স্বাধীন বাংলাদেশে জন্ম
সিকিমের কথা মনে পড়ে? ভারতের উত্তরাংশে তিব্বতের পাশে ছিল ওই দেশ। দেশটির স্বাধীন রাজাদের বলা হতো চোগওয়াল। ভারতে বৃটিশ শাসন শুরুর পূর্বে পার্শ্ববর্তী নেপাল আর ভুটানের সাথে যুদ্ধ করে স্বাধীন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে সিকিম। বৃটিশরা আসার পর তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েও নেপালের বিরুদ্ধে ছিল সিকিম। রাজা ছিলেন নামগয়াল।
১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের পর ভৌগোলিক কারণে সিকিমের গুরুত্ব বেড়ে যায়। ১৯৭০ সালে ভারতের নীলনকশায় লেন্দুপ দর্জির সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে। রাজপ্রাসাদের সামনে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে ইন্দিরাগান্ধী সরকার রাজার নিরাপত্তায় সৈন্য পাঠায়। রাজা গৃহবন্দী হন। বিএস দাশ নামের একজনকে ভারত সরকার সিকিমের প্রধান প্রশাসক নিয়োগ করে।
এই সময় আমেরিকান এক পর্বতারোহী গোপনে সিকিম প্রবেশ করেন এবং দেশটির স্বাধীনতা হরণের খবর বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেন। ততক্ষণে সব শেষ। ভারতের তাঁবেদার লেন্দুপ দর্জির নেতৃত্বাধীন সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস (এসএনসি) ১৯৭৪ সালে পাতানো নির্বাচনে সংসদের ৩২ আসনের মধ্যে ৩১টি বিজয়ী হয়। নির্বাচনে জিতে ১৯৭৫ সালের ২৭ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী লেনদুপ দর্জি রাজতন্ত্র বিলোপ করলে ভারতীয় সেনারা সিকিমে ঘাঁটি গেড়ে বসে। অতপর ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট।
বন্দুকের মুখে ভোটারদের ‘হ্যাঁ’ ভোট দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭৫ সালের ৬ এপ্রিল ভারতীয় সৈন্যরা রাজাকে বন্দী করে প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তারা স্বাধীন রাষ্ট্র সিকিমকে গ্রাস করে ভারতের প্রদেশ করেন। লেন্দুপ দর্জি স্থান ইতিহাসে কোথায় হয়েছে সবার জানা। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযদ্ধে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ লেন্দুপ দর্জিতে ভরে গেছে।
শত শত হাজার হাজার লেন্দুপ দর্জির বিচরণ সর্বত্র। টেলিভিশনের টকশো আর পত্রপত্রিকার লেখালেখিতে তারা দিল্লির গীত গাইছেন। ঢাকার স্বার্থের চেয়ে দিল্লির স্বার্থকে বড় করে দেখছেন। তথাকথিত জঙ্গি নামের জুজুর ভয় দেখিয়ে জনগণকে দিল্লির মোসাহেবদের দলকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। বিনিময়ে তারা কি পাচ্ছেন তা তারাই ভালো জানেন।
তবে তাদের আচরণে বোঝা যায় কথায় কথায় দিল্লি সফর এবং কলকাতা তাদের যেন মাতৃভূমি করে ফেলেছেন। এই নব্য লেন্দুপ দর্জিদের ঠেকাতে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনীতিক ও সাধরণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে হবে। ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী। এখন ভূখ- দখলের প্রয়োজন পড়ে না। ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি এবং রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই হলো।
একজন হাই কমিশনারের পদ কত বড়? ঢাকায় কর্মরত ভারতীয় হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণ ডাকলেই মন্ত্রীরা ছুটে যান তার বাসায় আর অফিসে। কূটনৈতিক শিষ্টচার ভঙ্গ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে লেন্দুপ দার্জি মার্কা বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এটা কিসের আলামত? মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করা দেশের নেতানেত্রীরা কি মেরুদ-হীন? বুদ্ধিজীবীরা কি বিবেক বন্ধক রেখেছেন ভারতীয় রুপির কাছে? মিডিয়াগুলো কি দিল্লির কাছে বন্দী? নাকি কিছু মিডিয়া ওদের টাকায় প্রতিষ্ঠার কারণে দেশের চেয়ে তাদের প্রতি দরদ বেশি দেখানো হচ্ছে? অনেক মিডিয়ায় ভারত থেকে কর্মকর্তা শিল্পী আমদানি করা হচ্ছে। এর নেপথ্যে কি দিল্লির দাসত্বের মানসিকতা দায়ী? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য স্বাধীন বাংলাদশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হয় দিল্লিতে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ঢাকা থেকে দিল্লি গিয়ে ‘সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন’ নিশ্চিত করতে দেনদরবার করেন।
সার্বভৌম দেশের ১৬ কোটি মানুষের ভাগ্য যেন দিল্লির মর্জির ওপর নির্ভরশীল। দিল্লি প্রকাশ্যে বাংলাদেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ করছে অথচ বুদ্ধিজীবী, বিদ্যাজীবী, সুশীল সমাজ, সাংস্কৃতিকসেবী এবং রাজনীতিকদের বড় একটি অংশ লেন্দুপ দর্জির মতো মিডিয়ায় দিল্লির গুণকীর্তনে সর্বদা ব্যস্ত। শেখ হাসিনা সরকারের ‘দিল্লি তাঁবেদারি’ নীতিতে দারুণ খুশি। প্রবাদে আছে ‘আত্মীয় বদল করা যায়/ কিন্তু প্রতিবেশী বদল করা যায় না। ’ প্রশ্ন হলো ভারত আমাদের কেমন প্রতিবেশী? বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কেমন? ভারতের সঙ্গে কি আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক? নাকি তোষামোদের সম্পর্ক? ৪২ বছরে ভারত কি বাংলাদেশের কাছে বন্ধুত্বের কোনো নিদর্শন দেখিয়েছে? মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি কি বাস্তবায়ন হয়েছে? তারপরও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে দিল্লির দাদাগিরিতে এদেশের লেন্দুপ দর্জিদের এত আগ্রহ কেন? গতকালও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক এক কমিটি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিয়ে শুনানিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
দিল্লিতে বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এসব নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বিদেশিরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন হলে অসুবিধার কি আছে? তারা আমাদের ভালোর জন্য বলছেন না খারাপের জন্য বলছেন সেটা দেখতে হবে। কামাল হোসেনের এ বক্তব্য মেনে নিয়েও বলা যায় ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী। বাংলাদেশের মতো স্বল্প উন্নত দেশের উচিত সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্মানজনক সম্পর্ক।
কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার কি ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়েছেন না তাঁবেদারির সম্পর্ক? টেলিভিশনের টকশোগুলোতে আলোচকদের অনেকেই কথায় কথায় পাকিস্তানের আইএসআইকে টেনে এনে বিএনপিসহ ইসলামী ধারার দলগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা খোঁজা চেষ্টা করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে ওই মুখচেনা আলোচকরা আবার দিল্লির তোয়াজ করেন। ওইসব ব্যক্তির চোখে নিজ দেশে ‘র’এর অবাধ বিচরণের চিত্র ধরা পড়ে না। ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনার জন্য মরিয়া তারা। আসলে বাংলাদেশে সে ধরনের কোনো জঙ্গির প্রতি বিএনপি বা কোনো ইসলামী ধারার দল সমর্থন করে? চ্যানেল আই-এর তৃতীয় মাত্রায় বিজেপির চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেছেন, হঠাৎ হঠাৎ আনছারুল্লাহ নামের জঙ্গি দল আবিষ্কার করা হয়।
হঠাৎ হঠাৎ এভাবে জঙ্গি আবিষ্কারের নেপথ্যে কি? বাংলাদেশের মানুষ কখনো জঙ্গিদের প্রশ্রয় দেয় না। অথচ বিশেষ বিশেষ সময় জঙ্গি আবিষ্কার করা হয় এবং দিল্লির তাঁবেদারখ্যাত মিডিয়াগুলো সে খবর ফলাও করে প্রচার করে। মার্কামারা ওই বুদ্ধিজীবী আর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ভারতে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে বাংলাদেশের সমূহ বিপদ হতে পারে তা নিয়ে শঙ্কা নেই। সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে বাংলাদেশি নিহত হলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যখন বলেন, সীমান্তে নিরপরাধ মানুষ মারা পড়েনি। অপরাধীরা মারা গেছে।
তখন ওই তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা নীরব হয়ে যান। ডা. দীপু মনিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া এবং তার ঘন ঘন বিদেশ সফর নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে একজন কূটনীতিক বলেছিলেন ‘ছাগল দিয়ে হালচাষ’ করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রটোকল ভঙ্গ করে কলকাতা ছুটে গিয়ে দীপু মনি মমতার চেয়ারের পাশে কাচুমাচু হয়ে বসে তোয়াজ করার দৃশ্য মানুষ দেখেছে। সেই মমতা তিস্তা চুক্তি ঠেকিয়ে দিয়েছেন। বুদ্ধিজীবীদের এসব চিত্র চোখে পড়ে না।
দিল্লির সাউথ ব্লকে শিব শঙ্কর মেনন বাংলাদেশের রাজনীতির গতি প্রকৃতি চূড়ান্ত করায় ঢাকার লেন্দুপ দর্জি মার্কা বুদ্ধিজীবীরা বাহবা বাহবা দেন। ভারতের সঙ্গে আরো সম্পর্ক গভীর করার প্রস্তাব করেন। টেলিভিশনের টকশোগুলোতে আলোচকদের অনেকেই কথায় কথায় পাকিস্তানের আইএসআইকে টেনে এনে বিএনপিসহ ইসলামী ধারার দলগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা খোঁজা চেষ্টা করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে ওই মুখচেনা আলোচকরা আবার দিল্লির তোয়াজ করেন। ওইসব ব্যক্তির চোখে নিজ দেশে ‘র’এর অবাধ বিচরণের চিত্র ধরা পড়ে না।
ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনার জন্য মরিয়া তারা। আসলে বাংলাদেশে সে ধরনের কোনো জঙ্গির প্রতি বিএনপি বা কোনো ইসলামী ধারার দল সমর্থন করে? চ্যানেল আই-এর তৃতীয় মাত্রায় বিজেপির চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেছেন, হঠাৎ হঠাৎ আনছারুল্লাহ নামের জঙ্গি দল আবিষ্কার করা হয়। হঠাৎ হঠাৎ এভাবে জঙ্গি আবিষ্কারের নেপথ্যে কি? বাংলাদেশের মানুষ কখনো জঙ্গিদের প্রশ্রয় দেয় না। অথচ বিশেষ বিশেষ সময় জঙ্গি আবিষ্কার করা হয় এবং দিল্লির তাঁবেদারখ্যাত মিডিয়াগুলো সে খবর ফলাও করে প্রচার করে। মার্কামারা ওই বুদ্ধিজীবী আর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ভারতে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে বাংলাদেশের সমূহ বিপদ হতে পারে তা নিয়ে শঙ্কা নেই।
সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে বাংলাদেশি নিহত হলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যখন বলেন, সীমান্তে নিরপরাধ মানুষ মারা পড়েনি। অপরাধীরা মারা গেছে। তখন ওই তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা নীরব হয়ে যান। ডা. দীপু মনিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া এবং তার ঘন ঘন বিদেশ সফর নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে একজন কূটনীতিক বলেছিলেন ‘ছাগল দিয়ে হালচাষ’ করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রটোকল ভঙ্গ করে কলকাতা ছুটে গিয়ে দীপু মনি মমতার চেয়ারের পাশে কাচুমাচু হয়ে বসে তোয়াজ করার দৃশ্য মানুষ দেখেছে।
সেই মমতা তিস্তা চুক্তি ঠেকিয়ে দিয়েছেন। বুদ্ধিজীবীদের এসব চিত্র চোখে পড়ে না। দিল্লির সাউথ ব্লকে শিব শঙ্কর মেনন বাংলাদেশের রাজনীতির গতি প্রকৃতি চূড়ান্ত করায় ঢাকার লেন্দুপ দর্জি মার্কা বুদ্ধিজীবীরা বাহবা বাহবা দেন। ভারতের সঙ্গে আরো সম্পর্ক গভীর করার প্রস্তাব করেন। মহাজোট সরকারের দিল্লিকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করায় গোটা বিশ্বের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে।
সোজা কথায় বলা যায় বাংলাদেশ এখন কার্যত ‘একঘরে রাষ্ট্র’। দিল্লির আয়নায় বিশ্বকে দেখতে গিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ ভারতের পদতলে ঠেলে দিয়েছে। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা বিশ্ব। ঢাকা নিজ দেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মধ্যে ফেলে ভারতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যস্ত হয়েছে। ৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭ রাজ্যের বিদ্রোহ দমনে (মূলত স্বাধীনতাকামী) সর্বাত্মক সহযোগিতা, ফ্রি ট্রানজিট, বাংলাদেশের জন্য ধ্বংসাত্মক টিপাইমুখ প্রকল্পের অনুমোদন, সুন্দরবনের জন্য সর্বনাশা রামপাল বিদ্যুৎকন্দ্রের উদ্বোধন, বন্দর সুবিধাসহ ভারতের দীর্ঘদিনের দাবিগুলো একে একে পূরণ করেছে।
ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করতে ফেনী নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণের মতো আত্মঘাতী কাজও করেছে। বিনিময়ে সীমান্তে হত্যা অব্যাহত রেখেছে বিএসএফ। বর্তমান সরকারের মেয়াদে ফেলানীসহ প্রায় ৫শ নিরীহ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। ফেলানী হত্যার পর প্রতিবাদের বদলে সীমান্ত হত্যার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। ভারতের পক্ষ থেকে তিস্তা চুক্তি সই এবং সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়নে বার বার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় ৫০ দফার যৌথ ঘোষণাপত্র সইয়ের মাধ্যমে মূলত বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে কার্যত দিল্লির কাছে বিকিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই ঘোষণাপত্রে ট্রানজিট সুবিধা, বন্দর ব্যবহার, আশুগঞ্জ নৌবন্দরকে পোর্ট অব কল হিসেবে ঘোষণা দেয়া, সন্ত্রাস দমনে (ভারতের বিদ্রোহ দমন) সহায়তা, টিপাইমুখ প্রকল্পে সম্মতি দেয়াসহ ভারতের দীর্ঘদিনের চাহিদাগুলো পূরণে অঙ্গীকার করা হয়। অন্যদিকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ, তিস্তা চুক্তি সই, সিটমহল বিনিময়, সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়নসহ বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোর ব্যাপারে কেবল আশ্বাস দেয়া হয় ঘোষণাপত্রে। সীমান্তে সন্ত্রাস দমন এবং মাদক চোরাচালান রোধে ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী ৩টি চুক্তি সই হয়। ওই চুক্তির মোড়কে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭ রাজ্যে বিদ্রোহ দমনে সম্পৃক্ত করে ঢাকাকে।
ওই ৩টি চুক্তির ব্যাপারে সংসদে বা অন্য কোথাও কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি। কেউ জানে না ওই চুক্তিতে কী আছে। চুক্তি সম্পর্কে তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস বলেছিলেন, এই চুক্তির আওতায় দু’দেশের গোয়েন্দা সদস্যদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। ওই চুক্তির পর ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অবাধে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ পেয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ভারতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে এমন খবর নেই। ভারতের বিদ্রোহ দমনে যুক্ত হওয়ার ফলে বাংলাদেশ বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে।
২০১১ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকায় কর্মরত ভারতীয় হাইকমিশনার রঞ্জিত মিত্র বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডে ভারত সরকার বাংলাদেশকে ট্রানজিট ফি দিতে রাজি আছে। পরের দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ঘোষণা দিলেন, ভারতের কাছে ট্রানজিট ফি চাওয়া হবে অসম্মান। প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ঘোষণা দিলেন, ভারতকে ট্রানজিট দিতে কোনো চুক্তি সইয়ের প্রয়োজন নেই। চুক্তি ছাড়াই ভারতকে ট্রানজটি সুবিধা দেয়া হবে। নৌ-প্রটোকলের আওতায় পরীক্ষামূলক ট্রানজিটের নামে স্থায়ী ট্রানজিট দেয়া হয়েছে।
সীমান্ত হত্যাকে কার্যত বৈধতা দিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, সীমান্ত হত্যা দু’দেশের সম্পর্কের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বার বার সীমান্ত হত্যা বন্ধের ব্যাপারে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছেন। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সীমান্তের পরই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক সীমান্তত্ম হিসেবে বিশ্বে আজ পরিচিত। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ ছাড়া চীন, পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটানের সীমান্ত রয়েছে।
তবে একমাত্র বাংলাদেশ সীমান্তেই ভারত নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র, অধিকারসহ বিভিন্ন জাতীয় ও অন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী গত ৫ বছরে প্রায় ৫০০ নিরীহ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। নির্যাতনের শিকার হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। ভারতীয় বাহিনী গুলি করে বাংলাদেশিদের মারলেও বিজিবির গুলি ছোড়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। সরকারের নতজানু নীতির কারণে বিজিবি কার্যত অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
এখন আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় বসানোর মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা। প্রশ্ন হলো এ অবস্থায় দেশপ্রেমী জাতীয়তাবাদী নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা নীরব কেন? সামনে অগ্নিপরীক্ষা। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার এই পরীক্ষায় এদেশের লেন্দুপ দর্জিরা কি বিজয়ী হবেন? নাকি দেশপ্রেমীরা বিজয়ী হবেন? Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।