পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে মুসলিম
নারীদের খাপ
খাওয়ানাটা খুব সহজ নয়৷
বিশেষ করে মাথায় হিজাব
দিলে তো কথাই নেই৷
বাঁকা চোখে দেখা হয় তাঁদের৷
সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অংশ গ্রহণ
করতে পারেন না তাঁরা৷
জার্মানিতে বসবাসকারী রক্ষণশীল
মুসলিম পরিবারের মেয়েদের কঠোর অনুশাসনের
মধ্যে থাকতে হয়৷ মেনে চলতে হয়
পর্দা প্রথা৷ পুরুষদের
সামনে খেলাধুলা বা সাঁতার
কাটাও নিষেধ৷ স্বাস্থ্যের জন্য কিছু
করতে চাইলে বাড়িতে ব্যায়াম
করা ছাড়া আর উপায় থাকে না৷
এক্ষেত্রে এক ব্যতিক্রম এনে দিয়েছে একটি ফিটনেস
স্টুডিও৷ কোলন শহরের মুসলমান মেয়েদের জন্য
পাঁচ বছর আগে এক খোলা হয়েছে এটি,
যেখানে তাঁরা নিঃসংকোচে ধর্মীয়
বিধি নিষেধ লঙ্ঘন না করে অংশ গ্রহণ
করতে পারেন৷ কেননা এই ফিটনেস
স্টুডিওটিতে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ৷
মুসলিমনারীরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ
করেন
নুর্গ্যুল কোরুক-র কাছে ফিটেনেস স্টুডিওর
‘ট্রেডবেল্ট' বা যে বেল্টের ওপর দ্রুত
হাঁটতে হয়, সেই যন্ত্রটি সবচেয়ে পছন্দ৷
এটি শুধু যে মজার তাই নয়, ট্রেনিং-এর
সময় আশে পাশের মেয়েদের সঙ্গেও গল্পগুজব
করা যায়৷
২৬ বছর বয়স্ক নুর্গুল সবসময়
খেলাধুলা পছন্দ করতেন৷ স্কুলে স্পোর্টস-এর
ক্লাসে প্রথম সারির একজন ছিলেন তিনি৷
মাথায় হিজাব থাকলেও তাঁর
কোনো অসুবিধা হতো না৷
সহপাঠীরা তাঁকে এইভাবেই
দেখতে অভ্যস্ত৷ কিন্তু স্কুলের পড়া শেষ
হওয়ার পর খেলাধুলার পাটও চুকে গেছে৷
নুর্গ্যুল কোরুক বলেন,
‘‘আমি ঢেকে ঢুকে থাকি বলে সাধারণ
স্টুডিওতে ফিটনেস ট্রেনিং চালানো সম্ভব
হতো না৷ সেখানে পুরুষরাও অংশগ্রহণ করে,
আবার প্রশিক্ষণকারীরাও পুরুষ৷
অগত্যা নিজে নিজেই
দৌড়াদৌড়িটা চালিয়ে গিয়েছি৷ কিন্তু ফিটনেসের
যন্ত্রপাতিতে ট্রেনিং চালানো সম্ভব হয়নি৷''
পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ
সৌভাগ্যবশত মুসলিম মেয়েদের জন্য কোলনের
বিকেনডর্ফ-এ স্থাপিত ফিটনেস স্টুডিওর
খবরটি তাঁর কানে এল৷
সেখানে পুরুষরা ঢুকতে পারেনা৷ তাই
মেয়েরা হিজাব ছাড়াই এখানে ট্রেনিং-এ
অংশ নিতে পারে৷ এই বিশেষ ধরনের ফিটনেস
স্টুডিওটি স্থাপন করেছেন তুর্কি বংশোদ্ভূত
এমিনে আয়ডেমির ২০০৭ সালে৷
সম্পূর্ণভাবে মেয়েদের জন্য একটি ফিটনেস স্টুডিও
জার্মানিতে কোনো বিরল ব্যাপার নয়৷
তবে হায়াত-এ অন্যান্য কিছু নিয়ম কানুন
রয়েছে, যা এটিকে অনন্য করে তুলেছে৷
এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘‘সন্তান জন্মের
পর আমার ওজন খুব বেড়ে গিয়েছিল৷ তাই
ওজন কমানোর জন্য কিছু করার
কথা মনে হচ্ছিল৷ একটি সাধারণ ফিটনেস
স্টুডিওতে আমি ট্রেনিং শুরু করি৷ কিন্তু
সেখানে হিজাব খোলা যেত না৷
কেননা সেই স্টুডিওর মালিক একজন পুরুষ,
যিনি প্রায়ই সেখানে আসতেন৷
জানালা পরিষ্কার করতে এবং ডাক
নিয়েও আসতেন পুরুষরা৷''
মেয়েদের জন্য ফিটনেস স্টুডিও ‘হায়াত'
তাই ৪৩ বছর বয়স্ক এমিনে শুধুই মেয়েদের
জন্য একটি ফিটনেস স্টুডিও গড়ে তোলেন, নাম
দেন ‘হায়াত'৷ যার অর্থ জীবন৷ এর
আগে একটি তরিতরকারির দোকান ছিল তাঁর,
তাই আত্মনির্ভর হওয়ার
ব্যাপারে কোনো ভয় ছিল না এমিনের৷ ১০০
জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু হয় এই
স্টুডিওর, আজ ৪০০ মেয়ে ট্রেনিং নিতে আসেন
এখানে৷ এর মধ্যে ৫০ জন জার্মান৷
এমিনে আইডেমিনের ভাষায়, ‘‘আমার
সদস্যরা আন্তর্জাতিক৷ তুর্কি, আরব,
ইয়োগোস্লাভিয়ান, পোলিশ, জার্মান – সব
দেশেরই আছেন৷ অমুসলিম
মেয়েরা আশে পাশে বসবাস করেন
বলে এবং আমাদের প্রবেশ মূল্য
তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার
কারণে এখানে আসেন৷''
বেশ কিছু বিধি বিধান রয়েছে
সম্পূর্ণভাবে মেয়েদের জন্য একটি ফিটনেস স্টুডিও
জার্মানিতে কোনো বিরল ব্যাপার নয়৷
তবে হায়াত-এ অন্যান্য কিছু নিয়ম কানুন
রয়েছে, যা এটিকে অনন্য করে তুলেছে৷
এমিনে জানান, ‘‘আমাদের ইসলাম ধর্মে,
মেয়েদের পরস্পরের মধ্যেও আব্রু বজায়
রেখে চলতে হয়৷ সবার জন্য গণস্নানাগার
নয়,
বরং এখানে রয়েছে আলাদা আলাদা শাওয়ার
কেবিন৷ কেউ কাউকে দেখতে পায় না৷ স্টিম
বাথ নিতেও একটি টাওয়েল জড়িয়ে যান
মেয়েরা৷''
এমিনে আইডেমির-এর খদ্দেররা এসব ছাড়াও
সাধারণ ফিটনেস স্টুডিওর মতোই সবরকম
সুযোগ সুবিধা পান৷ যেমন
এখানে রয়েছে কার্ডিওভাসকুলার ট্রেনিং,
স্টিম বাথ, সোলারিয়াম ইত্যাদির
ব্যবস্থা৷ ব্যক্তিগত
চাহিদা অনুযায়ী ট্রেনিং প্রোগ্রাম
তৈরি করা হয়৷ বাচ্চাদের দেখাশোনার
ব্যবস্থাও রয়েছে এই স্টুডিওতে৷ বেশিরভাগই
মহিলাই কোনোদিন খেলাধুলা করেননি৷ যদিও
মুসলমান মেয়েদেরই এক্ষেত্রে প্রয়োজনটা বেশি৷
এমিনের কথায়, ‘‘আমাদের
খাবারে মাংসের প্রাচুর্য থাকে৷ তার
ওপর কোনো শারীরিক পরিশ্রম যদি না হয়,
তাহলে ওজন বাড়তে থাকে৷ বাচ্চাদের
সাথে নাস্তা করতে হয়, বান্ধবীর
সাথে দুপুরের খাবার, স্বামীর
সঙ্গে রাতের খাবার খেতে হয়৷
সপ্তাহান্তে আসেন অতিথি, তাদের
সঙ্গে না খাওয়াটা হয় অভদ্রতা৷
তাই এই সব মেয়ের জন্য এই রকম
একটা স্টুডিওর দরকার ছিল৷''
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।