গেন্দু মিয়ার চরিত্র – ফুলের মতন পবিত্র!
কালো রাত
----------
(১)
রাস্তা থেকে দেখা যায় ঘরটা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক অখ্যাত শহরের হাইওয়ে ঘেঁষে নেমে গিয়েছে এক ছোট রাস্তা। সেই রাস্তা ধরে ত্রিশ কদম আগালে হাতের ডানে পড়ে সেই বাড়ি। আর রাস্তা থেকে দেখা যায় দোতলার সেই ঘর।
সেই ঘরে বসেছে ওরা তিনজন।
ডেভিড, কাদের আর মুসা। আজকে রাতের অপারেশনের প্লান আঁটছে তারা। কথা বলছে দলের নেতা ডেভিড। বেশ খর্বাকৃতির বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বাকি দু'জন দেখতে হুবহু একরকম। মাস তিনেক হয়ে গেলো, ডেভিড এখনো দু'জনকে আলাদা করতে পারে না।
চেহারার কাটছাট, গলার স্বর, কথা বলার - চলা ফেরার ভঙ্গি হুবহু এক। নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মানুষ মনে করলেও ডেভিড যেন এদের সামনে কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।
ডেভিড জানায় প্ল্যানটা, সে সব জোগারযযন্ত্র করে রেখেছে। ভাড়া করা কস্টিউম চলে এসেছে, যন্ত্রপাতি ঠিক আছে, এখন শুধু সন্ধ্যা নামার পালা। আজ রাতে একটা বাড়ি টার্গেট করা হয়েছে।
প্লাম্বার হবার সুবাদে ডেভিডের প্রায়ই যাওয়া আসা হয় এই বাড়িতে। কাজেই কী পরিমান টাকা পয়সা পাওয়া যাবে একটা হিসেব করে রেখেছে সে।
এখান থেকে দুই ব্লক পরে বুড়ি মার্গারেটের বাড়ি। বুড়ির স্বামী বছর চারেক আগে মারা যাবার পর থেকে সে একাই থাকে। ছেলে মেয়ে দুটো আলাদা হয়ে যাবার পর প্রথম প্রথম ক্রিসমাসে, নিউ ইয়ারে কার্ড পাঠাতো, এখন তাও বন্ধ।
বুড়ির ভালোই টাকা পয়সা আছে। এককালে থিয়েটারে অভিনয় করে কামিয়েছিল। যৌবনের শেষ প্রান্তে এসে ছোটখাট দু’একটা কম বাজেটের সিনেমাতেও কাজ করেছে সে। পুরনো ধারার মানুষ হওয়ায় এখনো সে বাসাতে ক্যাশ রাখে। উপযুক্ত টার্গেট।
তবে পুরো প্ল্যানটা ডেভিড বলেনি তার সাথের দু’জনকে। তার কাজের ধরণ অনেকটা এরকমই। এই লাইনের প্রথম শিক্ষা হচ্ছে নিজেকে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করতে নেই।
পা টা নাড়িয়ে প্যান্টের বাম পকেটে রাখা পিস্তলটা আরেকবার অনুভব করে নিলো ডেভিড। সব কিছু ঠিকঠাক মত হলে কোন বুলেট খরচ করতে হবে না।
ঠিক দশটার সময় সিন্থিয়া মিনিট্রাকটা নিয়ে এসে দাঁড়াবে পিটার সাহেবের বাড়িটার সামনে। এরপর হাইওয়ে ধরে বর্ডার পেরিয়ে সোজা মেক্সিকো।
মনে মনে প্ল্যানটা নেড়ে চেড়ে দেখছে ডেভিড। সব ঠিক আছে, এখন শুধু সন্ধ্যা নামার অপেক্ষা।
--------
(২)
সন্ধ্যা মিলিয়ে রাত নামলো।
ছোট রাস্তাটার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িগুলোর সামনে আলো জ্বলে উঠছে এই দিনের গৃহসজ্জার উপকরণ গুলোতে। তারা তিনজন দাঁড়িয়ে আছে বুড়ি মার্গারেটের বাড়ীর সামনে। ডেভিড পড়েছে জোকারের কস্টিউম, মুসা আর কাদের দুই ভাইয়ের একজন ব্যাটম্যান, আর আরেকজন রবিন – কোনটা কে বলা মুশকিল। সাড়ে তিন ফুট উচ্চতার এই দুইজন দাড়ি-গোফ চেঁছে এসেছে, হঠাৎ করে দেখলে বয়স আন্দাজ করার উপায় নেই।
সিগারেটে শেষ টান দিয়ে অবশিষ্টটা ছুঁড়ে ফেলে দিতে গিয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো সেটার দিকে।
হ্যাঁ ব্র্যান্ডটা তো ঠিকই আছে। কিন্তু কেমন যেন গলায় একটু খুশখুশে লাগছে।
ডোর বেলটা বেজে উঠতেই ভেতর থেকে বুড়ি দরজা খুলে দিলো।
“হ্যালো ম্যাম! ট্রিক অর ট্রিট?”
মুচকি হেসে বুড়ি বলে উঠলো “ট্রিট। এসো ভেতরে এসো।
“
তিন জন ঢুকে পড়লো ভেতরে। কিচেনে নিয়ে গিয়ে ওদের বসতে বললো বুড়ি। এমনিতে দরজা থেকে হাতে চকলেট ধরিয়ে বিদেয় করে দেবার কথা থাকলেও ডেভিডকে দেখে রান্নাঘর পর্যন্ত আসতে বলে বুড়ি। আসলে একা একা থাকে তো, পরিচিত কেউ আসলে খুব খুশি হয়।
“মার্গারেট তোমার ছেলে এবার কার্ড পাঠিয়েছে?”
এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বুড়ি বলে, “নাহ্ কবেই ভুলে গেছে আমাকে।
আমি বেঁচে আছি কিনা তাই ই হয়তো জানে না। “
“মেয়ে?”
আবারো দীর্ঘশ্বাস।
বুড়িকে ফাঁদে ফেলার এহেন সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করলো না ডেভিড।
“মার্গারেট, তোমার জন্য আমার এই ছোট্ট বন্ধুরা কিছু চকলেট এনেছে। খেয়ে দেখবে?”
একটা মিষ্টি হাসি ফুটলো বুড়ির ঠোঁটে।
হাত বাড়িয়ে তুলে নিলো একটা চকলেট। মুখে দিয়ে কিছুক্ষন চিবোতেই হঠাৎ করে মাথা ঘুরে উঠলো তার। তাল সামলাতে হাত দিয়ে খাবার টেবিলটা ধরে ফেললো সে।
“কোন সমস্যা?”
“না না ঠিক আছি। ব্লাড প্রেশারটা মনে হয় একটু ঊঠা নামা করছে।
আচ্ছা, এতো মজার চকলেট তো অনেকদিন খাইনি। “
সিন্থিয়া যে ফার্মেসিটাতে কাজ করে ওখান থেকে কড়া একটা ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলো এই চকলেট গুলোতে। সেই মিষ্টি সিরাপে হয়তো এজন্য আরো বেশি কড়া মিষ্টি লাগছে। আরো একটা তুলে নিলো বুড়ি, তারপর আরো একটা। একটু চিন্তিত হয়ে পড়লো ডেভিড।
আবার বেশি হয়ে যাচ্ছে না তো। সিন্থিয়া অবশ্য ভরসা দিয়েছিলো যে চার পাঁচটা তে কিছু হবে না। তারপরও দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ে না।
বোঝা যাচ্ছে ওষুধে কাজ হচ্ছে। বুড়ি আস্তে আস্তে হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লো।
তারপর কেমন যেন হাঁসফাঁস করতে করতে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো। সব নড়াচড়া বন্ধ দেখে ভয়ে ভয়ে বুড়ির নাকের কাছে আঙ্গুল রেখে হতভম্ব হয়ে ডেভিড দেখলো নিঃশ্বাস বন্ধ। বুড়ি দেহে প্রাণ নেই!
-------
(৩)
একটু পরে বুড়ির দেহটা টেনে নিয়ে সিঁড়ির গোড়ায় মেঝেতে নামিয়ে রেখে ডেভিড দু’জনকে নিয়ে গেলো বুড়ির বেডরুমে। অনেক চেষ্টা করে মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছে ডেভিড। বুড়িকে মেরে ফেলা পরিকল্পনার অংশ ছিলো না।
তবে এখন আর ফেরার উপায় নেই। বুদ্ধি করে পিস্তলটা সাথে এনেছিলো বলে নিজেকে বাহবা দিলো সে। তবে কাদের আর মুসাকে মোটামুটি নির্লিপ্ত থাকতে দেখে একটু অবাক হল। এরা লকার খোলার এক্সপার্ট। হয়তো জাত ক্রিমিনাল।
এরকম ঝামেলার সময়েও নার্ভ বরফের মত শীতল রাখতে পারে।
আধা ঘন্টা পর চকলেটের থলেতে আলমারি ঝেড়েপুঁছে সব গুলা ডলার আর বুড়ির স্বামীর দেয়া হীরের নেকলেসটা নিয়ে তিনজন একসাথে নেমে আসা শুরু করে সিঁড়ি বেয়ে। মাঝ বরাবর এসে ডেভিড খেয়াল করলো সিঁড়ির গোড়ায় বুড়ির দেহটা নেই। চমকে উঠলো সে। ব্যাপার কী? কাদের আর মুসা তো তার সাথেই ছিল।
অচেতন দেহ তো আর নিজে নিজে সরে যেতে পারে না। কাদের আর মুসাও মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। লকার খোলার সময় ডেভিড দু’মিনিটের জন্য ওয়াশরুমে গিয়েছিলো। কিন্তু সে দু’জনের কথা বার্তা আর লকারের খুটখাট শব্দের ওপর কান রেখেছিলো। সে নিশ্চিত ওরা কেউ ঘর ছেড়ে বের হয়নি।
এতো অল্প সময়ে নিচে নেমে বুড়ি দেহটাকে সরিয়ে আবার ওপরে ফিরে আসা সম্ভব না। এর অর্থ একটাই হতে পারে - বুড়ি নিজেই উঠে গিয়েছে।
সন্তর্পনে নিচে নেমে এসে লিভিং রুমে উঁকি মারলো ডেভিড। কেউ নেই। এমন সময় রান্নাঘর থেকে পানির কল ছাড়ার আওয়াজ ভেসে এলো।
রান্নাঘরে পৌঁছতেই সে দেখলো আলো নেই। অন্ধকারে বুড়ি কল ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়ানো ভঙ্গিটা একটু অদ্ভুত। একেবারে ঋজু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বুড়ি।
তার পায়ের শব্দেই বোধহয় মার্গারেট পেছনে ফিরে তাকালো।
কেমন যেন অদ্ভুত চাহনি তার। চোখ দু’টো লাল লাল। ডেভিডের হাতে ডলারের বস্তা দেখেও যেন দেখলো না সে। খর খরে গলায় সে বলে উঠলো, “কেমন আছো ডেভিড?” এরপর বুড়ি তার দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করলো। হঠাৎ করে ডেভিড লক্ষ করলো বুড়ির হাতে একটা কিচেন নাইফ।
বুঝে ফেললো ডেভিড যে বুড়ি সব জেনে গিয়েছে। বুড়ি মরেনি, তার জ্ঞান ফিরে এসেছে। এখন আর বাঁচার উপায় নেই। মাথা খারাপ হয়ে গেলো ডেভিডের। কস্টিউমের জ্যাকেটের নিচে লুকিয়ে রাখা তোয়ালে পেঁচানো পিস্তলটা বের করে ভেতরে হাত ঢুকিয়ে কোন ভাবনা চিন্তা না করে ট্রিগার টেনে দিলো।
ভোঁতা একটা শব্দ হল। শব্দের সাথে সাথে বুড়ি ঘুরে গেলো। তারপর টেবিলটা ধরে আস্তে আস্তে উপুর হয়ে পড়লো মেঝেতে। লাল রক্তের একটা ধারা ছড়িয়ে পড়লো মেঝেতে।
পেছনে ফিরে ডেভিড দেখে মুসা আর কাদের তার দিকে এগিয়ে আসছে।
একজনের হাতে একটা পকেট ছুরি। ডেভিড জানতো এরকমই হবে। একটা খুনের দায়ে ফাঁসার মত বোকা কেউ নয়। পাঁচ হাত দূরে থাকতেই সে পর পর দু’বার ফায়ার করলো। ভোঁতা শব্দের সাথে লুটিয়ে পড়লো দু’জন।
যথেষ্ট হয়েছে। আর সময় নষ্ট করবে না ডেভিড। পিস্তলটা পায়ের কাছে শুয়ে থাকা দু’জনের একজনের হাতে গুঁজে দিয়ে বের হয়ে যেতে হবে। ব্যাপারটা এমন দেখাবে যে বুড়িকে মেরে লুটের ভাগ নিয়ে মারামারি করতে গিয়ে দু’জনই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। কস্টিউমের সাথে দস্তানা পরে আসায় তার আঙ্গুলের ছাপ থাকবে না।
সে অবশ্য জানে এটা দিয়ে পুলিশকে বেশিদিন বোকা বানিয়ে রাখা যাবে না। তারা অচিরেই ধরে ফেলবে যে এখানে তৃতীয় কেউ ছিলো, আর তারপরই খোঁজ পরে যাবে। তবে, কিছুক্ষন দেরি করিয়ে দিতে পারলেই কার্যসিদ্ধি। এখান থেকে মেক্সিকো সীমান্ত আট ঘন্টার রাস্তা। কাল ভোর নাগাদ পৌঁছে যাবে সেখানে, আর তারপর নাগালের বাইরে।
পরে থাকা ব্যাটম্যানের হাতে পিস্তলটা গুঁজে দিতে দিতে ডেভিড পেছনে পায়ের আওয়াজ শুনে চমকে উঠলো। ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকাতেই রীতিমত ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো ডেভিড।
একহাতে বড় সাইজের কিচেন নাইফটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মার্গারেট। পেটের কাছাকাছি জায়গাটা রক্ত জমে লাল হয়ে আছে। চোখে যেন এক অশরীরি দৃষ্টি।
তার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ভয়ের স্রোত নেমে গেলো। সারা জীবন যে ধারণাটাকে তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে এসেছে সেটাই কি আজ সত্যি হতে চললো? আজ হ্যালোইন। এই রাতে নাকি অতৃপ্ত প্রেতাত্মারা নাকি নরক ছেড়ে এসে মানুষের কাছাকাছি ঘুরে বেড়ায়। আর এই রাতে কারো অপঘাতে মৃত্যু হলে তার দেহটা দখল করে নেয় সেই প্রেতাত্মারা।
খরখরে গলায় মার্গারেট বলে উঠলোঃ “এবার আর পার পাবে না ডেভিড।
আমি ক্যাথী, মনে আছে তোমার?”
বিদ্যুৎ চমকের মতো মনে পড়ে গেলো ডেভিডের। বছর পাঁচেক আগের ঘটনা। তখনো তার হাত অতটা পাকেনি। ক্যাথী নামের এক বুড়ির বাড়িতে প্লাম্বারের কাজ করতো। যথারীতি চুরি করতে ঢুকেছিলো সে একরাতে।
কিন্তু, ইনসমনিয়া গ্রস্থ ক্যাথীর ঘুমের ওষুধ সেদিন শেষ হয়ে যাওয়ায় সে জেগে ছিলো। অতর্কিতে চলে আসায় তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে পালিয়ে যায় ডেভিড। স্টেট ছেড়ে অন্য স্টেটে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করার সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়েও শক্ত অ্যালিবাইয়ের কারণে বেঁচে যায় সে। লোকালয়ের একটি পানশালা থেকে চার জন সাক্ষ্য দেয় যে সারা রাত ডেভিড তাঁদের সাথে ছিলো, জুয়া খেলেছে। চুরি চামারী জীবনে অনেক করেছে সে।
কিন্তু খুন ছিলো সেটাই প্রথম।
পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে আর ধারে কাছে থাকেনি সে। চলে গিয়েছিলো আরেক স্টেটে। তারপর আর বহু জায়গা ঘুরে এখানে এসে বসতি গাড়ে বছর খানেক আগে। সেই ক্যাথীর প্রেতাত্মা এতদিন পর এসে এভাবে দেখা দেবে সেটা সে স্বপ্নেও ভাবেনি।
একটা চিৎকার করে পেছন দিকে নিজের দেহটাকে টেনে টেনে সরালো ডেভিড। ক্যাথীর প্রেতাত্মা এগিয়ে আসছে। লিভিং রুমের উজ্জ্বল আলোয় জিক্ করে উঠলো হাতে ছোরাটা। হাঁউমাউ করে কেঁদে ফেললো ডেভিড। পালাতে হবে, যে করেই হোক।
উঠে দাঁড়িয়ে সদর দরজার দিকে ছুট দিলো। দরজার কাছে, বরং বলা উচিৎ যেখানে দরজা ছিলো সেখানে, এসে থমকে দাঁড়ালো সে। দরজা কোথায়? সেখানে এখন প্লাস্টার করা নিরেট দেয়াল। নিস্ফল আক্রোশে দরজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো সে। ধাক্কা খেয়ে উল্টোদিকে মাটিতে পড়ে গেল।
কাঁপতে কাঁপতে মাথা ঘুরিয়ে দেখল মুসা আর কাদের, তারাও উঁঠে দাঁড়িয়েছে, ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে তার দিকে।
ক্যাথীর গলা ভেসে আসছেঃ “আমি তোকে বাঁচতে দেবো না ডেভিড। এবার তুই আর পার পাবি না। তুইই ঠিক কর সব স্বীকার করে মাফ চাবি, নাকি আজ এখানেই আমাদের কাতারে এসে যোগ দিবি? বল আমাকে কিভাবে মেরেছিলি! বল!”
থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে পিছিয়ে যাচ্ছে ডেভিড। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যেতেই গুঙিয়ে উঠলো।
ফোঁপাতে ফোঁপাতে হাত জোর করে ক্ষমা চাইতে লাগলো ডেভিড। মস্তিষ্ক আর কাজ করছিলো না তার। বেঁচে থাকার তাড়নায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সে বলে গেলো পুরো ঘটনা। পাগলের মত মেঝেতে মাথা ঠুকতে ঠুকতে ক্ষমা চাইলো।
তারপর চোখ খুলে সে দেখলো একেবারে কাছে চলে এসেছে তিনজন।
বুঝলো ক্ষমা চেয়ে লাভ হয়নি। এবার আর তার নিস্তার নেই। জবাই দেয়ার আগে ফাঁদে পড়া পশুর মত গোঙাতে গোঙাতে বুঝলো সে চেতনা হারাচ্ছে। চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসলো।
--------
(৪)
টেপ রেকর্ডারটা হাতে নিয়ে ডেপুটি কমিশনার প্যাট্রিক সোয়াজী মাথা ঝুঁকিয়ে ধন্যবাদ জানালেন তার ডিপার্টমেন্টের সবচে’ উজ্জ্বল দুই নক্ষত্র ডিটেকটিভ ইয়াকুব আর ডিটেকটিভ ইউসুফকে।
তিনি অবশ্য এই নামগুলো উচ্চারণ করতে পারেন না – তিনি বলেন জ্যাকব আর জোসেফ। জমজ এই দুই ভাই বহুদিন ধরে তার ডিপার্টমেন্টকে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। এদের পরিকল্পনার কোন তুলনা নেই। এতদিনে ঝিমিয়ে পড়া ক্যাথেরিন পার্কার হোমিসাইড কেস আবার নতুন মোড় পেতে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে অবশ্য মিসেস মার্গারেট গ্রীনের একটা বিশেষ ধন্যবাদ প্রাপ্য।
ভদ্রমহিলা এককালে থিয়েটারে কাজ করতেন। যে ভয়টা তিনি ডেভিডকে দেখিয়েছেন তার তুলনা নেই।
মাস ছয়েক আগের কথা, পরিকল্পনাটা শুনে প্রাথমিক ভাবে নাকচ করে দিয়েছিলেন তিনি। এখনো তার করা মন্তব্যটা তার মনে আছে – “লজিস্টিকাল নাইটমেয়ার”! তবে দু’ভাই মিলে চেপে ধরায় এরকম আস্থাভাজন দু’জনকে আশাহত করতে তার মন সায় দেয়নি।
তারপর যা হল তা কল্প কাহিনীকেও হার মানায়।
তিন মাস ধরে একটু একটু করে গুছিয়ে নিয়েছে এ দু’জন। বুড়ি মার্গারেটকে রাজি করানো থেকে শুরু করে ডেভিডকে পরিকল্পনায় সাহায্য করা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে এরা সংশ্লিষ্ট ছিল। সপ্তাহ কয়েক আগে শুরু হয় পরিকল্পনার শেষ অংশটাকে বাস্তবায়নের কাজ। ডেভিডকে পিস্তল পকেটে নিয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখে তারা দু’জন আঁচ করতে পারে – প্রয়োজন হলে নিজের সাথীদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতেও পিছপা হবে না। তখনই, ঠিক করে অপারেশনের আগের দিন কৌশলে পিস্তলটা থেকে বুলেট সরিয়ে অবিকল নকল বুলেট ভরে দেয়া হবে।
আর যাতে ডেভিডের সন্দেহ না জাগে সে জন্য তিনজনই কৃত্রিম রক্তের থলে বহন করবে। সময় বুঝে হাত দিয়ে টিপে ফাটিয়ে দেয়ার জন্য। সিন্থিয়ার দেয়া চকোলেট গুলোও পরিবর্তন করে ওরাই। সব চেয়ে বড় মুশকিল হয়েছিল দরজাটা সরাতে। ডেভিডের চোখ এড়িয়ে নিচে চাকা লাগানো ইঁট গাঁথা দেয়ালটা তৈরি করে সিঁড়ির গোড়ায় লুকিয়ে রাখতে আর সময় মত টেনে বের করে জায়গা মত বসিয়ে দিতে অনেক সূক্ষ্ণ টাইমিং-এর দরকার হয়েছিলো।
প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকা ডেভিডের জগৎ ওলট পালট করে দিতে এই কৌশলটা ভয়ঙ্কর কাজ দিয়েছে।
ডেপুটি কমিশনার প্যাট্রিক একটা তৃপ্তির শ্বাস ফেলে গাড়িতে উঠে পড়েন। সিন্থিয়াকে পাকড়াও করা হয়েছে। সীমান্তে খবর পাঠিয়ে অপর সাহায্যকারী রোজেন-কেও ধরা হয়েছে। এদের সাক্ষ্য কেসটাকে মজবুত করতে কাজে দেবে।
প্যাট্রিক জানেন বিপাকে ফেলে আদায় করা ডেভিডের স্বীকারোক্তিটা আদালতে ধোপে টিকবে না, তবে এটাকে সূত্র ধরে এগিয়ে আরো প্রমাণ সংগ্রহ করে কেসটাকে জোরালো করতে হবে। সামনে অনেক কাজ।
--------
(৫)
ডেভিডকে হাতকড়া পড়িয়ে পুলিশের জীপটার পিছে ওঠানো হয়েছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার ঘোর এখনো কাটেনি। পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে ডিটেক্টিভ দু’জন ক্ষণিকের জন্য দাঁড়ালেন জীপটার পাশে।
মুচকি হেসে দু’জন সমস্বরে বলে উঠলেনঃ “ট্রিক অর ট্রিট?”
ডেভিডের মুখের অন্ধকারটা আরেকটু গভীর হল।
(সমাপ্ত)
পাদটীকাঃ
লেখালেখি খুব একটা আসে না। তবু সাহস করে একটু এক্সপেরিমেন্টাল একটা লেখা লিখে ফেললাম। কোন জায়গায় অসঙ্গতি দেখলে অনুগ্রহ করে জানাবেন। কৃতজ্ঞতা সহকার এডিট করে দেবো।
সময় নিয়ে পুরো গল্পটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। কেমন লাগলো জানাবেন। আপনার গঠন মূলক সমালোচনা আমাকে ভালো লিখতে উৎসাহিত করবে।
[আগে প্রথম দুই পর্ব দিয়েছিলাম, কিন্তু এখন একসাথে পুরোটা দিয়ে দিলাম বলে আগের পোস্টগুলো মুছে দিচ্ছি। ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।