আমি সত্য জানতে চাই
হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী বাংলাদেশের একজন আন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন্ কূটনৈতিক, সাবেক পরাষ্ট্র সচিব ও পরাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলা, ইংরেজী, উর্দু, ফরাসি এবং ইতালিয়ান ভাষায় পাশাপাশি আরবী, স্প্যানিশ, পর্তুগীজ, জার্মান এবং ইন্দোনেশিয়ান ভাষায়ও তার সম্যক দখল ছিল। তিনি সিলেটে-১ আসন (সদর- কোম্পানীগঞ্জ) থেকে ১৯৮৬ সালে ৩য় সংসদ, ১৯৮৮সালে ৪র্থ সংসদ এবং ১৯৯৬ সালে ৭ম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদ সদস্য নিবাচিত হন। ১৯৮৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার গৌরব অর্জন করেছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালের ১৪ই জুলাই তিনি সর্বসম্মতি ক্রমে জাতীয় সংসদের স্পীকার নির্বাচিত হন এবং ২০০১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন।
আজ এই কূটনীতিবিদের জন্মদিন। ১৯২৮ সালের আজকের দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিনে তার জন্য ফুলেল শুভেচ্ছা।
হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর ১৯২৮ সালের ১১ নভেম্বর সিলেট শহরের দরগা গেইটস্থ রশিদ মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুর রশিদ চৌধুরী ছিলেন অবিভক্ত ভারতের কেন্দ্রীয় বিধান সভার সদস্য এবং মাতা সিরাজুন নেছা চেীধুরী ছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য।
সিলেট সরকারী আলীয়া মাদ্রাসার হাই মাদ্রাসা সেকশনে প্রাথমিক শিক্ষা ও আসামে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপনের পর ১৯৪৭ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্ন করেন হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী। তারপর ইংলিশ বারে অধ্যয়ন করেন ও লন্ডনের ইনার টেম্পলের একজন সদস্য হন। লন্ডনেরই 'আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠান' থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেন। এছাড়াও, ম্যাসাচুসেটসের ফ্লেচার স্কুল অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। গ্রেট ব্রিটেন ও ইউরোপে পাকিস্তান ছাত্র সংসদের সভাপতি ছিলেন।
সে সুবাদেই তিনি যুক্তরাজ্যে প্রথম এশিয়ান স্টুডেন্টস কনফারেন্স আয়োজনে সক্ষমতা দেখান। ১৯৫৩ সালে তিনি পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন।
হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা কুটনৈতিক হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সময় নয়া দিল্লীস্থ বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হিসেবে ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর ভারতের সংসদ অধিবেশনে ভাষণ দেন। তখন তিনি নতুন দিল্লীতে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান ছিলেন।
এ সময় তিনি বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ে ৪০টির ও অধিক দেশের সাথে কুটনৈতিক তৎপরতা চালান। পরবতীতে তিনি জার্মান, সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত এবং পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী তার জার্মানীর বাসায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্য শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, জামাতা ড. ওয়াজেদ ও দুই নাতি-নাতানিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তার অনুরোধে জার্মান সরকার তার বাসার সামনে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলেন।
হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে জার্মানস্থ সোভিয়েত দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ রাখার অনুরোধ জানালেন ড. ওয়াজেদ।
তার ধারণা ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদেরকে আশ্রয় দেবে। তিনি বললেন আশ্রয় নিতে চাইলে সোভিয়েত কেন জার্মানিতেই হবে। এটা কোনো সমস্যা নয়। ইচ্ছা করলে লন্ডনেও যাওয়া যেতে পারে। একসময় ভারতীয় হাই কমিশনার মি. রহমান টেলিফোন করে শেখ পরিবারের সদস্যদের কুশলাদি জাইলে তিনি জানালেন তারা ভালো আছে, সে তাদের দেখাশোনা করছেন।
ভারতীয় হাই কমিশনার বললেন, মিসেস গান্ধী খুব খুশি হয়েছেন তিনি তাদের আশ্রয় দিয়েছি জেনে। ভারতীয় হাইকমিশনার মি. রহমান শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চাইলে তাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়। তবে সেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। এর পর ড.ওয়াজেদ সবাইকে নিয়ে গেলেন কার্লশোতে। সেখানে শিক্ষা সফরে এসেছিলেন তিনি।
কিছুদিন পর ভারতীয় হাইকমিশনার জানালেন, শেখ পরিবারের সদস্যগণ নিরাপদে, সুস্থভাবে বসবাস করছেন দিল্লিতে। এর পর ২৫ আগস্ট জেনেভা থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী টেলিফোনে জানালেন, মোশতাক সাহেব খুবই ক্ষিপ্ত। কেন তিনি হাসিনা-রেহানাদের আশ্রয় দিয়েছেন সেই জন্য। আবু সাঈদ তাকে বললেন, দয়া করে আপনি ঢাকা যাবেন না। গেলে বিপদ হবে।
দু’দিন পর ঢাকা থেকে বার্তা, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে ওএসডি করা হয়েছে। এর পর জল গেড়িয়েছে অনেক। ১৯৮৪ সালে হুমাযয়ুন রশীদ চৌধুরীকে উপ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা এবং ১৯৮৫ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়।
১৯৮৫ সালের ৩ জুলাই তিনি জাতিসংঘের ৪১তম সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন কমন ওয়েলথ সোসাইটি অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
বিশ্ব শান্তিকল্পে অনবদ্য কূটনৈতিক ভূমিকার জন্য ১৯৮৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের কলেজ অব উইলিয়াম অ্যান্ড ম্যারী থেকে 'মহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরস্কার' লাভ করেন হুমায়ু্ন রশীদ চৌধুরী। এছাড়াও তিনি 'উ থান্ট শান্তি পদক' লাভ করেছিলেন। প্রয়াত এই রাজনীতিবীদ ১৯৮৬-৮৭ সালে জাতি সংঘের সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেণ্ট হিসেবে দ্বায়িত্ব পালণ করনে।
২০০১ সালের ১০ই জুলাই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর মৃত্যুর পর তাকে সিলেট শহরে হযরত শাহজালাল (র) এর মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়েছে।
আজ এই কূটনীতিবিদের ৮৫তম জন্মদিন। জন্মদিনে তার জন্য ফুলেল শুভেচ্ছা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।