এজেন্সি- স্বপ্ন ও বাস্তবতা একটি সচেতনতামুলক পোস্ট। আমাদের মত আর কেউ যেন এজেন্সির প্রতারনার ফাদে পা না দেয় , সবার সচেতনতা তৈরির জন্য এ লেখা । আমাদের মত এই ভুল যেন আর কেউ না করে , তারই জন্য বিসাগ (বিএসএএজি - বাংলাদেশী স্টুডেন্ট & এলুম্নাই এসোসিয়েশন ইন জার্মানি) এর অনুপ্রেরনায় আমাদের বর্তমান অবস্তা আর এজেন্সি এর প্রতারনার শুরু থেকে শেয পর্যন্ত এ সিরিজ লেখায় তুলে ধরার চেয্টা করব। লেখাগুলু বিসাক এর মাসিক নিউজলেটা র এ প্রকাশিত হয়। লেখাগুলু সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্যই সামুতে পোস্ট করা।
আগের লেখাগুলু
জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা -এজেন্সি, কিছু স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ১ )
জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা -এজেন্সি, কিছু স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব২ )
জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা -এজেন্সি, কিছু স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ৩ )-বিশ্বাস এখানে ও সেখানে]
জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা -এজেন্সি- স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ৪)- খরচের আসল হিসাব
--------------------------------------------------------------------
আজ অনেক দিন পর আকাশে তাঁরা দেখলাম । জার্মানিতে আশার ১ বছর এর মধ্যেতো দৌড় এর মাঝে থাকতে থাকতে তাঁরাতো দুরের কথা আকাশই ভাল করে দেখা হয নাই । আজ বিকাল এ কলিজ কাম ফ্রেন্ড ফিলিপ বলল সে সন্ধায বাইরে যাচ্ছে, আমি ইচ্ছা করলে তার সাথে যেতে পারি । আমার ও কোনো কাজ না থাকায রাজি হযে গেলাম । সন্ধায বাসা থাকে বেরিযে যে জিনিশ টা টের পেলাম তা হলো আমাকে জ্যাকেট নিযে যেতে হবে ।
বড়ই আদ্ভুত এই জার্মান আবহাওযা , সারাদিন গরম আর রাত যত বারতে থাকে তাপমাত্রা তত কমতে থাকে । গাড়িতে উঠেই জানতে পারলাম আমাদের গন্তব্য পাশের ১১ কিলোমিটার দুরের শহর । যেহেতু আমার বাইরে যাচ্ছি সাথে আমাদের আরেক কলিগ কাম ফ্রেন্ডকে ও নিতে হবে । তাকে ফোন দিযে জানতে পারলাম সে আছে প্রায ৬০ কিলমিটার দুরের শহরে আছে। তুই থাক আমরা ৩০ মিনিট এর মধ্যে আসছি বলেই ফিলিপ গাড়ি ঘুড়াল সেই দিকে ।
প্রথমে অবাক হলেয অ পরে মনে পরল গতমাসে রাত ১২ টায ৬০ কিলোমিটার দূরের একই সহরে গিযেছিলাম ম্যাকডোনলাট এর বারগার খেতে , আর এখনতো সন্ধ্যা । ৮০-১০০ কিলোমিটার গতিটে গাড়ি ছুটচে আর হাই ভলিযমে গান । আমি ডুবে গেলামা চিন্তার জগতে…আমার চেযে ১ বছরের বড় ফিলিপ , জব করছে । মোটিমুটি যখন যা ইচ্ছা তাই করে । আট ঘন্টা কাজ করার পর কখন বাসায যাব রেস্ট নেব এই চিন্তা করি আমি আর ও কিনা আজ সাড়ে ১০ ঘন্টা কাজ করে এখন আবার ১২০ কিলোমিটির ড্রাইভ ।
আর এর জন ম্যানুযেল গত ৬ বছর ধরে সপ্তাহে যে ২ দিন ছুটি পায তার ১ দিন ১২ ঘন্টা রেডক্রস এ কাজ করে বিনা বেতনে । এখন কাজ শেষে ওযেট করছে আমাদের জন্য । যাই হোক আমরা আধাঘন্টার মাঝেই পৌছালাম। লেকের পাশে বিচ এর মত করে সাজানো বিশাল রেস্তোরেন্ট…বিচ এর মত করেই হেলান চেযার । যাতে হেলান দিযে বসলেই আকাশ দেখা যায ।
আমি আকাশের তাঁরা দেখছি আর ভাবছি গত বছর সামার এর কথা , ৩ মাসের মধ্যে ৩ বার বাসা বদলিযে অবশেষে বাসা এর টেনশন দূর হবার পর জব এর জন্য যখন ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুল এর ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিলর এর কাছে পরামর্শ এর জন্য গেলাম তখন তার কথায সান্তনাতো দুরের কথা উল্টো নতুন আর একটা টেনশন যোগ হল । কাজ তো করতে পারবনাই ল্যাঙ্গুয়েজ স্টুডেন্ট হিসাবে আর এজেন্সি থেকে আমাদের যে বলেছিল ৬-৯ মাস এর মধ্যে আমরা ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স শেষ করতে পারব আপাতদৃষ্টিতে তা ১ বছর এর ও বেশি সময লাগবে । আর এর জন্য আমাদের ১৫০০-১৮০০ ইযরো এর মত দিতে হবে নতুন করে । এক টেনশন দূর করতে গিযে আর এক টেনশন সাথে নিযে আসলাম । অথচ আমরা কি জেনেছিলাম ।
আমাদের যে ভুল ইনফো দেযা হযে হযেছে তাতো অনেক আগেই জেনে গেছি । কিন্তু এতটা কেন ।
গতলেখায় যেখানে শেষ করেছিলাম তার পর থেকে বলি। ভিসা ওযাল্ড ওযাইড অফিস থেকে খরচ এর হিসাব এর একটা আইডিযা নিযে গেলাম গুলশান এর বিএসবি অফিস এ । অফিস এর ডুকে ভিতরের ডেকোরেশন এ যা দেখলাম তা ভিসা ওযাল্ড ওযাইড অফিস কে ও হার মানায ।
রিসিপ্সনিস্ট এর দেযা কাগজে নাম ঠিকানা আর কিছু ইনফো দেয়া কাগজ নিযে ডুকলাম এক মেডাম এর রুমে , তিনি ও ঘুরিযে পেচিযে সেই একই ধরনের কথা শোনালেন, যার সারমর্ম হচ্ছে জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স করতে হবে । যার জন্য ৪৫০০ ইউরো এর মত খরছ হবে । আর তার দেযা হিসাব তা ঠিক মনে নেই কিন্তু তা সব মিলিযে প্রায ৭-৮ লাখ টাকা লাগবে, তার মানে ব্লক একাউন্ট মিলিযে যা প্রায ১৪ লাখ টিকা এর ব্যাপার । তার যে কথাতি আমার এখন ও মনে পরে তা হচ্ছে ইনকামের হিসাব । তার মতে স্টুডেন্ট হিসাবে ২০ ঘন্টা সপ্তাহে কাজ করতে পারব আর সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিন তো আছেই ।
এগুলুতো লিগেল হিসাব এ ছাড়া বিভিন্ন বিযের বা পার্টিতে তো কাজ করা যাযই । তাদের অনেক স্টুডেন্ট অলরেডি করছে ও । সবমিলিযে মাস শেষে সব খরচ বাদ দিযে ৫০০-৬০০ ইযরো হাতে থাকবেই । কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ৪০০ ইযরো এর মিনি জব এর জন্য হাত পাতাতো আছেই পা ধরেও খুজে পাওযা কঠিন কাজ প্রথম ৫-৬ মাস । বিশে্য করে জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ ছাড়া ।
মোটিমোটি ৩-৪ টা এজেন্সি এর ইনফো গুলু প্রায একই রকম কারন তাদের সবার টার্গেট তো একই । আপনাকে জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স করতেই হবে যার জন্য ৪-৫ হাজার ইউরো খরচ হবে । আর ইঙ্কাম _ সব খরচ বাদ দিযে মাসে ৫০০-৭০০ ইউরো হাতে থাকবে । যা কিনা একজন ব্যচেলর বা মাস্টারস এর স্টুডেন্ট এর জন্য সপ্নের মত বিসয । যেখানে পড়াশোনা এর পাশাপাশি কাজ করে মাসিক খরচ চালাতেই হিমসিম খেতে হয, সেখানে বাড়তি ইঙ্কাম এর লোভটা তাও ল্যাঙ্গুয়েজ স্টুডেন্ট দের যাদের কেনা লিগাল্লি কাজ এর পারমিশনই নেই ।
এটাকে প্রতাবনা বললে ভুল হবে একটা জীবনকে এমনকি একটা পরিবারকে সপ্ন দেখিযে নিঃস্ব করার পথে ঠেলে দেযা । যার উদাহরণ আমারই স্কুলে নতুন একজন বাঙ্গালী স্টুডেন্ট যার পরিবার চক্রবৃধি শুদে টাকা নিযে তাকে জার্মান পাঠিযেছে । একবার ভেবে দেখুন তার পরিবার এর কথা । এই দূরের মিটিমিটি তাঁরা এর মতই আমাদের সপ্নগুলুকে আজ অধরা মনে হয ….. ………………ফিলিপ এর ডাকে বাস্তবে ফিরে আসলাম । ঘড়ির কাটা ১২টা ছুইছুই …বাসায যেতে হবে…(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।