পুরো জাতি চাচ্ছিল দুই দলের মধ্যে একটা আলোচনা ও সমঝোতা হোক। যাই হোক প্রধানমন্ত্রী ফোন করে দাওয়াত দিলেন। বিরোধী দলের সায় দেওয়া উচিত ছিল। আলোচনা ব্যর্থ হলে তারা আবার হরতাল দিতে পারত। সেদিন টেলিফোন আলাপ শোনার জন্য টেলিভিশনের সামনে প্রচণ্ড উৎসাহ নিয়ে বসে ছিলাম।
কিন্তু খুবই আশাহত হয়েছি। বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া শুনে মনে হলো যেন আমাদের সব আশার ওপর ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দেওয়া হয়েছে। রবিবার এসএ টিভির টকশো 'লেট এডিশন'-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান এ কথা বলেন। নঈম নিজামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক'র (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, নিমন্ত্রণকে অস্বীকার করে হরতাল শেষে ২৯ তারিখের পর আলোচনায় যাব ভাবলে পরিস্থিতি একরকম নাও থাকতে পারে।
এর মধ্যে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ওই সময় পর্যন্ত দাওয়াতের মেয়াদ নাও থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর নিমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার যাওয়া উচিত ছিল। সেখানে গিয়ে দাবি-দাওয়া বলতে পারত। হরতালও চলবে আবার আলোচনাও চলবে_ এটা বাস্তবসম্মত নয়।
সংলাপের জন্য একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। সেখানে পরিবেশকে আরও ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি বলেন, দুজনের প্রস্তাব দুই মেরুতে আছে। কিন্তু একটা জিনিস ধরে বসে থাকলে তো চলবে না। আলোচনার মাধ্যমে একটা মীমাংসায় আসতে হবে।
স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ আর গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন করাই মূল বিষয়। সেজন্য 'এটাই' হতে হবে বা 'ওটাই' হতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা থাকার যৌক্তিকতা নেই। সুশীল সমাজ থেকেও অনেক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আলোচনায় বসলে সেগুলো নিয়েও কথা বলা যেত। সমঝোতার মনোভাব থাকলে সমাধান অসম্ভব না।
সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, যারা ক্ষমতায় আছেন বা যারা যেতে চান উভয়ই মনে করছেন নির্বাচনে হারলে অসুবিধা আছে। তাই কেউ হারতে রাজি নন। সংবিধানের বাইরে কিছু করা যাবে না এটা অর্থহীন কথা। সংবিধান এমন কিছু না যা পরিবর্তন করা যাবে না। প্রয়োজনে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে।
আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেজর কোনো বিষয়ে হাত দেওয়া উচিত হবে না। একটা সেটেল্ড ম্যাটারকে আনসেটেল্ড করা ঠিক হবে না। এটা তুলে দিলে আগামীতে আমাদেরই ক্ষমতাসীনদের অধীনে নির্বাচনে যেতে হবে। তখন আমাদেরই চিৎকার করতে হবে। একই কথা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বলেছেন।
এখন এটা নিয়েই যত সমস্যা। সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনে আবার সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস সন্ত্রাসের জন্ম দেয়। আস্তে আস্তে এটা সংখ্যা ও ধরন দুই দিক দিয়েই বাড়ছে। সহিংসতায় সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে।
এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোই দায়ী। আমরা ভুক্তভোগী। একটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রশাসন চালানোই দুষ্কর। গত কয়েক বছর ধরে জিডিপি ছয় এর বেশি ছিল।
এবার তা ছয়ের নিচে নেমে এসেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেলে বেকার সমস্যা টাইম বোমা হয়ে দাঁড়াবে। ২০০৬ সালে যে পরিস্থিতি হয়েছিল তার চেয়ে ভয়াবহ অবস্থার দিকে যাচ্ছে দেশ। এতে কোনো দলেরই লাভ হবে না। আলামত খুব ভালো ঠেকছে না।
হরতালের পরও সংলাপ হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না।
বিভিন্ন সরকারের আমলে দলীয়করণের সমালোচনা করে এম হাফিজ উদ্দিন বলেন, কোনো কর্মচারী কবে কার আমলে ডিসি ছিল সেটা খুঁজে বের করে ওএসডি করে রাখা হচ্ছে।
আমার পরিচিত একজন অতিরিক্ত সচিব যিনি তার ব্যাচের ফার্স্ট বয়, অত্যন্ত মেধাবী, পিএইচডি করা মানুষ, তাকে চার বছর ধরে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। এই সংস্কৃতি জাতির জন্য খুবই ক্ষতিকর। গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ধর্মীয় উগ্রপন্থি তৎপরতা অনেকদিন ধরে দেখতে পাচ্ছি। সরকারের একার চেষ্টায় এটা দমন করা যাবে না, বিরোধী দলকেও এগিয়ে আসতে হবে। একজন যদি পেট্রোনাইজ করে তাহলে তো অন্যজনের পক্ষে তা দমন করা সম্ভব হবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।