত্র নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং যদি তুমি এই ৮টি ক্ষেত্রের কোন একটির মধ্যে পড় তবে আমি তোমাকে দিতে পারি।
(তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে)
আট (০৮) টি খাতের বিস্তারিত আলোচনা (তাফসীরে জালালাইন শরীফ অবলম্বনে):
১. ফকিরঃ যে ব্যক্তির প্রয়োজন পূর্ণ করার মত সম্পদ নেই। এভাবে যে, তার প্রয়োজনের পরিমান থেকে অর্ধেকের সম্পদের মালিক হয়। যেমন তার প্রয়োজন একশত টাকার কিন্তু তার নিকট বিশ বা ত্রিশ টাকা রয়েছে। এ ধরণের লোককে ফকির বলা হয়।
২. মিসকীনঃ যে ব্যক্তির নিকট কিুছ সম্পদ আছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিমান নেই।
অর্থাৎ যার নিকট একান্ত প্রয়োজনীয় ধন সম্পদ নেই। যেমন তার একশত টাকার প্রয়োজন কিন্তু তার নিকট রয়েছে সত্তর টাকা। এ ধরণের লোককে মিসকীন বলে।
৩. সদকা বা যাকাত আদায়কারী কর্মচারীঃ অর্থাৎ ইসলামী রাষ্ট্রে যাকাত উসুলকারী, হিসাব রক্ষক প্রমুখ। এদের বেতন স্বরূপ সদকার অর্থ হতে ব্যয় করা যায়।
৪. وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ অর্থাৎ নও মুসলিমঃ যাদের হৃদয়ে এখনও ইসলাম সুদৃঢ় হয়নি। অথবা এমন লোক যার মনতুষ্টির জন্য অন্যদের ইসলাম গ্রহণের আশা করা যায়।
৫. গোলাম বা দাস-দাসীকে মুক্ত করার জন্যঃ কারও নিকট হতে কোন গোলামকে মুক্ত করার জন্য সদকা বা কুরবানীর চামড়ার অর্থ ব্যয় করা যায়। পূর্বে দাস প্রথাছিল কিন্তু বর্তমানে দাস প্রথা নেই। তাই সদকা আদায়ের এ খাত বর্তমানে বিলুপ্ত।
৬. ঋণগ্রস্থঃ কোন ব্যক্তি কারো নিকট ঋণ আছে, কিন্তু সে ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম। এ ধরণের ব্যক্তিকে যাকাত বা কুরবানীর চামড়ার অর্থ প্রদান করা যায়।
৭. জিহাদে অংশগ্রহণকারীঃ যারা জিহাদের অংশগ্রহণ করবে তাদের জন্য যাকাত বা কুরবানীর চামড়ার অর্থ ব্যয় করা যায়, যদিও তারা সম্পদশালী হয়।
৮. মুসাফিরঃ মুসাফির যদি ধনী হয়, কিন্তু সাথে কোন সম্পদ বা অর্থ নেই। তবে তাকে বাড়ীতে পৌঁছার জন্য যতটুকু অর্থ লাগে তা যাকাত বা সদকা হিসাবে দেওয়া যাবে।
(তাফসীরে জালালাইন)
৮ টি খাতের মধ্যে প্রথম ৪ টি খাত উত্তম:
যাকাতের খাত হলো ৮টি। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা স্পষ্ট ভাষায় ৮টি খাতের উল্লেখ করেছেন। তবে প্রথম চারটি খাতকে ‘আলিফ লাম’ (الَ) দ্বারা সুনির্দিষ্ট করেছেন আর পরের চারটি খাতে ‘ফী’ (فِي) অব্যয় ব্যবহৃত হয়েছে। এর কারণ এই প্রথম চারটি খাত তথা ফকির, মিসকীন, সদকা আদায়কারী কর্মচারী এবং যাদের (নও মুসলিম) চিত্তাকর্ষণ উদ্দেশ্যে। এর তাৎপর্য হচ্ছে, এ চারটি দল লোক যাকাতের হকদার।
তাই হকদার হিসেবে তাদেরকে ‘আলিফ লাম’ (الَ) দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এরপর যাদের উল্লেখ করা হয়েছে তাদেরকে কি কারণে সদকা দেওয়া হবে তা ‘ফী’ (فِي) অব্যয় দ্বারা বুঝানো হয়েছে। যেমন গোলামী থেকে মুক্তি লাভ, ঋণ পরিশোধ, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ এবং অসহায় মুসাফিরের সফর সম্পূর্ণ করা। এসব কারণে তারা যাকাত পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে এবং না থাকলে তারা যাকাত লাভের যোগ্যতা হারাবে। যদি কোথাও জিহাদ না থাকে, তবে সেখানে এ খাতের কোন প্রয়োগ করা যাবে না।
পক্ষান্তরে ফকির, মিসকীন, সদকা আদায়কারী কর্মচারী এবং যাদের চিত্তাকর্ষণের জন্য (নও মুসলিম) যাকাত প্রদান করা হয়, তারা প্রকৃত পক্ষেই যাকাত লাভের যোগ্য। (তাফসীরে জালালাইন)
প্রথম ৪ টি খাতের মধ্যে প্রথম ২ টি খাত উত্তমঃ
আলোচ্য আয়াতে যাকাত প্রদাণের জন্য সর্বপ্রথম ফকিরদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ফকির বলতে বোঝানো হয়েছে যাদের কিছুই নেই। এরপর উল্লেখিত হয়েছে মিসকীনের কথা। মিসকীন সে ব্যক্তি যার নিকট কিছু আছে, কিন্তু প্রয়োজন মোতাবেক নেই।
ফকির-মিসকীন উভয়ই অভাবগ্রস্থ, দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত। তবে মিসকিনের চেয়ে ফকিরের অভাব অধিকতর। এজন্য আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম ফকিরের নাম উল্লেখ করেছেন, এরপর মিসকীনের।
ইসলামী রাষ্ট্রে সদকা বা যাকাত উসুলকারী কর্মচারীকে যাকাত বা সদকা হতে বেতন দেওয়া যায়। অর্থাৎ তারা সদকা বা যাকাতে সম্পূর্ণ অর্থ পাবে না।
ফকির-মিসকীনদের জন্য তারা সদকা উসুল করবে। সেই উসুলকৃত সদকা হতে তাদের বেতন দেয়া যায়। যদি কোন দেশে সদকা বা যাকাত আদায়কারী কোন কর্মচারী না থাকে তবে সেখানে যাকাতের এ খাত বাতিল বলে গণ্য হবে।
‘মুয়ালাফাতুল কুলূব’ বা নও মুসলিম যারা ইসলাম কবুল করেছে, কিন্তু এখনও ইসলামের প্রতি বিশ্বাস দুর্বল এবং যেহেতু তারা দারিদ্র পীড়িত, এজন্য তাদেরকে যাকাত বা সদকা দেওয়া যেন ইসলামের উপর কায়েম থাকে। অধিকাংশ আলেমগণের মতো হুজুর (সাঃ) এর ওফাতে পরে ‘মুয়ালাফাতুল কুলূব’ অংশ বাতিল হয়েছে।
ইমাম কুরতুবী (র.) লিখেছেন, হযরত আবু বকর (রা.) এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম একমত হয়েছে যে, যাকাত বা সদকার এ খাত বাতিল বলে গণ্য হবে (মা’আরিফুল কুরআন- ইদ্রিস কান্ধলভী, তাফসীরে কুরতুবী)। অবশ্য নও মুসলিম যদি অভাবগ্রস্থ হয় তবে ফকির মিসকীন হিসেবে তাকেও যাকাত দেওয়া যেতে পারে। ইমাম আবু হানীফা (র.) এব ইমাম মালেক (র.) এর মতে সদকা বা যাকাত উসুলকারী ব্যক্তিদের ছাড়া অবশিষ্ট সকল খাতেই জাকাত আদায় শুদ্ধ হওয়ার জন্য তাদের অভাবগ্রস্থ হওয়া পূর্ব শর্ত। (তাফসীরে জালালাইন)
সদকা এবং কুরবানীর চামড়া দানের সবচেয়ে উত্তম খাতঃ
সদকা বা যাকাত এবং কুরবানীর চামড়া দানের সবচেয়ে উত্তম খাত হলো ঐ সমস্ত ফকির-মিসকীন তথা গরীব লোক যাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে। যেকোন দানের ব্যাপারে সর্বপ্রথম অধিকারী হলো নিকটতম গরীব আত্মিয় এবং গরীব প্রতিবেশী।
এ সম্পর্কে হাদিস শরীফ বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। যেমন-
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, একটি দিনার হলো এমন যা তুমি আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেছ, আর একটি দিনার তুমি গোলাম আজাদ করার ব্যাপারে ব্যয় করেছ, আর একটি দিনার তুমি কোন মিসকীনকে দান করেছে, আর একটি দিনার তুমি তোমার পরিবারভুক্ত লোকদের জন্য ব্যয় করেছ। সর্বাধিখ সওয়াব সেই দিনারটির জন্য হবে যা তুমি তোমার পরিবারভুক্ত লোকদের জন্য ব্যয় করেছে। (বুখারী শরীফ)
রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, উত্তম সদকার হচ্ছে যা প্রদানের পর কারো মুখাপেক্ষী হতে হয় না আর দান খয়রাত শুরু করো তোমার আপন পরিবারবর্গ থেকে। (বুখারী শরীফ)
হযরত মায়মূনা বিনতে হারেস (রা.) বর্ণনা করেন, হুজুর (সা.) এর যুগে আমি বাঁদি আযাদ বা মুক্ত করেছিলাম।
আমি হুজুর (সা.) এর দরবারে বিষয়টি উল্লেখ করলাম। তিনি এরশাদ করলেন, তুমি যদি তোমার মামাদেরকে দিতে তবে অনেক সওয়ার হাসিল করতে। (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত সালমান ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন যে, “সদকার মাল সাধারণ গরীব মিসকীনদের দান করলে তাতে তো সওয়াবই পাওয়া যায়। কিন্তু তা নিজের রক্তের সম্পর্কের গরীব মিসকীনদের দান করলে তাতে দুটো সওয়াব পাওয়া যায়। একটি সদকার সওয়াব আর একটি আত্মীয়তার হক্ব আদায় করার সওয়াব।
” (আহমদ, তিরমিযী)
হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, হযরত আবূ তালহা (রা.) আরজ করেছেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! বেরোহা (বাগান) আমার সর্বাধিক পছন্দনীয় সম্পত্তি, আর এ বাগানটি আমি আল্লাহর রাস্তায় দান করছি। আমি আশা করি, এর নেকী আমার জন্যে আল্লাহ পাকের নিকট সঞ্চিত থাকবে। এখন আপনি আল্লাহ পাকের নির্দেশ মোতাবেক তা বিতরণ করুন। তখন হুজুর (সা.) এরশাদ করলেন, আমি সমীচীন মনে করি যে, তুমি বাগানটি নিজের আত্মীয়-স্বজনকে দান কর। হুজুর (সা.) এর নির্দেশ মোতাবেক হযরত আবূ তালহা (রা.) বাগানটি তাঁর নিকটাত্মীয় ও চাচাতো ভাইয়ের মাঝে বিতরণ করে দেন।
নবীজি (সা.) এরশাদ করেন, “সে মু’মিন নয় যে পেট ভরে খায় অথচ তার পাশেই প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে। ” (বায়হাকী)
নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, “তুমি যখন তরকারি রান্না করবে তখন তাতে বেশী করে পানি দেবে, অতঃপর তোমার প্রতিবেশীদের কারো খবর নিয়ে তা থেকে তাদেরকে কিছু দেবে (মুসলিম)। ”
উপরের আলোচনা হতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, যাকাত বা সদকা এবং কুরবানীর চামড়া দান করার উত্তম খাত হলো ফকির ও মিসকীন। আর অতি উত্তম হলো আপন আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যারা গরীব, এরপর হলো গরীব প্রতিবেশী। অতএব মাদ্রাসার নামে যারা কুরবানীর চামড়া সংগ্রহ করে তারা ধর্ম ব্যবসায়ী ছাড়া কিছুই নয়।
জেনে বুঝে যারা মাদ্রাসায় যাকাত এবং কুরবানীর চামড়া দান করবে, তাদের দান কবুল হবে না। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক স্থানে যাকাত/সদকা এবং কুরবানীর চামড়া দান করার তাওফিক দিন। আমিন!!!
http://twitlonger.com/show/n_1rpr38u
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।