http://www.facebook.com/reyad.parvez.3
জুলেখার পুরো নাম জুলেখা বেগম। বাবা আদর করে ডাকতেন জুলি।
জুলেখার বয়স যখন ৩ তখনি জুলেখার মা বস্তির আরেক রিকশাওয়ালার সাথে ভেগে যায়, এবং বাবা মারা যায় যখন জুলেখার বয়স ৯। এর পর জুলেখা কত বাসায় যে কাজ করলো, কত সাহেব মেম যে দেখলো তার হিসেব নেই।
বর্তমানে জুলেখার বয়স ২৯।
এ যুগে নাকি ধাম ধাম প্রেম হয়। কিন্তু জুলেখার হয় না। তবে জুলেখা ঠিক করেছে যে প্রেম সে করবেও না। সরাসরি বিয়ে। এর জন্য জুলেখা টাকা জমাচ্ছে।
গত ৬ বছর ধরে গারমেন্টস এর টাকা জমিয়ে আজ জুলেখার সঞ্চয় ৭০ হাজার টাকা। টাকাটা সে জামাই কে যৌতূক হিসেবে দেবে। কারন সে দেখেছে মেয়েদের বিয়ে সাধারনত যৌতূক ছাড়া হয় না। আর সেতো গরিবের সাথে এতিম। জুলেখার বিয়ের বড় সখ।
সে ঠিক করেছে বিয়ের পর আর বাইরে কাজ করবে না।
জামাই যা আনে তাই খাবে। নিজেদের ছেলে পুলে হবে। সব চেয়ে বড় কথা নিজের সংসার হবে।
পরবে না পরবে না করেও জুলেখা পাড়ার জামিলের প্রেমে পড়ে গেল।
জামিল এলাকার রংবাজ হলেও জুলেখাকে কথা দিয়েছে সে জুলেখাকে বিয়ে করবে, ভালো হয়ে যাবে। কথায় কথায় জুলেখা জামিল কে বলে সে জামিল কে যৌতূক দেবে। জামিল উড়িয়ে দেয়।
সব ঠিক ঠাক ছিল, হটাত একদিন জামিলের মায়ের কি নাকড়িয়েস্যা হোল। জামিল গ্রামের বাড়ি যাবেই।
মা বাঁচবে না। বড় অপারেশন দরকার। জামিল রাতে ঘুমায় না, দিনে গাঁজা টেনে পড়ে থাকে। জুলেখা নিজ হতে টাকাটা জামিলের হাতে তুলে দেয়।
জামিল চলে গেল।
গ্রাম থেকে এসে বলল মা মারা গেছে। আর তার পক্ষে জুলেখা কে বিয়ে করা সম্ভব না কারন সে জুলেখা কে ভালবাসেই না। জুলেখা পাগল পাগল হয়ে গেল। জুলেখা বুঝল জামিল টাকার জন্যই তার সাথে অভিনয় করেছিল। সে আগে দেখেছে অনেক ছেলে গার্মেন্টস এর মেয়েদের সাথে প্রেম করে কারন গার্মেন্টস এর মেয়েদের থেকে টাকা খাওয়া যায়।
কিন্তু জামিল এমন করবে জুলেখা তা ভাবতেই পারে নি।
এর ভেতর একদিন জামিল জুলেখা কে বুঝিয়ে বুঝিয়ে এক জায়গায় নিয়ে গেল।
পরের দিন পেপারে আসলো প্রেমিকের বন্ধুদের হাতে গন ধর্ষণের গল্প।
বহু মানুষ চা খেতে খেতে গল্পটা পরলো আয়েস করে, কেউ চুক চুক করলো, কেউ নাক সিটকালো।
কেউ বলল এই বস্তির মেয়ে।
কতজনের সাথে কত কিছু করেছে। আর এখন সতি সাজছে। সব নাটক।
এর পর কেটে গেছে আরও চার বছর। জুলেখা এখন অন্য গার্মেন্টসে চাকরি করে।
সমাজ নামক আশ্চর্য বেবস্থা জুলেখাকে এলাকা থেকে বের করে দিয়েছে, জামিল নাকি এখনও গলির সামনে আড্ডা দেয়, মেয়েরা সামনে দিয়ে গেলে শিষ দেয়, এদানিং নাকি পলিটিক্স নামক জাদুর প্রদীপের আলো পায়।
জুলেখারা কলঙ্কিনী খেতাব পায়ে সমাজের বুকে বেঁচে থাকে যেন রাস্তার পাশে দাঁড়ানো এক প্রচণ্ড শক্তিশালী গাছ, শত ঝড় জাঞ্জার পরও যে গাছ মাথা নোয়ায় না, বেঁচে থাকে জীবনের প্রচণ্ড আকুতি নিয়ে। যেনও জুলেখা কোন নারির নাম নয়, একটি শক্তিশালী গাছের নাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।