চারদিকে সাজ সাজ রব। ইতিহাসের সাক্ষী হতে চায় সবাই। আগের দিনই দেশের প্রথম টেস্টের টিকিট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংকটি জানিয়ে দেয়, প্রথম দিনের খেলার সব টিকিট নাকি বিক্রি হয়ে গেছে। এ নিয়ে এন্তার হুলুস্থুল। টিকিট না পাওয়ার কারণে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচটি যদি মাঠে বসে দেখা না হয়, সারা জীবন গল্প করে বেড়ানোর মতো একটা ব্যাপার যে হাতছাড়া হয়ে যায়! টেলিভিশনে খেলা দেখাবে, কিন্তু তাতে ইতিহাসের সাক্ষী হতে চাওয়া ক্রিকেটপ্রেমীর পাত পূর্ণ হয় নাকি!
আজ থেকে ১৩ বছর আগের সময়টা অবতরণিকায় একটু তুলে আনা হলো।
ইতিহাস রচিত হওয়ার ওই মুহূর্তটিতে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের ব্যাপারটা অনেকটা এমনই ছিল। ভারতের বিপক্ষে দেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচটিতে জাতীয় দলের সাফল্য-ব্যর্থতার চেয়েও বড় ছিল ইতিহাস রচনার বিষয়টি। ইতিহাস মুখ্য বিষয় হলেও প্রত্যাশার ব্যাপারটিও একেবারে কম ছিল না সেদিন। জয়ের চিন্তা ছিল না। কিন্তু সম্মানজনক পারফরম্যান্সের বাইরে সেদিন অন্য কিছু ভাবতে রাজি ছিলেন না ক্রিকেটপ্রেমীরা।
তবে প্রত্যাশার বাইরে গিয়ে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের অনন্য পারফরম্যান্স ক্রিকেটপ্রেমীদের আনন্দের মাত্রা সেদিন বাড়িয়ে তুলেছিল অনেক গুণ। স্বপ্নের মতো তিনটি দিন শেষে চতুর্থ দিনে এসে টেস্ট ক্রিকেটের কঠিন জগতের সঙ্গে সেদিন বাংলাদেশের প্রথম পরিচয় ঘটে। প্রথম ইনিংসে ৪০০ রানও যে টেস্ট ম্যাচ ড্র করা কিংবা জয়ের জন্য যথেষ্ট নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটার ও দর্শকেরা খুব ভালোভাবেই সেদিন পেয়ে গিয়েছিলেন পাঠটা। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৯২ রানে অলআউট হয়ে বাংলাদেশ সেদিন বুঝতে পেরেছিল টেস্টে ভালো করতে আরও দীর্ঘ, বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে বাংলাদেশকে।
টেস্ট ক্রিকেটের তপ্ত ভূমিতে পা রাখার ত্রয়োদশ বার্ষিকীতে এসেও সেই পথচলা এখনো চলছে বাংলাদেশের।
আমরা শিখছি। নিজেদের দুর্বলতাগুলোকে ঠাহর করে এগিয়ে চলেছি নিরন্তর। ১৩ বছরে মাত্র পাঁচটা টেস্ট জয়ের রেকর্ড একটু মন খারাপ করে দিলেও প্রত্যাশার মাত্রাটা দিনকে দিন বেড়েই চলছে। গত দেড়-দুই বছরে টেস্ট ক্রিকেটে শক্ত পায়ে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে দারুণভাবে। ১৩ বছর আগে আমিনুল ইসলাম, আকরাম খান, নাঈমুর রহমান, মোহাম্মদ রফিকরা যে ‘রিলে রেস’টি শুরু করে দিয়ে গিয়েছিলেন, আজ সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাশরাফিরা সে রিলের ব্যাটনটি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দৃপ্ত আবেগে।
ব্যাটনের হাত-বদলে আগের চেয়ে বেড়েছে গতি, কিন্তু ফিনিশিংটা এখনো অনেক দূরে। আরও দুই একটি প্রজন্মকে হয়তো এই রিলের ব্যাটন টেনে নিয়ে যেতে হবে। সাকিব-মুশফিকরা ফিনিশিংয়ে পৌঁছে যেতে পারলে তা হবে এক পরম পাওয়া। নতুন প্রজন্ম না হয় নতুন রেসেরই গোড়া-পত্তন করবেন। নতুন ওই রেসটি হবে শীর্ষে পৌঁছানোর।
প্রত্যাশার সঙ্গে সমর্থনের মাত্রাটা যেখানে, সেখান থেকে ব্যর্থ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। দেশের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তিতে এ দেশের ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ মানুষের অবদান যে অনেক। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এই ভালোবাসা আর সমর্থনই যে আমাদের ক্রিকেটের বড় শক্তি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।