সব সৌন্দর্য এবং সব সুখের মূল সু-স্বাস্থ্য। সু-স্বাস্থ্য ছাড়া আমাদের সব আয়োজনই বৃথা। তাই সবার আগে সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। তারপর অন্যগুলো এমনিই চলে আসবে; যেমন কান টানলে মাথা আসে। আর এই সু-স্বাস্থ্যের জন্য চাই সু-নিয়ম।
খাবারের পুষ্টিমান ও পুষ্টি গ্রহণের অভ্যাস বিষয়ে মোটামুটি সবাই জানে। কিন্তু খাবার খাওয়ার সময় বা পদ্ধতি সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জ্ঞাত নন।
সুস্থভাবে বাঁচার জন্য সঠিক নিয়মে খাদ্য গ্রহণ করা উচিত৷ সম্প্রতি চীনের থিয়ান চিন পুষ্টি সোসাইটির বোর্ড অব চেয়ারম্যান ফু চিন রু এবং চীনের মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চাং হু তেসহ বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ খাবার খাওয়ার সময় কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
খাওয়ার সময় নিচের উপদেশগুলো মেনে চললে অনেক অসুখ থেকে দূরে থাকা যায়:
নিজের কর্মকান্ড অনুযায়ী খাবার পরিকল্পনা করা ভীষণ জরুরি। গাড়ি বেশি চালালে যেমন বেশি পেট্টোল লাগে, ঠিক তেমনি মানুষের কাজের চাপ বেশি থাকলে শক্তি বেশি লাগে।
খাবারের প্রয়োজনও বেড়ে যায়। তাই যখন বেশি সক্রিয় থাকবেন তখন বেশি খেতে হবে এবং কম সক্রিয় থাকলে কম খাবার গ্রহণ করা উচিৎ। তবে কখনোই একসঙ্গে অতিরিক্ত খাবার খাবেন না, পেটের কিছু অংশ খালি রেখে খাওয়া শেষ করবেন - এটা স্বাস্থ্যকর৷ প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া উচিত৷ সময়মতো খাবার খেলে হজম প্রক্রিয়া ভালো হয় যা স্বাস্থের জন্য ভালো৷ অসময়ে খাদ্য গ্রহণ করলে পাকস্থলীর হজম করতে অসুবিধা হয়৷ এর ফলে বদহজম বা এসিডিটির সমস্যা হয়ে থাকে। তা ছাড়া ৪-৬ ঘণ্টা পরপর খাবার খাওয়া উচিত। সাধারণত মিশ্র খাবার পেটে ৪-৫ ঘণ্টার মতো কার্যকর থাকে।
এ সময়ের চেয়ে বেশি সময় না খেলে বা এ সময়ের চেয়ে ঘন ঘন খেলে সেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। খালি পেটে দুধ, দই, আলু প্রভৃতি খাওয়া ঠিক নয়।
দিন যত গড়ায় শরীরের পরিপাক হারও তত বেড়ে যায়। সূর্য ডুবে যাওয়ার পর পরিপাক হারও কমতে থাকে। ফলে বিকেলের চেয়ে সকালে খাবার-দাবার অনেক বেশি লাগে।
সেজন্য সুস্থ, সুন্দর থাকতে হলে ঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ খাবার খাওয়া খুব জরুরি। সকালে নাস্তা কখনই বাদ দেবেন না। সকালে বের হওয়ার আগে তৃপ্তি করে খান। কাজে বল পাবেন। সকালে উঠেই বেড টি বা কফি খাওয়া যাদের অভ্যাস তারা এটিকে ছাড়ুন।
কারণ রাতে যখন আমরা ঘুমাই তখন আমাদের রক্তে চিনির মাত্রা নেমে যায় এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীরের নার্ভ ও ধমনী সংকুচিত অবস্থায় থাকে। ফলে সকালে আমরা দুর্বলবোধ করি। তাই আমাদের উচিত, এমন খাবার খাওয়া যা রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। সকালে উঠেই চা খেলে শরীর এক ধাক্কায় জেগে ওঠে। ফলে হৃদস্পন্দনের হার, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার এবং রক্তচাপ তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে।
তৈরি হয় মানসিক চাপ। নাশতার সময় হালকা গরম বা উষ্ণ খাবার খাওয়া উচিত। এ সময় ঠাণ্ডা কিছু খেলে আকস্মিক খিঁচুনিজাতীয় সমস্যা হতে পারে।
নাস্তার পর পরই চা পান করা উচিত নয়। এ সময় চা পান করলে পাচকরস তরলিত হবে এবং তাতে হজমের সমস্যা হবে।
তাছাড়া চা বা কফি পুষ্টির কোন জোগান দেয় না। শরীরে ক্যালরি ঘাটতি তৈরি করে। সেজন্যে প্রথমে নাস্তা করুন, তারপর চা খান। খাওয়ার আধা ঘণ্টা পর চা পান করা ভালো। আধা ঘণ্টা পর চা পান করলে তা হজমের পাশাপাশি পেটকে জীবাণুমুক্ত রাখতেও সাহায্য করবে এবং শরীর ও মন দুই-ই ভাল থাকবে।
প্রতিদিন সুষম খাদ্য গ্রহণের চেষ্টা করুন৷ খাবার নির্বাচনে লক্ষ রাখবেন, যাতে খাদ্যের ছয়টি উপাদানই বজায় থাকে৷ প্রতিদিনের খাবারে যেন কিছু পরিমাণ আঁশ জাতীয় খাবার থাকে৷ দৈনিক একবেলা আটার রুটি খাওয়ার অভ্যাস করুন- এটা আঁশ জাতীয় খাবার, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে৷ দৈনিক কমপক্ষে একটি করে ফল খেতে ভুলবেন না৷
দীর্ঘ সময় ধরে শাকসবজি রান্না করা থেকে বিরত থাকুন। এতে ভিটামিন অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়৷নষ্ট হয়ে যাওয়া শাকসবজি ও ফলমূল দিয়ে খাবার তৈরি করবেন না৷ এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং ক্ষেত্রবিশেষে রক্তে বিষক্রিয়া বা ফুডপয়জনিং হয়ে মৃত্যুর হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর পরিবেশে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে এবং দুই খাবারের মাঝখা্েন বাড়তি কোনো খাবার খাওয়া ঠিক নয়৷ এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷ দুই খাবারের মাঝখানে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে৷ পানি পান করলে দেহ থাকবে সতেজ, তরতাজা এবং শরীরকে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে৷ চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন এবং নিরামিষের দিকে নজর দিন৷
খাওয়ার সময় কোমর ও পিঠ সোজা রাখা উচিত। খেতে বসে অনেকেই শরীরটা একটু হেলিয়ে-দুলিয়ে আরামে রাখতে পছন্দ করেন। এটা কিন্তু অন্ননালি ও পেটের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে এবং হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে।
এছাড়া ছোটখাটো টেবিল বা সোফায় দীর্ঘক্ষণ ধরে খেতে থাকলে পেটের ওপর চাপ পড়ে হজমে সমস্যা হয়। খাওয়ার সময় শরীরের সঠিক অবস্থান হবে কোমর ও পিঠ সোজা রাখা, যাতে অন্ননালি ও পেটের ওপর কোনো চাপ না পড়ে।
তা ছাড়া খাদ্য ভালোভাবে চিবিয়ে এবং ধীরে ধীরে গিলে খেতে হবে। তাড়াহুড়া করে খাওয়া উচিত নয়৷ খাওয়ার পর পরই কিছু সময় বিশ্রাম নেয়া ও মস্তিষ্কের ওপর চাপ পড়ে, এমন কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। খাওয়ার পর শরীরের রক্ত চলাচল হজম প্রক্রিয়ার কাজে ব্যবহার হয়।
মস্তিষ্কের ওপর চাপ পড়ে এমন কাজ করলে তা মানসিক উত্তেজনা বৃদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে তুলতে পারে। সেজন্য খাওয়ার আধা ঘণ্টা পর কাজে নামা উচিত।
শুতে যাওয়ার ঠিক দু'ঘণ্টা আগে খাওয়া শেষ করুন। সন্ধ্যা থেকেই খাওয়া কমিয়ে দেয়া উচিত। সাধারণত সন্ধ্যাবেলার দিকে আমরা কাজ শেষ করে বিশ্রাম করতে শুরু করি।
টিভি দেখা ও বই পড়ার জন্য তো বেশি ক্যালরি খরচ হয় না ফলে খুব বেশি খাওয়ারও প্রয়োজন নেই। সবচেয়ে ভাল হয় যদি সন্ধ্যা ছ'টা-সাড়ে ছ'টা নাগাদ ভাল করে খেয়ে নিয়ে রাতের দিকে হালকা খাবার খান। তাহলে শুতে যাওয়ার আগেই খাবার ঠিকমতো হজম হয়ে যাবে। এতে ঘুম ভাল হবে। শরীর সহজে তার নিজের কাজ করতে পারবে যার মধ্যে ফ্যাট বার্ন করা অন্যতম।
রাতে ঠাণ্ডা খাবার খাওয়া ঠিক নয়। সন্ধ্যার পর থেকে বিপাক প্রক্রিয়া নিস্তেজ হতে শুরু করে। তাই এ সময় ঠাণ্ডা কিছু খেলে তা ক্লান্তি দূর করার ক্ষেত্রে বা ঘুমের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
খাওয়ার সময় দুঃখের কথা বলা ঠিক নয়। এ সময় কথা বললে খাদ্য চিবাতে কম সময় পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, খাওয়ার সময় জটিল ও দুঃখের বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে তা হজমের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। খাওয়ার পর সঙ্গীত শোনা ও হালকা হাঁটাহাঁটি করা সবচেয়ে উত্তম।
আশা করি সু-স্বাস্থ্যের জন্য উপরোক্ত পরামর্শ সহায়ক হবে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।