আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাওয়া অথবা না পাওয়া......

সাম্যের গান গাই- আমার চক্ষে পুরুষ রমনী কোন ভেদাভেদ নাই। বিশ্বে যা কিছু মহান, সৃষ্টি চির কল্যানকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর...........। আমি রক্তে, মাংসে গড়া অতি সাধারন এক মানুষ........... তবে আমি প্রচন্ড রকমের স্বপ্নবিলাসি। সেসব স্বপ্নের কিছ

> প্রিন্সেস... > হুম > মাথাটা একটু টিপে দাও না, ব্যাথা করছে। > আচ্ছা... হিয়ার কোলে মাথা রেখে ঋভু শুয়ে আছে।

ঋভু হিয়াকে সবসময় প্রিন্সেস বলে ডাকে। ঋভু চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। হিয়া এক হাত দিয়ে ঋভুর চুলে বিলি কেঁটে দিচ্ছে, মাথা টিপে দিচ্ছে। আরেক হাত আলতো করে ঋভুর বুকের ওপর রাখা, মাঝে মাঝে ঋভুর চোখে, ঠোঁটে, গালে আঙ্গুল বুলিয়ে দিচ্ছে.... > প্রিন্সেস তুমি কেমন যেন চেঞ্জ হয়ে গেছো... > কি রকম? > আগে তুমি এসে অনেকক্ষন থাকতা, কত গল্প করতাম। এখন তুমি এসে অল্প সময় থেকে চলে যাও।

আসো দেরি করে, আবার তাড়াতাড়ি চলে যাও... > হুম > এমন করো কেনো? > এমনি > তুমি দিনের বেলায় কেনো আসো না? > সমস্যা হয়। > কি সমস্যা? > তুমি বুঝবে না। > বুঝিয়ে বলো > পরে বলবো। এখন ঘুমাও তো। > এমন করো কেনো? আমি ঘুমিয়ে গেলে তো তুমি চলেই যাবে।

তুমি খুব পঁচা হয়ে গেছো..... > আমি সবসময়ই পঁচা। > উঁহু, তুমি আগে একটা লক্ষী মেয়ে ছিলা, এখন খুব পঁচা > আচ্ছা এখন ঘুমাও তো। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে থাকো, আর কোনো কথা বলবা না...... প্রত্যেক রাতে এভাবেই হিয়ার কোলে মাথা রেখে ঋভু ঘুমিয়ে পড়ে। ভোরবেলা যখন চারদিক ফর্সা হয়ে যায়, হিয়া তখন ঋভুর মাথার নিচে বালিশ দিয়ে, গায়ে কাঁথা টেনে দিয়ে, কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে চলে যায়। ঋভু টেরই পায় না হিয়া কখন চলে যায়..... ঘুম ভাঙার পর ঋভুর খুব মন খারাপ হয়।

তখন আশেপাশে হিয়া থাকে না। ভীষন কষ্ট হতে থাকে ঋভুর, প্রায়ই দুচোখের কোনা থেকে অশ্রু বেয়ে পড়ে। ঋভুর মাঝেমাঝে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করে...... ********************** অনেকগুলো ছোট ছোট রঙীন মোমবাতি দিয়ে ঘর সাজিয়েছে ঋভু। মোম গুলো থেকে মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে সারা ঘরে। পুরো ঘরে শুধু মোমের আলো জ্বলছে।

ডিসেম্বর মাস, ভীষন শীত পড়েছে। গতবছর এই দিনে ঋভুর আর হিয়ার বিয়ে করার কথা ছিল। কিন্তু তার কয়েক দিন আগে হিয়া মারা যায়...... হিয়া ভীষন অভিমান করে ছিল ঋভুর ওপর। অনেক দিনের জমানো অভিমান। এত অভিমান চেপে রেখে একদিন রাতে হিয়া সুইসাইড করে।

ঋভু তখনো বুঝতে পারেনি সেই রাতেই ছিলো হিয়ার সাথে তার শেষ ফোনে কথা...... তবে হিয়া মারা যাওয়ার কিছুদিন পর থেকেই একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে। প্রত্যেক রাতেই হিয়ার সাথে ঋভুর দেখা হয়। হিয়াকে শুধু ঋভুই দেখতে পারে, ছুঁতে পারে, হিয়ার সাথে কথা বলতে পারে। প্রত্যেক রাতে হিয়া নিঃশব্দে ঋভুর কাছে আসে....... ঘরের মেঝে অসংখ্য মোমের আলোতে জ্বলজ্বল করছে। ঋভু বিছানায় শুয়ে জানালা দিয়ে চাঁদ দেখছে।

আজকে আকাশে বিশাল বড় একটা চাঁদ উঠেছে। হিয়া কখন ঋভুর পাশে এসে শুয়েছে ঋভু টেরই পায়নি। হিয়া ধীরে ধীরে ঋভুর বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকলো। ঋভুও আলতো করে হিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। > প্রিন্সেস তুমি কেনো এমন করলা? > কি করলাম? > আমাকে ছেড়ে কেনো চলে গেলা? > তোমার সাথেই তো আছি, এইযে তোমার কত কাছে.... ধীরে ধীরে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ঋভু.... > প্রিন্সেস এক কাজ করি, চলো তোমাকে বিয়ে করে ফেলি > হা হা হা, হি হি হি.... শেষ পর্যন্ত ভূত বিয়ে করবা! > খবরদার, আমার প্রিন্সেসকে ভূত বলবা না > হুউউউউউউম... > আমার তোমাকে সারাক্ষনই দেখতে ইচ্ছা করে।

আগে যখনই তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করতো, দূর থেকে লুকিয়ে তোমাকে দেখতাম। কখনো কখনো তোমাকে দেখার জন্য তোমার বাসার সামনে যেতাম..... > আর এখন আমি তোমাকে দূর থেকে দেখি, তুমি টেরই পাও না। আগে তুমি যখন আমাকে দেখতে আমি তখন টের পেতাম না। আগে তুমি ছিলে ছায়ামানব, আর আমি এখন ছায়ামানবী। > মাঝেমাঝে যখন তুমি থাকো না, খুব ইচ্ছা হয় তোমার সাথে কথা বলতে।

তোমাকে পাগলের মত খুঁজতে থাকি, কিন্তু তোমাকে কোথাও খুঁজে পাই না.... > এরকম সময় আমিও পার করেছি। আমারও এমন প্রচন্ড ইচ্ছা হতো তোমার সাথে কথা বলতে। আমিও তোমাকে পাগলের মত খুঁজতাম। তোমার মনে আছে, সারাদিন আমি তোমাকে কত অসংখ্য বার ফোন করতাম? তোমাকে ফোন করতে করতে মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যেতো, তারপর আবার চার্জে দিয়ে ফোন করতাম। কিন্তু তুমি ফোন রিসিভই করতে না।

কখনো রিসিভ করলেও দুই, তিন মিনিটের মধ্যে ফোন রেখে দিতে.... ঋভু কিছু বললো না। শুধু আলতো করে হিয়ার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। দুজনে হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো..... > প্রিন্সেস... > বলো > এরকম কেনো করলা? আমি তো সবসময় তোমার সাথে থাকতে চেয়েছি, তোমার হাত ধরে পাশে বসতে চেয়েছি। সারাজীবন একসাথে থাকার কত প্ল্যান ছিল আমাদের, কত স্বপ্ন দেখতাম তোমাকে নিয়ে। হয়তো এমন সময় আসতো আমরা সবসময় একসাথে থাকতাম, হয়তো রাতে ঘুমানোর সময় বিছানায় আমাদের দুজনের মাঝখানে আমাদের ছোট্ট একট বাবু থাকতো... > অসুবিধা কি! কিছুদিন পর খুব সুন্দরী একটা মেয়েকে বিয়ে করবা, তখন তোমার বৌ হবে তোমার প্রিন্সেস।

আমাকে তো শুধু পাঁচ মিনিটের জন্য তোমার হাত ধরতে দিয়েছিলে, তোমার বৌ সারাজীবন তোমার হাত ধরে রাখবে। শুধু হাত কেনো, তোমাকে একদম আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রাখবে। বিয়ের পর বাকি জীবন বৌকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবা। একসময় তোমাদের দুইজনের মাঝে তোমাদের ছোট্ট বাবু থাকবে... > আমাকে hurt করতে কি তোমার খুব ভালো লাগে? > আমাকে hurt করতে কি তোমার খুব ভালো লাগতো? ঋভু চুপ হয়ে গেলো। সে কেনো যেন হিয়ার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না।

আসলে সে কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। বেশ অনেকক্ষন ধরে দুজন চুপচাপ, কেউ কোনো কথা বলছে না। হঠাৎ ঋভু কথা বলে উঠলো... > প্রিন্সেস চলো পাহাড়ে চলে যাই। > তারপর? > একসাথে থাকবো। > হা হা হা, ভূতের সাথে সংসার! > কিসের ভূত! আমি আমার প্রিন্সেসকে নিয়ে থাকবো।

> ভূতের সাথে বসবাস করবা, মানুষজন জানতে পারলে কি ভাববে... > কে কি ভাবলো তাতে কি আসে যায়... > বাহ্ কত সুন্দর করে বলে ফেললা, "কে কি ভাবলো তাতে কি আসে যায়", যখন আমি বেঁচে ছিলাম তখন এগুলো কিচ্ছু মনে হয়নি তোমার। এখন আমি মরে গেছি বলে তোমার ভালোবাসা উপচে পড়ছে...! ঋভু কিছু বলছে না। তার কেনো যেন খুব কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে, বুকের মাঝখানে খুব ব্যাথা করছে। চিৎকার করে খুব কাঁদতে ইচ্ছা করছে......... > ঋভু > হুম > তোমার মনে আছে, আমরা পাহাড়ে যাওয়া নিয়ে কত প্ল্যান করতাম? > মনে আছে।

> তোমাকে ঐ ছোট্ট পাহাড়টা কেনো বানিয়ে দিয়েছিলাম জানো? > কেনো? > আমার কেনো যেন মনে হয়েছিলো তোমার সাথে কখনোই পাহাড়ে যাওয়া হবে না। আমি চাইলে আরো অনেক সুন্দর করে ওটা বানিয়ে দিতে পারতাম। ইচ্ছা করেই করিনি। আমার মনে হয়েছিল, হয়তো আমার কল্পনার পাহাড়ের সাথে তোমার কল্পনার পাহাড়ের কোনো মিল নেই। কখনো ভেবে দেখেছো, পাহাড়ের ভেতর ঐ ছোট বক্সটা কালো রঙের কেনো? কখনো ভেবে দেখেছো, আকাশ ভরা এত মেঘ কেনো? কখনো ভেবে দেখেছো, পাহাড়ের গা ঘেষে শুধু একটা পাখিই কেনো উড়ে যাচ্ছে? ঋভু হঠাৎ হিয়াকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলো।

সে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো, "প্রিন্সেস, আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ" হিয়া প্রায়ই ঋভুকে এই কথাটা বলতো। হিয়ার যখন খুব মন খারাপ থাকতো তখন সে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ঋভুকে বলতো, "প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না" ঋভু তখন কখনো চুপ করে থাকতো, কখনো হাসতে হাসতে বলতো, "যাচ্ছি না তো বাবা" হিয়া মারা যাওয়ার কিছুক্ষন আগেও ঋভুকে এই কথাটা বলেছিলো, সেদিনও ঋভু হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলো... ঋভু খুব শক্ত করে হিয়াকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। হিয়া কান পেতে ঋভুর হৃদস্পন্দন শুনছে। ঋভু নিঃশব্দে কাঁদছে, কখনো কাঁদতে কাঁদতে তার সারা শরীর কেঁপে উঠছে... ঋভু আর হিয়া চুপচাপ শুয়ে শুয়ে জানালা দিয়ে আকাশের বিশাল চাঁদটা দেখছে। বিছানার ওপর চাঁদের আলো এসে পড়েছে।

মনে হচ্ছে, চাঁদের আলোয় পুরো বিছানাটা জ্বলজ্বল করছে....


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।