আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টেস্টে ১৪ বছরে পা রাখল বাংলাদেশ

১৮৭৭ সালে প্রথম টেস্ট খেলেছিল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ১৩৬ বছর আগে প্রথম টেস্টেই সেঞ্চুরি করেন চার্লস ব্যানারম্যান। সেঞ্চুরি করে ইতিহাসের পাতায় চিরস্থায়ী হয়েছেন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার। তখন কি তিনি জানতেন, ক্রিকেট এই উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হবে? কিংবা বাংলাদেশ টেস্ট খেলবে? নিশ্চিত, তিনি জানতেন না। জানবেনইবা কীভাবে? বিশ্ব মানচিত্রে তখন কোনো পরিচয়ই ছিল না বাংলাদেশের।

তখন ক্রিকেট খেলতেন শুধু শ্বেতাঙ্গরা। এখনো খেলেন। তারপরও ক্রিকেট এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা উপমহাদেশে। ক্রিকেট এখানে এমন এক উচ্চতায় আসীন, যার ধারে কাছে নেই অন্য কোনো খেলা। এক সময় বাংলাদেশে ফুটবলের ছায়ায় হাঁটতো ক্রিকেট।

কিন্তু ক্রিকেট এখন সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল টেস্ট ক্রিকেটে ১৩ বছর পেরিয়ে ১৪তে পা রেখেছে বাংলাদেশ। ২০০০ সালের এই দিনে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ভারতের বিপক্ষে।

বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের ১৫১২ নম্বর। এরপর গত ১৩ বছরে টাইগাররা টেস্ট খেলেছে ৮১টি।

জয় ৪টি, ড্র ১০টি এবং হার ৬৭টি। সবচেয়ে বেশি ১৪ টেস্ট খেলেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবং সবচেয়ে কম অস্ট্রেলিয়া, ৪টি। ঘরের মাঠে খেলেছে ৪১টি এবং বাইরে ৪০টি। দেশের মাটিতে জয় ১টি, ড্র ৭টি এবং বিদেশে জয় ৩টি, ড্র ৩টি। ৬৭ হারের মধ্যে ইনিংস ব্যবধানে হার ৩৫টি! টাইগাররা যে চারটি টেস্ট জিতেছে, তার দুটি করে জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

প্রথম টেস্টে ৪০০ রান করার পর বাংলাদেশ সব মিলিয়ে ৪০০ বা তারচেয়ে বেশি রান করেছে ১০ বার। সর্বোচ্চ ৬৩৮, গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সর্বনিম্ন রান শ্রীলঙ্কারই বিপক্ষে, ৬২। শয়ের নিচে অলআউটের লজ্জায় ডুবেছে আটবার।

অভিষেক টেস্টটি ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের মাইলফলক।

এর এক বছর আগে অবশ্য বড় আসরে ক্রিকেট খেলার স্বাদ নিয়েছিল টাইগাররা। ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ খেলেছিল। তখনো এদেশের ক্রিকেটাররা কেউ ভাবেননি পরের বছরই এলিট শ্রেণীতে নাম লেখাবেন তারা। তারপরও এক বছরের মধ্যেই এলিট শ্রেণীতে নাম লেখায় বাংলাদেশ। ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছিল টেস্ট ক্রিকেটের নবীনতম সদস্য দেশটি।

কিন্তু ইতিহাসের সোনালি পাতায় নিজেদের নাম খোদাই করে নিয়েছিলেন নাইমুর রহমান দুর্জয়, আমিনুল ইসলাম বুলবুল। অভিষেক টেস্টের অধিনায়ক ছিলেন দুর্জয়। অভিষেক টেস্টেই এই অলরাউন্ডার নিয়েছিলেন ১৪২ রানে ৫ উইকেট। যা চিরস্থায়ী এ দেশের ক্রিকেটে। বুলবুল খেলেন ১৪৫ রানের নান্দনিক ইনিংস।

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অভিষেক পাঁচ বছর পর প্রথম জয়ের মুখ দেখে। ২০০৫ সালে। চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ২২৬ রানে হারিয়েছিল জিম্বাবুয়েকে। ওই টেস্টে প্রথমে ব্যাট করে ৪৮৮ রান করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে ৩১২ রান করেছিল জিম্বাবুয়ে।

দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৪ রান করে স্বাগতিকরা। জবাবে ১৫৪ রানে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল আফ্রিকান প্রতিনিধিরা। প্রথম টেস্ট ড্র করেছিল একই সিরিজে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। প্রথম সিরিজ জয়ও ছিল সেটা। দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয় ২০০৯ সালে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। টাইগাররা সর্বশেষ জয় পায় গত এপ্রিলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ৭০ ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয় পেসার আল-আমিনের। এরমধ্যে সর্বোচ্চ রান সাবেক অধিনায়ক ও অধুনা নির্বাচক কাজী হাবিবুল বাশারের। বাশার ৫০ টেস্টে রান করেছেন ৩০২৬।

এখন পর্যন্ত তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি তিন হাজারের উপর রান করেছেন। সবচেয়ে বেশি ৬টি সেঞ্চুরি মোহাম্মদ আশরাফুল। সবচেয়ে বেশি শূন্য, ১৬টিও তার। এদেশের মাত্র দুজন ক্রিকেটার ১০০ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন। ৩২ টেস্টে সাকিব আল হাসানের উইকেট ১১৩ এবং মো. রফিকের ৩৩ টেস্টে উইকেট ১০০।

গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেন টাইগার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম এবং এটা বাংলাদেশের সেরা ব্যক্তিগত স্কোর। সেরা বোলিং সাকিবের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে নিয়েছিলেন ৩৬ রানে ৭ উইকেট।

টেস্ট ক্রিকেটে হ্যাটট্রিকের সংখ্যা ৪৪। এরমধ্যে বাংলাদেশের দুটি।

২০০৩ সালে পেশোয়ারে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন অলক কাপালি। ১০ বছর পর চট্টগ্রামে করেন সোহাগ গাজী। সোহাগ টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিক করেন তিনি। গত তের বছরে বাংলাদেশের অর্জন খুব বেশি নয়। এর মধ্যেই পেয়েছে টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান আশরাফুলকে।

পেয়েছে সাকিব আল হাসানের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। পেয়েছে একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিকম্যান সোহাগকে। সুতরাং প্রাপ্তি কিন্তু কম নয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.