আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবারও আলোচনার কেন্দ্র বঙ্গভবন

সাত বছর পর আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসে গেছে বঙ্গভবন। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের ক্ষমতার মেয়াদ শেষে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক সংকটের সময় বঙ্গভবন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছিল। বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দায়িত্ব নেওয়ার সাত মাসের মধ্যে তাঁর সঙ্গে দেখা না করলেও গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে রাষ্ট্রপতিকে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি। রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, সংবিধানে দেওয়া ক্ষমতার মধ্যে থেকে তিনি সমস্যা সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।



বিএনপি-জামায়াত জোটের মেয়াদ শেষে নানা ধরনের আলোচনা-সংলাপ ব্যর্থ হয়। এরপর ২০০৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তত্কালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে প্রধান করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের তীব্র বিরোধিতার মুখে ইয়াজউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব নেয়। তখন প্রায়ই উপদেষ্টারা বঙ্গভবনে যেতেন প্রধান উপদেষ্টা সঙ্গে আলোচনার করতে। তত্কালীন রাজনৈতিক সংকট কাটতে সবাই তাকিয়ে থাকতেন বঙ্গভবনের দিকে।

কিন্তু কোনো সমাধান আসেনি।

এ অবস্থার সমাধান হয় ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে, যা ‘ওয়ান-ইলেভেন’ নামে পরিচিত। ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হওয়ার পর বঙ্গভবন থেকে সবার দৃষ্টি সরে আসে।

২০১৩ সালের শেষে এসে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী জোট অনেকটাই মুখোমুখি অবস্থানে। সরকারি দল এরই মধ্যে ‘সর্বদলীয়’ মন্ত্রিসভা গঠন করেছে।

বিরোধীরা এটাকে তামাশা হিসেবে উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছে। এরই মধ্যে তারা রাষ্ট্রপতির শরণাপন্ন হয়েছে। সংবিধান অনুয়ায়ী রাষ্ট্রপতির পদটি আলংকারিক হওয়ায় তিনি ঠিক কতটা ভূমিকা নিতে পারবেন, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন রয়েছে। রাজনীতিবিদদের মধ্যেও রয়েছে মিশ্র ধারণা।

রাষ্ট্রপতিও এ বিষয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর প্রেস সেক্রেটারি ইহসানুল করিম।

রাষ্ট্রপতি বলেন, অতীতের কোনো সরকারই রাজনৈতিক সংকটকালে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা নিয়ে সংবিধানে কোন ধারা রাখেনি। প্রেস সচিব জানান, রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘আই হ্যাভ টু প্রটেক্ট অ্যান্ড প্রিজার্ভ কনস্টিটিউশন। আলোচনা করলেই চলমান সংকটের সমাধান হয়, জাতির জন্যও ভালো হয়। তবে আলোচনার জন্য দুদলকেই উদ্যোগ নিতে হবে। ’

নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, এ সময়ে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ জাতিকে সংকট থেকে রক্ষা করতে পারে।

রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন। রাজনৈতিক এই সংকট সমাধান না হলে দেশ এক অনিশ্চিত অবস্থার দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, ইতিবাচক প্রত্যাশা নিয়েই রাষ্ট্রপতির কাছে গেছে তাঁদের দল। দেশের সংকট, ভবিষ্যত্ প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই রাষ্ট্রপতি ভূমিকা নেবেন বলে তাঁর প্রত্যাশা।

বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদা মনে করেন, এখন সবার দৃষ্টি রাষ্ট্রপতির দিকেই।

বঙ্গভবনই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। রাষ্ট্রপতির নির্বাহী ক্ষমতা না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষমতা রয়েছে। তিনি যদি মনে করেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কাউকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান করবেন; করতে পারেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, নির্বাচনকালীন সরকারের সদ্য শপথ নেওয়া মন্ত্রী আমির হোসেন আমু মনে করেন, রাষ্ট্রপতি তাঁর সাংবিধানিক ক্ষমতার ভেতরে থেকেই দায়িত্ব পালন করবেন।

তবে আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে ও সর্বদলীয় সরকারে আসতে চাইলে তারা যেসব শর্ত দিচ্ছে সেগুলো থেকে সরে আসতে হবে।

না হলে বিএনপি নির্বাচনের ট্রেন ফেল করবে। যেহেতু বিএনপি রাষ্ট্রপতির কাছে গেছে, রাষ্ট্রপতি নিশ্চয়ই সাংবিধানিক ক্ষমতার ভেতরে থেকে ভূমিকা নেবেন। তাঁরা মনে করেন, বিএনপি ও তাদের জোট শর্তহীনভাবে আলোচনায় না এলে বঙ্গভবনের উদ্যোগও সফল হবে না।

রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ নিয়ে বিএনপির বেশির ভাগ নেতার মনে একধরনের দ্বিধা রয়েছে। তার পরও রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই তাঁরা বঙ্গভবনে গেছেন বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে না—বিষয়টি মাথায় রেখেই আগামী সপ্তাহে পাঁচ দিনের হরতাল কর্মসূচিসহ পরবর্তী সময়ে কঠোর কর্মসূচির পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছে ১৮-দলীয় জোট।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.