তারিক আলি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার। নিউ লেফট পত্রিকার সম্পাদকীয় কমিটির সদস্য। জন্ম ১৯৪৩ সালে, পাকিস্তানের পাঞ্জাবে। বাল্যকালেই তিনি সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে জড়িত হন। গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় চলে যান ব্রিটেনের অক্সফোর্ডে।
সেখানে রাজনীতি, অর্থনীতি ও দর্শন বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। অক্সফোর্ডের স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সম্পাদক নির্বাচিত হন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে বার্ট্রান্ড রাসেলের নেতৃত্বে গঠিত ভিয়েতনাম যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন। ১৯৬৮ সালে লন্ডনের মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও মিছিলে নেতৃত্ব দেন। তারিক আলির গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে, পাকিস্তান: মিলিটারি রুল অ্যান্ড পিপলস পাওয়ার, বুশ ইন ব্যাবিলন, স্ট্রিট ফাইটিং ইয়ারস, ক্ল্যাশ অব ফান্ডামেন্টালিজমস।
তাঁর ইসলাম চতুষ্টয় সিরিজের প্রথম উপন্যাস শ্যাডোজ আন্ডার পমেগ্রানাটে ট্রি জার্মানিতে বেস্ট সেলার হয়। সম্প্রতি শেষ করেছেন রুশ বিপ্লবের ওপর নির্মিতব্যচলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ সফরে আসেন।
ফারুক ওয়াসিফ নিয়েছেন তারিক আলি র সাক্ষাৎকার ।
প্রথম আলো : বাংলাদেশে নির্বাচন ঘিরে যে ক্রান্তিকাল যাচ্ছে, তা রাজনীতি ও সমাজকে আদর্শিকভাবেও বিভক্ত করছে।
এমন পরিস্থিতি মিসর ও পাকিস্তানেও দেখা গেছে। আপনি কীভাবে দেখছেন?
তারিক আলি: বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে যতটা মিল, বাংলাদেশ ও মিসরের পরিস্থিতির মধ্যে মিল ততটা নয়। রাজনীতিতে মতাদর্শিক বিভাজন নিয়ে আমরা অনেক কথাই বলতে পারি। খোলাখুলিভাবে বললে, এসব দেশে যা দেখা যাচ্ছে তা মোটেই আদর্শিক বিভাজন নয়; বরং তা দুই গুচ্ছ রাজনীতিবিদের বিভাজন, যারা ক্ষমতায় আসতে বা থাকতে চায়। তাদের ক্ষমতাসীন হওয়া মানে তাদের সমর্থক, সহচর ও সাঙ্গপাঙ্গদের টাকা বানানোর সুযোগ তৈরি হওয়া।
কেবল বাংলাদেশ, ভারত বা পাকিস্তানেই নয়, বৈশ্বিকভাবে গণতন্ত্রের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রভাবশালীদের বিভিন্ন অংশকে পালা করে ধনার্জনের সুযোগ করে দেওয়া। সেটা এখানেও ঘটছে, পাকিস্তানেও পিপলস পার্টির জারদারির আমলে ঘটেছে। তারা নাকি সেক্যুলার, অথচ সেক্যুলার মূল্যবোধ রক্ষায় তারা কিছুই করেনি। তাদের একমাত্র যোগ্যতা হলো টাকা বানানো। গত নির্বাচনে যাদের হাতে তাদের পরাজয় ঘটেছে, সেই মুসলিম লীগ চালান ব্যবসায়ী শরিফ ভ্রাতারা।
এঁরাও টাকা বানানোর ব্যাপারে সমান ওস্তাদ। আর এই বাস্তবতায় মানুষের জীবনের মানের অবনতি ঘটছে। এটাই আজকের দিনের রাজনীতির মৌলিক চিত্র। এটা এক ট্র্যাজেডি। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতি না থাকায় পুঁজিবাদী গণতন্ত্র বিনা চ্যালেঞ্জে সবকিছু করে যাচ্ছে।
প্রথম আলো : এ অবস্থায় ধর্মাশ্রিত রাজনীতি বিকল্প হিসেবে সামনে আসছে।
তারিক আলি : বিশ্বরাজনীতির যে পর্যায়ে আমরা বসবাস করছি, তাতে ধর্ম বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। একদিকে ধর্মাশ্রিত রাজনীতিকেরা বলছে, আমরা গরিবদের পক্ষে কাজ করছি, অন্য পক্ষ বলছে আমরা সেক্যুলার। মানুষ যদি ক্ষুধার্ত থাকে, মানুষের যদি নিরাপত্তা না থাকে, তারা যদি মজুরি না পায়; তাহলে ধর্ম বা সেক্যুলারিজমে কিছুই যাবে আসবে না মানুষের। বাংলাদেশে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের মজুরি এত কম, বাংলাদেশ দ্রুত হারে বিশ্বের সোয়েটশপে পরিণত হচ্ছে।
প্রথম আলো : এ রকম অমানবিকতার মধ্যে একটি দেশ কীভাবে গণতান্ত্রিক হতে পারে?
তারিক আলি : এটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়, গণতন্ত্র হয়ে ওঠার দাবিদার রাষ্ট্র। গণতন্ত্র আছে কি নেই, তা শাসকদের জন্য, এলিটদের জন্য সমস্যা নয়। কিন্তু জনগণের দুরবস্থা এ রকমই থাকলে তারা বলবে, এ গণতন্ত্র দিয়ে আমরা কী করব? তখন তাদের একটি অংশ ধর্মাশ্রিত রাজনীতির দিকে যাবে, এক অংশ রাজনীতিবিমুখ হবে। বাংলাদেশে সম্ভবত সেটাই হচ্ছে। অথচ আমরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে দেখতাম রাজনীতির পথপ্রদর্শক হিসেবে।
সে সময় বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের মান ছিল খুবই উঁচু, নারী-পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদ কম ছিল। নারীরা অনেক মুক্তভাবে কথা বলত, চলাফেরা করত। সে সময়ের বাংলাদেশের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা করলে গভীর বেদনা হয়। কিন্তু আমি এখানকার বন্ধুদের বলি, ভেবো না, তোমরা একাই এ অবস্থার শিকার নও, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো বাদে সারা পৃথিবীতেই এ রকম দুর্দশা চলছে। বাংলাদেশে যা দেখছি তা নিজস্ব বৈশিষ্ট্যসহ বৈশ্বিক বাস্তবতারই প্রতিফলন।
বাংলাদেশ যদি দমবন্ধকর দ্বিদলীয় ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে জনগণের জন্য কিছু করতে না পারে, তাহলে আশা নেই। আজকের রাজনীতি মানে হচ্ছে, পাঁচ বছর পর পর পালা করে টাকা বানানোর গণতন্ত্র।
প্রথম আলো : উপমহাদেশের সব রাষ্ট্রেই কমবেশি আশাভঙ্গের ব্যাপার দেখা যাচ্ছে।
তারিক আলি : বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার সমস্যা মিলবে না। বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে ছোট দেশ।
ধর্ম-সম্প্রদায়-জাতীয়তার বৈচিত্র্য এখানে কম। এখানকার সরকারগুলোর জন্য সম্ভব ছিল জনগণের সমস্যাগুলো মেটানো। এটা অসম্ভব কিছু ছিল না। এ দেশে প্রচুর বিত্ত সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি-আয় কোথায় যায়? আমাদের মতো দেশের জন্য চারটি মৌলিক ক্ষেত্রে জনপ্রত্যাশা পূরণ করতেই হবে: সম্পূর্ণ অবৈতনিক ও মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা— প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত, বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা, জনগণের জন্য ভর্তুকিপ্রাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থা এবং গরিবের জন্য বিদ্যুৎ-খাদ্য-পানি ইত্যাদিতে ভর্তুকি।
যে দেশ এগুলো করতে পারবে না, সেই দেশ পতিত হবে। অথচ আমরা কী দেখছি, সবখানেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বাণিজ্যিকীকরণ করা হচ্ছে। ধনীরা এই শিক্ষা নিতে পারে এবং গরিবেরা দেখে, তাদের জন্য রয়েছে ভাঙাচোরা এক ব্যবস্থা। এই ক্রোধ ও হতাশাও তাদের ধর্মীয় রাজনীতির দিকে ঠেলে নেয়। জাতীয়তাবাদ ও উন্নয়নের ব্যর্থতাও ধর্মাশ্রিত রাজনীতির প্রভাব বাড়বার কারণ।
প্রথম আলো : বাংলাদেশ একদিন বিশ্বে আশা সৃষ্টি করেছিল। এখন কি তা বলা যায়?
তারিক আলি : ১৯৬৯-৭০ সালে যখন আমি ঢাকায় ছিলাম, তখন এখানে শক্তিশালী আশাবাদ দেখেছি। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় জনসভায় আমিই প্রথম স্বাধীনতার ডাক দিয়ে বলেছিলাম, ‘স্বায়ত্তশাসন তোমাদের কিছুই দেবে না, তোমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের দিকেই যাওয়া উচিত। নইলে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী তোমাদের ধ্বংস করে দেবে। ’ এটাই আমি বলেছিলাম।
সাংবাদিকেরা এতই নার্ভাস হয়েছিল শুনে, তারা আমার বক্তৃতার পুরোটা প্রকাশ করেনি। কিন্তু কথাটা শেখ মুজিবের কানে গিয়েছিল এবং তিনি সন্ধ্যায় তাঁর বাসায় দেখা করতে বললেন। সেখানে তিনি আমাকে বললেন, ‘আমি শুনেছি তুমি কী বলেছ। কিন্তু তুমি কি নিশ্চিত, তুমি কি নিশ্চিত?’ আমি বললাম, ‘আমি নিশ্চিত। আমি পাকিস্তানি শাসকদের ভালো করে জানি।
তারা তোমাদের ধ্বংস করবে। তোমাদের প্রস্তুত থাকা দরকার, সে জন্যই আমি এটা বলেছি। তারা স্বায়ত্তশাসন দেবে না, তারা ছয় দফা মানবে না। তোমাদের স্বাধীনতার দিকেই যাওয়া উচিত। ’ কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে একদমই একমত হলেন না।
যা হোক, সে সময়ের আলোড়ন, আন্দোলন, রাজনৈতিক সচেতনতার মাত্রা এত বিস্ময়কর ছিল, এত উঁচু মাপের ছিল! এমনকি যারা স্কুল-কলেজে যাননি তাঁদের কাছেও সবকিছু পরিষ্কার ছিল। তখন বাংলাদেশিরা ভিন্ন এক দেশের স্বপ্নে আকুল হয়ে উঠেছিল। আমাদেরও আশা ছিল, বাংলাদেশ মুক্তিকামী প্রগতিশীল রাষ্ট্র হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তা হয়নি।
প্রথম আলো : কেন হয়নি? আপনার দৃষ্টিতে বিপত্তিটা কোথায় ঘটেছিল?
তারিক আলি : বলতেই হচ্ছে, এর কারণ সে সময়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের একের পর এক ভুল।
তারা একদলীয় রাষ্ট্র গঠন করেছিল, কর্তৃত্ববাদী শাসন চালু করেছিল। মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করেছিল, ভিন্নমতাবলম্বীদের আটক করছিল। তাহলে অতীতের সঙ্গে আর পার্থক্য কী থাকল? তাই স্বাধীনতার পরের প্রথম চার-পাঁচ বছরের ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একসময় যখন স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস কমে এল, তখন মানুষ চাইছিল বাস্তব পরিবর্তন। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি।
কিন্তু যা তারা চেয়েছিল, তা তারা পায়নি। মনে রাখতে হবে, যে রাজনীতিবিদেরা জনগণকে সন্তুষ্ট করতে পারেন না, মানুষ তাঁদের জন্য আর জীবন দেয় না।
প্রথম আলো : পরিবর্তন এখন জনপ্রিয় শব্দ। বিশ্বে কি সত্যিই কোনো পরিবর্তন দেখতে পান, কিংবা তার সম্ভাবনা?
তারিক আলি : পৃথিবীতে এ মুহূর্তে একমাত্র দক্ষিণ আমেরিকার ভেনেজুয়েলা, বলিভিয়া, ইকুয়েডরে সত্যিকার পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। শ্যাভেজ আমাকে বলেছিলেন, ‘সবকিছু ভেঙেচুরে নতুন রাষ্ট্র বানানো এখন কঠিন, কিন্তু আমরা তো তেলের টাকা দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনকে বদলে দিতে পারি।
আমেরিকা যদি আমাকে মেরেও ফেলে, তবু আমি সেই কাজ করে যাব। ’ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য দক্ষিণ আমেরিকার মডেল খুবই ভালো মডেল। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিবিদেরা জাতীয় মুক্তির উপায়ের কথা ভাবেন না, তাঁরা ভাবেন টাকা বানানোর কথা। আর টাকা বানানো আজকের নয়া উদারনৈতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। এই ব্যবস্থা দুনিয়াকে গভীর সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
ইউরোপের দিকে দেখুন, গ্রিস, ইতালি, পর্তুগালেও সংকট চলছে। ইতালিতে তো দেশ চালানোর জন্য তারা একজন ব্যাংকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এসব ব্যাংকার আর তাদের সহযোগী রাজনীতিবিদেরাই তো দেশে দেশে লুণ্ঠন চালাচ্ছে। তৃতীয় দেশগুলোয় এই অবস্থার সুযোগ নিয়েই সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় আসে।
প্রথম আলো : নতুন বিশ্বব্যবস্থায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে কীভাবে দেখেন?
তারিক আলি : আজকের আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদ বাংলাদেশকে নিছক একটা সস্তা শ্রমের দেশ করে রাখতে চায়।
কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাস তো সে রকম নয়। ভারত বলি বা যুক্তরাষ্ট্র বলি, তারা নিজেরাই অনেক সমস্যায় আছে। বাংলাদেশের যদি সে রকম রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকে, যারা জনগণের চাহিদা পূরণ করতে পারে, তাহলে কেউ আপনাদের চলার পথে বাধা হতে পারবে না। বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। গণমুখী সরকারব্যবস্থাকে সহজেই কেউ উল্টিয়ে দিতে পারে না, যত বড় পরাশক্তিই তারা হোক।
বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের মতো দেশের সমস্যা হলো, অভ্যন্তরীণভাবেই এই রাষ্ট্রগুলো এতই সমস্যায় আক্রান্ত যে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার ক্ষমতা তাদের নেই। আজকে এখানে ভারতবিরোধী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি দানা বাঁধলে সেই রাজনীতি হবে দেউলিয়া রাজনীতি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোকে রাজনৈতিকভাবে দেখতে হবে, ধর্মের ভিত্তিতে নয়। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার না করেই জাতীয় স্বার্থভিত্তিক রাজনীতি গড়তে পারে, তাহলে আশা আছে।
প্রথম আলো : মওলানা ভাসানীকে কাছ থেকে দেখেছেন।
তাঁকে কী দৃষ্টিতে দেখেন?
তারিক আলি : ভাসানী পাকিস্তানি রাষ্ট্রের সংকটটা বুঝতে পারেননি, যেটা আংশিকভাবে হলেও আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছিল। ভাসানীর এই ভুলের কারণেই আওয়ামী লীগ শূন্যতা পূরণ করে সামনে চলে এল। ভাসানী গণনেতা ছিলেন, রাষ্ট্রনেতা ছিলেন না। তিনি নীতির জায়গা থেকে ভাবতেন, কৌশল বুঝতেন না। তিনি আমাকে তাঁর রাজনৈতিক সচিব হতে বলেছিলেন।
আমি বলেছিলাম, আমি বাংলা জানি না, তাই এই কাজ আমি ভালো পারব না। কিন্তু আমি ভাবি, স্বাধীনতাসংগ্রাম যদি মুজিব ও ভাসানীর যৌথ নেতৃত্বে পরিচালিত হতো, তাহলে হয়তো ইতিহাস অন্য রকম হতো।
প্রথম আলো : আপনার তারুণ্যের সময়ের মতো এখন আবার বিশ্বজুড়ে গণ-আন্দোলনের ঢেউ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এসব আন্দোলন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে কি?
তারিক আলি : গণ-আন্দোলন হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু রাজনীতিটা স্পষ্ট হচ্ছে না। রাজনীতি ছাড়া বড় পরিবর্তন হয় না।
রাজনীতিহীনতাই আরব জাগরণের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। ব্রাদারহুডের রাজনীতি ছিল, তাই তারা সামনে এসেছে। কিন্তু তারা জনগণকে হতাশ করায় তাদের সরিয়ে এসেছে সেনাবাহিনী। কিন্তু লাতিন আমেরিকার দিকে দেখুন, সেখানে সামাজিক আন্দোলন রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে এবং তারা নেতৃত্ব তৈরি করেছে। নতুন সরকারগুলো সামাজিক আন্দোলনের চাহিদামাফিক কাজ করেছে।
আরবের সঙ্গে এখানেই দক্ষিণ আমেরিকার পার্থক্য।
গণ-আন্দোলন সত্যিই সুন্দর, কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয়। অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট আন্দোলনও এ কারণে পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি।
প্রথম আলো : হে ফেস্টিভ্যাল নিয়ে বলেন। অনেকেই তো এর সমালোচনা করছে।
কী বিবেচনায় আপনি এতে অংশ নিয়েছেন?
তারিক আলি: আমি সাধারণত কোথাও হে ফেস্টিভ্যালে বক্তৃতা করি না। কারণ, তারা বৈশ্বিক করপোরেট কালচারের অংশ। কিন্তু এবার আমি তাদের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছি। কারণ, আমি ঢাকায় আসতে চেয়েছি। স্বাধীনতার পর আমার আর তো আসা হয়নি।
ফেস্টিভ্যালের উদ্যোক্তাদের কাছেও অভিযোগ করেছি, কেন এটা ঢাকা ফেস্টিভ্যাল হবে না? কেন হে ফেস্টিভ্যাল? এই করপোরেটাইজেশনের সমালোচনা করি।
প্রথম আলো : আপনাকে ধন্যবাদ।
তারিক আলি : আপনাকেও ধন্যবাদ।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।