রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দলের মধ্যে বিরোধের কারণে ওয়াশিংটনে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে যদি এই দুই দলের মধ্যে সমঝোতা না আসে, তা হলে মারাত্মক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত মার্কিন আইনপ্রণেতারা দুই দলের মধ্যে সমঝোতা আনার জন্য চেষ্টা করেছেন। এখনো তা অব্যাহত আছে। বর্তমানে বিপর্যয় এড়াতে এখন সাময়িক সমাধানের পথ খুঁজছেন আইনপ্রণেতারা।
প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান দলের রক্ষণশীলরা এখন পর্যন্ত কোনো রকম ছাড় দিতে রাজি নন। তাঁদের দাবি, রাষ্ট্রীয় ব্যয় হ্রাসের সমন্বিত উদ্যোগ এখনই নিতে হবে। তবে তাঁরা ‘ওবামা কেয়ার’ নামের সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিমা আইনের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধ প্রচারণার পরও যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিমার জন্য তালিকাভুক্ত হচ্ছে। যদিও তালিকাভুক্তির পদ্ধতিগত জটিলতার জন্য জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
গতকাল প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, রিপাবলিকানরা যদি দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে না পারেন, তা হলে অর্থনীতিতে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। ঋণসীমা বৃদ্ধির স্থায়ী সমাধানের পরিবর্তে সিনেটের প্রবীণ আইনপ্রণেতারা স্বল্পমেয়াদি সমাধান খুঁজছেন। আজ (গতকাল সোমবার) রাত পর্যন্ত এ সমঝোতায় রাষ্ট্রীয় ঋণসীমা আপাতত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা চলছে।
রিপাবলিকানরা শর্ত দিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তুকি হ্রাস এবং কর আইন নিয়ে কংগ্রেসে সমন্বিত প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিমা গ্রহণকারীদের ওপর রাষ্ট্রীয় ভর্তুকিতে কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে।
সাময়িক হলেও এ সমঝোতা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হ্যারি রিড ও রিপাবলিকান দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল।
ক্যানসাস থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান টিম হোয়েলসক্যাম্প বলেছেন, সিনেটের সমঝোতা প্রস্তাবে ভোট প্রদান করা আত্মসমর্পণের শামিল।
এদিকে আইনপ্রণেতাদের টানা সমঝোতাহীনতায় রাজ্য সরকারগুলোতে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। ফেডারেল তহবিলে চালু থাকা স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্যে ভর্তুকিসহ কল্যাণকর কর্মসূচি হঠাৎ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মিশিগান রাজ্যের বাজেট পরিচালক জন নিক্সন বলেছেন, বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য আপৎকালীন প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।
কিন্তু ঠিক কতটা বিপর্যয় দেখা দেবে, তা কেউ অনুমান করতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে ফেডারেল অর্থ বরাদ্দ বন্ধ হয়ে পড়লে কি অবস্থা দাঁড়াবে, তা নিয়ে উৎকণ্ঠিত রাজ্য সরকারগুলো।
এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ন্যাশনাল বাজেট অফিসার্সের পরিচালক স্কট প্যাটিসন বলেছেন, ‘আমরা ভীতির মধ্যে আছি, অজানা অধ্যায় কী ঘটতে পারে, তা আমাদের ধারণারও বাইরে। ’
মার্কিন অর্থনীতির সম্ভাব্য বিপর্যয় নিয়ে সারা বিশ্বে সতর্ক অবস্থা বিরাজ করছে। যুক্তরাজ্যের ব্যাংকগুলোকে আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়াতে চীনা নেতাদের ধারাভাষ্যে বলা হয়েছে, মার্কিন মুদ্রানির্ভর অর্থনীতির এখন ক্রান্তিকাল চলছে। যুক্তরাষ্ট্রবিহীন বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে এখন ভাবার সময় এসেছে বলে সিনহুয়া তাদের ধারাভাষ্যে মন্তব্য করেছে।
হোয়াইট হাউস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ট্রেজারি অফিসেও আপৎকালীন পরিকল্পনা নিয়ে তোড়জোড় চলছে।
নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান পিটার কিং বলেছেন, ‘বৃহস্পতিবারের মধ্যেই আমাদের সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে। ’ যথার্থ না হলেও একটা সমঝোতায় পৌঁছতেই হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।