তৃতীয় দফায় তিন দিনের অবরোধ শুরুর আগেই গতকাল দুপুরের পর রাজধানীতে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। দুপুরের পর পুলিশের পিকআপ ভ্যানে পেট্রল বোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেওয়াসহ বেশ কয়েকটি যানবাহনে অগি্নসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। পেট্রল বোমা ও ককটেল বিস্ফোরণে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বাড্ডা এলাকা। পুলিশ এ সময় ৩০ রাউন্ডের বেশি টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
গত রাতে শ্যামপুরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে যাত্রী জাহানারা বেগম (৫০) দ্বগ্ধ হন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। পুলিশ জানায়, অবরোধের সমর্থনে ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা রাজধানীতে ভাঙচুর ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটায়। এ ছাড়া জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের প্রতিবাদে শিবির কর্মীরা ভয়ঙ্কর এসব তাণ্ডব চালায়।
পুলিশ গতকাল বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল ও সহ-সভাপতি শরিফ উদ্দিন জুয়েলসহ অন্তত ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। দুই দফায় টানা ছয় দিন অবরোধ কর্মসূচি পালনের পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি আজ ভোর ছয়টা থেকে শুরু হচ্ছে। তৃতীয় দফার এই অবরোধ কর্মসূচি শেষ হবে আগামী মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায়। ৩০ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া দুই দফার ১৩১ ঘণ্টার অবরোধে প্রাণ হারান ৩০ জন। যানবাহনে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো, সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনায় সাধারণ মানুষ ছিল আতঙ্কিত।
এমনই এক পরিস্থিতিতে এক দিনের বিরতিতে আজ থেকে আবারও শুরু হচ্ছে টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি। ঢাকা মহানগরীতে অবরোধ ছাড়াও আগামীকাল রবিবার সকাল ৬টা থেকে টানা ২৪ ঘণ্টার হরতালও পালন করবে দলটি। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এই হরতাল কর্মসূচি ডাকা হয় বলে জানিয়েছেন মহানগরের সদস্য সচিব আবদুস সালাম। গত বৃহস্পতিবার সকালে দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ অজ্ঞাত স্থান থেকে পাঠানো এক ভিডিওবার্তায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তবে ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাহার ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি মানা হলে অবরোধের এই কর্মসূচি তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
হরতাল ও অবরোধে গণমাধ্যমের যানবাহন, অঙ্েিজনে ব্যবহৃত গাড়ি, খাবার দোকান, ঔষধে ব্যবহৃত যানবাহন আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে বিএনপি। অবরোধের আগের দিন গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতা দেখা দেয়। জুমার নামাজের পর রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পুলিশের পিকআপসহ চারটি যানবাহনে আগুন দিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। আগুন ধরিয়ে দেওয়া গাড়ির মধ্যে যাত্রীবাহী বাস রয়েছে। এ ছাড়া তারা ২০ থেকে ২৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে।
গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার নুরুল আলম জানান, এ সময় বিআরটিসির একটি বাসও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি জানান, জুমার নামাজের পরপরই উত্তর বাড্ডার কুয়েতি মসজিদ থেকে ছাত্রশিবিরের একটি মিছিল বের হয়। পরে ওই মিছিল থেকে প্রগতি সরণিতে গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা চালায় তারা। তারা পুলিশের গাড়ির দিকে পেট্রল বোমা ছুড়লে আগুন ধরে যায়। এ ছাড়া একটি যাত্রীবাহী বাসে তারা আগুন দেয় এবং কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদ এবং শনিবার ঘোষিত অবরোধের সমর্থনে জামায়াত-শিবির কর্মীরা উত্তর বাড্ডা কামিল মাদ্রাসার দিক থেকে মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে পুলিশ টিয়ার শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
রাজধানীর ফার্মগেটের কাছে খামারবাড়ির সামনে হোটেল সোনারগাঁওয়ের মাইক্রোবাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বিকাল ৪টায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হোটেল সোনারগাঁওয়ের একটি মাইক্রোবাসে যাত্রীবেশে কয়েকজন ওঠে। পরে বাসটি খামারবাড়ির সামনের সড়কে আসলে দুর্বৃত্তরা মাইক্রোটিতে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে মিরপুর-১০ এর আল হেলাল হাসপাতালের সামনের সড়কে ১০ থেকে ১২ জন যুবক একটি মিছিল বের করেন। এ সময় তারা একটি বাসে ভাঙচুর চালান এবং পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মিছিলকারীরা পালিয়ে যান। মিরপুর বিভাগীয় পুলিশের উপ-কমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। পান্থপথে শিবির কর্মীরা একটি প্রাইভেটকারে গানপাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এতে গাড়িটি মুহূর্তের মধ্যে ভস্মীভূত হয়। নতুনবাজারে অবরোধের সমর্থনে শিবির কর্মীরা একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয়। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের গণদাবি না মানা পর্যন্ত লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশ অচল করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী জোট। এতেও কাজ না হলে আগামী সপ্তাহে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি।
প্রয়োজনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অসহযোগ কর্মসূচিও ঘোষণা করা হতে পারে। এ জন্য দলের সারা দেশের প্রতিটি ইউনিটে নেতা-কর্মীদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।