এর মধ্যে উপকূলীয় শহর ট্যাকলোবানে এক হাজারের বেশি এবং সামার প্রদেশে অন্তত দুইশ’ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে ঘণ্টায় ৩৮৯ কিলোমিটার বেগে ফিলিপাইনে আঘাত হানে স্মরণকালের ভয়াবহ এ ঝড়। দ্বীপপুঞ্জের পূর্ব দিকে প্রথম আঘাত হেনে পশ্চিম বরাবর বয়ে যাওয়ার সময় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যায় প্রলয়ঙ্করী এ সুপার টাইফুন। এ সময় ৪৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় উপকূলীয় এলাকা। পাশাপাশি ভারী বৃষ্টিতে ঘটে ভূমিধসও।
শনিবার ফিলিপাইন রেড ক্রসের সেক্রেটারি জেনারেল গেনডোলিন প্যাং বলেন, ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাকলোবান ও সামার থেকে রেড ক্রসের স্বেচ্ছাসেবকদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে অন্তত ১২০০ মানুষ নিহতের কথা বলা হয়েছে।
“আমাদের রেড ক্রস টিমের সদস্যরা জানিয়েছেন, ট্যাকলোবানে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃতদেহ পানিতে ভাসতে দেখা গেছে। আর সামারে প্রায় দুইশ’ মানুষ নিহত হয়েছে,” রয়টার্সকে বলেন তিনি।
এসব এলাকায় মৃতদেহগুলো তীরে এনে গণনা শেষ হলে নিহতের সঠিক সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজধানীর ম্যানিলার ৫৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বের এই ট্যাকলোবান শহর।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাস্তায় রাস্তায় প্লাস্টিকে মোড়ানো মৃতদেহ সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে।
টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গেছে, ঝড়ে বিধ্বস্ত গাড়ি একটার উপর আরেকটা পড়ে আছে।
ট্যাকলোবানের বিধ্বস্ত জনপদ দেখে জাতিসংঘের দুর্যোগ মূল্যায়ন সমন্বয় দলের প্রধান সেবাস্তিয়ান রোডস স্ট্যাম্পা বলেন, “সর্বশেষ ভারত মহাসাগরে সুনামির পর এই মাত্রার ধ্বংসযজ্ঞ আমি দেখেছিলাম। ”
২০০৪ সালের ভূমিকম্প ও তার প্রভাবে সৃষ্ট সুনামিতে ক্ষয়ক্ষতির তুলনা করে একথা বলেন তিনি।
ফিলিপাইনের নৌবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডের কর্মকর্তা জিম আরিস আলাগো বলেন, ট্যাকলোবানের রাস্তায় অনেক হতাহত পড়ে আছে।
জলোচ্ছ্বাসে প্রায় পুরো শহর ভেসে যাওয়ায় বিমানবন্দরও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক এফ্রেন নাগরামা সিএনএনকে বলেন, বিমানবন্দরে ১৩ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার পানি উঠেছিল।
“এটা ছিল সুনামির মতো। বৃষ্টি, সাগরের পানি ও ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে আমরা বিমানবন্দরের জানালা দিয়ে পালিয়েছিলাম এবং প্রায় এক ঘণ্টা আমি একটি খুঁটি ধরে ছিলাম,” বলেন তিনি।
ফিলিপাইনের জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার মুখপাত্র মেজর রে ব্যালিডো বলেন, “শহরের প্রায় সব ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
অনেকগুলো পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মাত্র গুটিকয়েক ঘর-বাড়ি টিকে আছে। ”
এদিকে ঝড়ের পর ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে এখনো ফেরি ও বিমান চলাচল শুরু না হওয়ায় উদ্ধার তৎপরতায় কাঙ্ক্ষিত গতি আসছে না বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এছাড়া মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য কর্মকর্তাদের শুধু রেডিওর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
ঝড়ে সামার ও ট্যাকলোবান ছাড়াও অন্যান্য দ্বীপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পর্যটন নগরী সেবুতে অন্তত দুইজন, ইলোইলো প্রদেশে তিনজন এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় পালাবান প্রদেশের কোরোন শহরে অন্য তিনজন নিহত হয়েছেন বলে ফিলিপাইনের বেতারের খবরে বলা হয়েছে।
সেবুর বাসিন্দা লিনলিন গোলফান একটি টেলিভিশনকে বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি যে, ঝড়ো হাওয়া এতো শক্তিশালী হবে যাতে আমার ঘর ভেঙে পড়বে। ”
৫ মাত্রার ‘সুপার টাইফুন’ হাইয়ান দুর্বল হয়ে শনিবার ৪ মাত্রার ঝড়ে পরিণত হয়েছে। অবশ্য দক্ষিণ চীন সাগর হয়ে ভিয়েতনামে আঘাত হানার পথে এটা আবারো শক্তি সঞ্চয় করতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন।
গত বছর মিন্দানাওয়ের দক্ষিণাঞ্চলে টাইফুন ভোপার আঘাতে এক হাজার একশ’ মানুষ নিহত হওয়ার পাশাপাশি প্রায় একশ’ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাইয়ানই স্মরণকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। তবে এ সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে পূর্ববর্তী ঝড়ের তথ্য আরো খতিয়ে দেখার পক্ষে আবহাওয়াবিদরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।