গত দেড় বছর ধরে একটা জিনিসের
অভাব খুব বেশী বোধ করছি, তা হল
একটা ঘর। আমার নিজের ঘর। একান্তই
নিজের। যে ঘরের সব কিছুই
থাকবে আমার। আমার নিজের মত
করে সাজান (হলই বা একটু
অগোছালো) , আমার নিজস্ব জগত।
কাপড় টা একটু মেলে দিলে,
প্যান্টটা মেঝেতে পড়ে থাকলে ,
কিংবা বইটা খাটের এক
কোণে ছুড়ে ফেলে চশমাটা মাথার
কাছে রেখে এলোমেলো হয়ে
খাটে আড়াআড়ি ভাবে ঘুমালে
কারও কিচ্ছু
আসবে যাবে না সে ঘরে। কেউ হঠাত
করে ঢুকবে না। কাজের
ছলে এসে বিরক্ত করার সুযোগ
পাবে না কেউ। আমি থাকব ঐ ছোট্ট
যায়গাটার একচ্ছত্র অধিপতি। আমার
ইচ্ছায় সবকিছু চলবে।
ইচ্ছার
বাহিরে একটা ধূলিকণাও স্থানচূত
হবে না ওখানকার ....
আমার এরকম একটা রাজত্ব ছিল। খুব
বেশি বড় ছিল না, তবে একটানা সাত
বছর রাজ করেছি সেখানে। এখন আর
নেই। হাতছাড়া হয়ে গেছে।
আমি ছাড়তে চাই নি, আমাকে বাধ্য
করা হয়েছে।
আমার শরীর, মানসিকতার পরিপুষ্টি,
কৈশোরের সকল কর্মকান্ডের নীল
নকশা অংকিত
হয়েছে সেখানে বসে। কত যে অম্ল
মধুর আবেগ, দুষ্টামির সূত্রপাত
এবং বিনাশ হয়েছিল... কত স্বপ্ন, কত
আশা জন্ম নিয়েছিল সেখানে,
আবার কত আকাশ কুসুম কল্পনা মুখ
থুবড়ে পড়েছে তার ইয়াত্তা নেই। কত
মুখ উকি দিয়ে গেছে জানালায়। কত
হাসির শব্দে কেপেছে হৃদয়। কত নির্ঘুম
রজনীর সমাপ্তিতে পাখির
কূজনে চোখে নেমেছে নিদ্রা।
কতরাত জেগেছি বৃষ্টির গান শুনে।
কতবার
রাতদুপুরে খুলে গেছে জানালার
কপাট, শুকতে চেয়েছি জোছনার
ঘ্রাণ। কত বাদল ঝড়া, জোছনা সিক্ত
রাত্রিতে আবৃতি করেছি রোদের
কবিতা। কিংবা ঠা ঠা রৌদ্রের
দুপুরে খুঁজেছি শিশিরের শব্দ...
কত প্রেম, কত ভালবাসা, কত
যে মায়ার খেলা দেখলাম
সেখানে বসে।
কলি ফুটতে না ফুটতেই ঝড়ে গেল কত
ফুল চোখের সামনে।
কত বালিকার
উদ্ধত পথচলা, মুচকি হাসি,
বাকা চাহনি, নুপুরের নিক্কন, হাই
হিলের খট খট শব্দ শুরু হয়ে শেষ
হয়ে যেত... জানালায় বসে সব টের
পেতাম। ওখানে বসলে পাড়ার
কোথায় কী হচ্ছে সব তথ্যই যেন
কিভাবে চলে আসত আমার কাছে।
দিন শেষের সেই আশ্রয় স্থলটা এখন
অন্য জনের দখলে। আমার অধিকার
হারিয়ে গেছে ওটার উপর থেকে।
ইচ্ছামত ওটাকে আর
সাজাতে পারি না।
আনন্দঘন স্বপ্ন
দেখে মাঝরাতে জেগে উঠতাম
যেখানে, ভয়ংকর
স্বপ্নে কেপে উঠতাম যেখানে, সেই
নির্ভরতার জায়গা থেকে আজ অনেক
অনেক দূরে। খুঁজে ফিরছি সেইরকম
আরেকটা ঠিকানা। জানি পাব না।
তারপরও, অর্থহীন ছোটাছুটি...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।