তুমি যদি ভাবো কোনও পরিবর্তন আনার জন্য তুমি খুব ছোট, তাহলে তুমি কখনও মশার কামর খাওনি। - আফ্রিকার প্রবাদ।
কি ভাই অবাক হলেন নাকি? আমি সিরিয়াস! যা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে কিছু দিনের মাঝে মেরুদণ্ড ভেঙ্গে জাতি হুরমুর করে পরে যাবে। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এমনিতেই কেউ সন্তুষ্ট না। "এই শিক্ষাব্যবস্থা শুধু মুখস্তবিদদের জন্য", "এইভাবে মেধা যাচাই করা যায় না" হ্যানত্যান সবাই বলতেই থাকে।
কিন্তু এর সাথে আরেকটি মাত্রা যোগ হয়েছে-প্রশ্ন ফাঁশ।
শিক্ষামন্ত্রীর ভাষ্যমতে দেশের তৃনমূল থেকে শুরু করে সবার জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এজন্য ক্লাস ৫ থেকেই বোর্ড পরীক্ষা শুরু! আচ্ছা যাক তা হতেই পারে। কিন্তু ক্লাস ৫ থেকে শুরু করে স্নাতক পর্যায়ে পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁশ? জেএসসি-এর প্রশ্ন ফাঁশের কথা সবাই জানে। আমার বন্ধু বান্ধব এমন কি আত্মীয়-স্বজন, বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা সবাই আমার জন্য দুইদিন পরপর ফাঁশ হওয়া প্রশ্নপত্র নিয়ে হাজির হয়।
আমার মা একটু আগে পর্যন্ত আমাকে প্রশ্ন দেখানর জন্য লেগেছিলেন, কিন্তু আমার সরকারি স্কুলের শিক্ষক কাকার কাছে যখন শুনলেন যে এর উপর নির্ভর করে পরীক্ষা না দেওয়াই ভালো, তখন খ্যান্ত দিলেন।
আচ্ছা আমি না হয় ছুটি পেলাম, অন্যদের কি হবে? ফাঁশ হওয়া প্রশ্ন সেটা আসল হোক বা নকল হোক, তা দেখতে আমার বিবেকে লাগে। কারণ আমি সব সময়ে বই-পত্রে (এমন কি পাঠ্যবইয়েও) পড়েছি, সততার পথে চলতে হবে। ব্লগে কম বেশী যা লিখেছি সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখেছি। এখন আমিই অন্যায় করব, এটা আমার চিন্তা করতে কষ্ট হয়।
কিন্তু আমার সহপাঠীরা কি করবে? সবাই কি বুঝবে? হয়ত। কিন্তু তাদের অভিভাবকরা? আমার বাবা-মা তো আমাকে প্রশ্ন না দেখান পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছিলিলেন না। তাদের কে কি বোঝানো সম্ভব যে তারা নিজের হাতে তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎকে হত্যা করছেন?
আমরা বর্তমানে শিক্ষা না, পরীক্ষার নাম্বারকে বেশী গুরুত্ত দেই। রোল ১ না হলে রোল বলতে লজ্জা পাই। এমনকি আমাদের বাবা-মা, যারা আমাদেরকে সব সময়ে নৈতিকতার শিক্ষা দেন, তারাই পরীক্ষার সময়ে অনৈতিক পথ অবলম্বন করার উপদেশ দেন।
তাহলে কি শিক্ষালাভ করছি আমরা? আমরা শিক্ষালাভ করে দেশকে সুন্দর করছি? নাকি নিজে কলুষিত করে দেশকেও কলুষিত করছি? কে দেবে এর উত্তর? সবাই বলছে প্রশ্নফাঁশ হওয়া ঠিক না। কিন্তু সবাই প্রশ্ন দেখছে।
Charity begins at home. আমরা কি নিজেকে পরিবর্তন করে তারপর প্রশ্নফাশকারিদেরকে দোষ দিতে পারি না? তারা কেন প্রশ্ন ফাঁশ করে, বিক্রি করে? কারণ আমরা তা কিনি। একবার চেষ্টা করে দেখি না কেন, প্রশ্ন না দেখেই পরীক্ষা দেই, নিজেকে যাচাই করি। এভাবে ভালো নাম্বার পেলে তো আমার গর্ববোধ হবে, আমার নিজের পরিশ্রমের ফল।
কিন্তু সেই অমৃতের লোভ সবার নেই। শুধু আছে নাম্বারের লোভ। এবং যেভাবেই হোক, নাম্বার পেতে হবে, শিক্ষাকে কুশিক্ষায় পরিণত করতে হলে তাও করতে হবে!
তাহলে এখন বলুন, জাতির মেরুদণ্ড কারা ভাংছে? আমরাই তো ভাংছি, মন্ত্রণালয়কে দোষ দিয়ে কি লাভ? এখন প্রশ্ন হল কে এই ভেঙ্গে যাওয়া মেরুদণ্ডকে সোজা করবে? সেই চিকিৎসকের কি আদৌ জন্ম হয়েছে? কে জানে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।