যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।
ফরিদ উদ্দিন সাহেবের ড্রাইভার আসে নি আজ। প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার। এদিকে অফিসের সময়ও হয়ে যাচ্ছে— জরুরি মিটিং।
তিনি হাঁটতে শুরু করলেন। ঠিকমতো হাঁটতে পারলে এখনও বাস ধরা সম্ভব হবে।
এ-ক’দিন খুব ঝামেলা গেছে তার। কাজের মেয়েটা লাফ দিলো ছাদ থেকে। প্রথমে ফরিদ সাহেব ভেবেছিলেন— যাক, আপদ বিদায় হয়েছে।
কিন্তু পরে থানা-পুলিশ করতে গিয়ে ফাঁকে দিয়ে অনেকগুলো টাকা চলে গেল। এসমস্ত ভাবতে ভাবতে হাঁটছিলেন তিনি।
মিনিট পাঁচেক ধরে হাঁটছেন ফরিদ সাহেব। অথচ কেউ তাকে ঠিক লক্ষ্য করছে না। এমনকি পাশের বাসার আফজাল সাহেবও জগিং করতে করতে পাশ দিয়ে চলে গেলেন।
তাকালেন না পর্যন্ত। ফরিদ সাহেব মনে মনে বললেন— অকৃতজ্ঞ। একসময় এই লোককেই তিনি অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন বলে মনে পড়ে যায় তার।
বাসের কাছাকাছি চলে এলেন তিনি। মানুষজন উঠছে, নামছে।
তিনি এগিয়ে গেলেন দ্রুত। নয়তো সিট পাওয়া যাবে না। দাঁড়িয়ে থেকে যেতে হবে।
পেছন থেকে কয়েকজন লোক তাকে বেশ কয়েকটা ধাক্কা দিয়ে বাসে উঠে গেল। তিনি বিরক্ত হলেন।
এতো তাড়া কিসের লোকজনের!— তিনি ভাবলেন। বিরক্তির রেশ কাটতে না-কাটতেই আরেকজন তার প্রায় উপর দিয়ে চলে গেল। ফরিদ সাহেব এবার চটে গেলেন।
পায়ে কিছুটা লেগেছিলো। তিনি ‘হারামজাদা’ বলে পেছনে তাকালেন।
ভাগ্যিস তাকিয়েছিলেন। দেখলেন এক লোক তার দিকে তেড়ে আসছে প্রায়। নিজেকে বাঁচাতেই তিনি সরে পড়লেন একটু। বেশ অবাক হয়েই রাগান্বিত গলায় বললেন— ‘কী ব্যাপার? তোরা কি একাই বাসে উঠবি? আর লোকজনের কাজ নেই? বাস কি তোদের বাপের?’
ফরিদ সাহেব কথা শেষ করতে পারলেন না। তার ঘাড়ের উপর এসে পড়লো পুরনো স্যান্ডেল।
কয়েকজন ঢিল ছুঁড়ছে। হতভম্ব ফরিদ সাহেব চিৎকার করতে লাগলেন।
ইতোমধ্যে বাস পূর্ণ হয়ে গেছে। বাস ছাড়ার সময় হয়ে গিয়েছিলো। বাস ছেড়ে দিলো।
বাস ছেড়ে দিতেই ফরিদ সাহেব ওঠার শেষ চেষ্টা করলেন। আজ জরুরি মিটিং। বাসের পেছন-পেছন দৌড় লাগালেন। কিন্তু উঠতে পারলেন না।
প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হলো তার।
এমন ব্যাপার তার জীবনে আর কখনো ঘটেনি। তিনি ঠিক করলেন বাসায় ফিরে যাবেন। মিনিট পাঁচেক হেঁটে আবার বাসায় গেটের সামনে এলেন। গেট বন্ধ। দারোয়ান ঝিমাচ্ছে।
ফরিদ সাহেব ডাকাডাকি করলেন। গেটে ধাক্কাধাক্কি করলেন। কিন্তু কেউ গেট খুলতে এলো না। এবার তার রাগ সমস্ত সীমারেখা অতিক্রম করে ফেললো। তিনি প্রকাণ্ড সব লাথি মারতে লাগলেন গেটে।
সাথে অকথ্য গালিগালাজ।
একটু পর হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন তাকে জাল দিয়ে জড়িয়ে ফেললো। তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে ঢুকিয়ে ফেলা হলো লোহার খাঁচায়। ফরিদ সাহেব অবাক হয়ে দেখলেন খাঁচায় তার পাশে কুৎসিত চেহারার কয়েকটা কুকুর। খাঁচার ভেতরে এক জায়গায় লেখা ‘সিটি কর্পোরেশন হিংস্র কুকুর নিধন প্রকল্প’।
প্রথম প্রকাশ- শিল্প ও সাহিত্য-বাংলানিউজ২৪ ডট কম ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।