আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক বিচ্যুতি



রাজনীতিতে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল বা আঁকড়ে থাকার উদাহরন নতুন কিছু নয় বরং রাজনৈতিক দল মানেই রাষ্ট্র ক্ষমতা চর্চা । রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা দখলের প্রশ্নে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন নতুন কিছু নয় বরং স্বাভাবিক । কৌশলের প্রশ্নে দুটি বিষয় বিবেচনায় থাকে আদর্শ ও শ্রেণী স্বার্থ । একটি রাজনৈতিক আদর্শ গোটা সমাজের সংস্কৃতিতে প্রভাব বিস্তার করে । রাজনৈতিক আদর্শ এমনই এক শক্তি যার সামনে গোটা সেনাবাহিনী পরাজিত হয়েছে এমন নজির ইতিহাসে বহুবার দেখা গিয়েছে ।

এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের পরাজয়ের পিছনেও রয়েছে রাশিয়ার স্তালিনের নেতৃত্বে রুশ কম্যুনিস্ট পার্টির সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক আদর্শ । এই রাজনৈতিক আদর্শকে ছাড় দিয়ে অনেক রাজনৈতিক দলকে বিলুপ্ত হতে দেখা গিয়েছে । বাংলাদেশের যারা আওয়ামীলীগ করে তারা মুক্তি যুদ্ধের চেতনায় লালিত সপক্ষের শক্তি এবং যারা আওয়ামীলীগ করে না তারা রাজাকার বা মুক্তি যুদ্ধের চেতনার বিপক্ষ শক্তি – এই আদর্শ দ্বারাই আওয়ামীলীগ তাদের কর্মীদের পরিচালিত করে বা করার চেষ্টা করে । বাংলাদেশে যারা আওয়ামীলীগের সাথে রাজনৈতিক জোট করেছে যেমন মেনন - ইনু এবং ভবিষ্যতে যারা জোটে ঢোকার পাইপ লাইনে আছে যেমন সিপিবি - বাসদ তারা সকলেই এই আওয়ামী আদর্শ দ্বারা লালিত । এদেশে যারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে থাকে তারাও আওয়ামী আদর্শের দ্বারা কম বেশী প্রভাবিত ।

সেই হিসেবে আওয়ামী আদর্শের ভোটের সংখ্যা হচ্ছে ৩৯% । আওয়ামীলীগের আদর্শের বিপরীতে প্রধান শত্রু জামাত – যারা মুক্তি যুদ্ধের সময় স্বাধীনতার রাজনৈতিক বিরোধিতাকারী শক্তি বা দল ছিল । পরবর্তী শত্রু হচ্ছে যারা জামাতের সাথে নির্বাচনী জোট করেছে তারা অর্থাৎ বিএনপি । কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিএনপি আওয়ামীলীগের প্রধান শত্রু । কারন ক্ষমতা দখলের প্রশ্নে জামাত নয় বিএনপি আওয়ামীলীগের প্রধান প্রতিপক্ষ ।

ক্ষমতা দখলের প্রশ্নে আওয়ামীলীগ বিএনপিকে ঘায়েল করার জন্য বিএনপি জামাত জোট ভাঙ্গার একটি কৌশল নিয়েছে । কৌশলের অংশ হিসেবে ক্ষমতা দখলের পর পরই প্রথমে যুদ্ধাপরাধীর বিচার নামে এবং পড়ে হয়তো কারও চাপে পড়ে মানবতাবাদ বিরোধী বিচার নামে বিচার কার্যক্রম শুরু করে । যদিও ১৯৯৬ সালে জামাতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিল বলে সেই সময় এই বিচার করার প্রয়োজন পরেনি । পড়ে জামাত বিএনপির সাথে নির্বাচনী জোট করলে সেই জোট নির্বাচনে বিজয়ী হয় । হিসাব অত্যন্ত পরিস্কার ।

বিএনপির ভোট ৩৩% , জামাতের ভোট ১১% , মোট ৪৪% । আওয়ামীলীগের ভোট ৩৯% । তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরেপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি জামাত জোটগত ভাবে অংশ নিলে আবারও বিএনপি জামাত সরকার গঠন করবে – সুত্রমতে এটাই হিসাব । আওয়ামীলীগের একমাত্র রাস্তা হচ্ছে জামাতের ভোটকে বিএনপি থেকে আলাদা করতে হবে । এই কৌশলের অংশ হিসেবে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম শুরু করে জামাতকে বিএনপি থেকে আলাদা হতে বাধ্য করার কৌশল নেয় ।

বিচার কার্যক্রমকে কৌশল হিসেবে বলার কোন সুযোগ ছিল না যদি বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও বিচার কার্যক্রম দীর্ঘায়ীত না হতো । বিচার এর দীর্ঘ সুত্রতা , পরবর্তীতে একজন অনুপস্থিত আসামিকে রায় প্রদান করে পরিস্থিতি অবলোকন করা , তার পরবর্তীতে কাদের মোল্লাকে লঘু দণ্ডে দণ্ডিত করা । সেই সাথে জামাতকে হটাত করে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া । জামাতকে চাপে ফেলার এই আওয়ামী নীতিতে জামাত ইতিমধ্যেই একক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদেরকে জনগনের কাছে উপস্থাপিত করতে সমর্থ হয়েছে । ইতিমধ্যেই জামাত বেশ কয়েকটি সফল হরতাল করেছে ।

বিএনপির হরতালও এমন সফল হয় না । জামাতের এই সফল রাজনৈতিক উত্থানে এখন বিএনপির সাথেও জামাতের দর কষাকষি বেড়ে যাবে । আকাশে বাতাসের গুঞ্জন এবং বিচার কার্যক্রমের প্রক্রিয়া , কাদের মোল্লার রায় ঘোষণা ইত্যাদি কার্যক্রমের ভিতর দিয়ে টেলিভিশন টক শোতে এমন আলোচনাও শোনা যায় যে জামাতের সাথে আওয়ামীলীগ ভোটের রাজনীতি নিয়ে একটি সমঝোতা করার চেষ্টা চলছে । এই সমঝোতায় জামাতের কোন ক্ষতি হবে না । হবে আওয়ামীলীগের ।

আওয়ামীলীগ তার রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত হবে । এমনিতেই আভ্যন্তরীণ দন্দ এখন তুঙ্গে । তার উপর আদর্শ বিচ্যুত হলে এই দলের বিপর্যয় ঠেকানো মুশকিল । বরং আদর্শিক দৃঢ়টা দলের বিপর্যয় থেকে দলকে রক্ষা করে । কর্মী সমর্থকদের আদর্শ ছাড়া দলের কাছে আর কিছুই চাওয়ার নেই ।

আজকের হাজার হাজার মানুষ যে শাহবাগের মোড়ে জমা হয়েছে তা কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আড়ালে আওয়ামীলীগের আদর্শ বিচ্যুতির প্রতিবাদ । জামাতের সাথে নির্বাচনী সমঝোতা করলে আওয়ামীলীগকে কিছু ছাড় দিতে হবে আর সেই ছাড় হবে বিচার প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত ছাড় যার অর্থ রাজনৈতিক ছাড় , রাজনৈতিক ছাড় দলের অস্থিত্বকে বিপন্ন করবে । আবার শ্রেণী স্বার্থের অবস্থান থেকে দেখলে আওয়ামীলীগ , জামাত দুই দলই বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রতিনিধি । যদিও জামাত ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করে কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সাথে জামাতের কোন দন্দ লক্ষ্য করা যায় না । বরং সুসংঘটিত রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি থেকে জামাত অনেক বেশী সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে ।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ জামাতকে ঘিরেই হচ্ছে । যা গত এক বছর আগেও দৃশ্যমান হয়নি । ক্ষমতা দখল ও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার দন্দে আওয়ামীলীগ বিএনপির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়ে অনেকটা “নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করার মত “ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.