বুধবার সকালে তেজগাঁও, আশকোনার হাজী ক্যাম্প ও পুরান ঢাকার আদালত পাড়ায় হাতবোমা ফাটিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা।
অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বাড্ডায়।
এসব ঘটনায় ছাত্রদলের দুইজন এবং জামায়াত-শিবিরের আট জনকে আটক করেছে পুলিশ। আহত হয়েছেন এক পুলিশ সদস্য।
অবরোধের মধ্যে হাতবোমার বিস্ফোরণ ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক থাকলেও মঙ্গলবারেরে তুলনায় বেশি যানবাহন দেখা গেছে এদিন।
পুলিশের ডেমরা জোনের সহকারী কমিশনার মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও নগরীতে গণপরিবহন চলাচল করছে।
অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর সায়দাবাদ ও মহাখালী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি।
গাবতলী টার্মিনাল থেকে দূর পাল্লার বাস না ছাড়লেও স্বল্প দূরত্বের কিছু গাড়ি ভোরে রাজধনী ছেড়ে যায় বলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের গাবতলী শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
কল্যাণপুর, শ্যামলী এলাকায় দূর পাল্লার বাসের কাউন্টারগুলো বুধবার সকালেও বন্ধ দেখা যায়।
ফাইল ছবি সোহাগ পরিবহনের কলসেন্টার অ্যাটেনডেন্ট রাশেদা আক্তার শান্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অবরোধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সোহাগের কোনো বাস ঢাকা ছাড়বে না।
ফাইল ছবি
কল্যাণপুরে ঈগল পরিবহনের কাউন্টারে কোনো যাত্রীকে দেখা যায়নি। কাউন্টার ম্যানেজার রতন বলেন, “অবরোধে বাস চলছে না, তাই যাত্রীও নেই। ”
যাত্রী কম থাকায় সদরঘাটে এদিনও লঞ্চ চলছে তুলনামূলকভাবে কম।
বিআইডিব্লিউটিসির টিআই মাহফুজুর রহমান জানান, দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে আগের রাতে ছেড়ে আসা ২৮টি লঞ্চ ভোরে ঢাকার সদরঘাটে ভিড়েছে। আর সকালে সদরঘাট ছেড়ে গেছে তিনটি লঞ্চ।
অবরোধের প্রথম দিন ৪৮টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যায়।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, অবরোধের দ্বিতীয দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বিজি প্রেসের পিছনের গলিতে টহল পুলিশের দিকে হাতবোমা ছোড়ে অবরোধকারীরা।
এ সময় ধাওয়া দিয়ে ছাত্রদলের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন ও মোশারাফ নামে দুই জনকে আটক করা হয়।
আটকদের কাছে একটি ক্যামেরা পাওয়া গেছে জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “পুলিশকে ককটেল মেরে ছবি তুলে গণমাধ্যমকে দেয়ার জন্য তারা ক্যামেরা রেখেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ”
এরপর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উত্তর বাড্ডায় জামায়াত-শিবির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার লুৎফুল কবীর জানান, জামায়ত-শিবির কর্মীরা অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে নাশকতার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে এক পুলিশ সদস্য আহত হন।
পরে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
ঘটনাস্থল থেকে শিবিরের চার কর্মীকে আটক করা হয় বলে জানান উপ-কমিশনার লুৎফুল কবীর।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিমানবন্দর থানার আশকোনার হাজীক্যাম্পের সামনে পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় অবেরোধকারীরা। এ সময় তিনটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয় তারা।
বিমানবন্দর থানার ওসি শামসুদ্দিন সালেহ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ৫০/৬০ জনের একটি দল হঠাৎ রাস্তায় বেরিয়ে পুলিশের দিকে ২০ থেকে ৩০টি হাতবোমার নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়লে পালিয়ে যায় তারা।
ঘটনাস্থল থেকে জামায়াত-শিবিরের চার কর্মীকে আটক করা হয় বলে জানান পুলিশের বিমানবন্দর জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার এসএ নওয়াজি।
তিনি বলেন, এই চার জন আগের দিন উত্তরা ছয় নম্বর সেক্টরে পুলিশ কর্মকর্তার মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ এবং দক্ষিণখানে ডাচ বাংলা ব্যাংক ও ব্রাক ব্যাংকের দুটি এটিএম বুথে ভাংচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি।
এদিকে বেলা ১১টার দিকে পুরান ঢাকার আদালত পাড়ার আশেপাশের এলাকায় বোমাবাজি করেছে অবরোধকারীরা।
বিডিনিউজ টোন্টিফোর ডটকমের আদালত প্রতিবেদক প্রকাশ বিশ্বাস জানান, ১১টা ১০ মিনিটের দিকে জনসন রোডে ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে রাস্তায় দুটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
এর আধা ঘণ্টা পর বাহাদুরশাহ পার্কের কাছে ফাটানো হয় আরো চারটি ককটেল। তবে এসব ঘটনায় কেউ আহত হননি।
পুলিশের লালবাগ অতিরিক্ত উপ কমিশনার আবদুস সালাম জানান, তার এলাকায় সকাল থেকে বড় ধরনের কোনো গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি।
গত সোমবার নির্বাচন কমিশন ৫ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। এর কয়েক ঘণ্টার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের ডাক দেন।
কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় অন্তত আট জনের মৃত্যু হয়েছে। হাতবোমা ও গাড়িতে আগুনে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।