বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর কর্নেলহাটসহ বিভিন্ন স্থানে এবং পটিয়া ও সীতাকুণ্ডে অবরোধকারীরা তাণ্ডব চালায়।
সংঘর্ষ চলাকালে সীতাকুণ্ডে এক অবরোধকারী গুলিবিদ্ধ হন। কর্নেলহাট এলাকায় ইটের আঘাতে আহত হন ১১ পুলিশ ও এক পথচারী। এসব ঘটনায় কমপক্ষে ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম নগরীর প্রবেশ পথ কর্নেলহাট ও একে খান মোড় এলাকায় সকাল ১০টার দিকে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করে অবরোধকারীরা।
এ সময় তারা রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও বিভিন্ন পয়েন্টে টায়ার ও কাঠ জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এ কে খান এলাকায় রেল লাইনের স্লিপারেও আগুন দেয় অবরোধকারীরা।
অবরোধে পুলিশ বাধা দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ। বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা মূল সড়কে অবস্থান নিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ছুড়তে থাকে। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংঘর্ষের শুরুতেই কর্নেলহাট মোড়ে অবরোধকারীদের ছোড়া ইটে মাথায় আঘাত পান পথচারী হান্নান। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বহিরাগত অনেককে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে দেখা গেছে।
এ কে খান এলাকায় জাকির হোসেন সড়কে অবস্থান নিয়ে পুলিশের দিকে বৃষ্টির মত ইট ছুড়তে থাকে অবরোধকারীরা। এ সময় জাকির হোসেন সড়কের আকবর শাহ কবরস্থান সংলগ্ন এলাকায় এবং অলঙ্কার মোড় থেকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পুলিশ সাঁজায়ো যান থেকে টিয়ার সেল ছুড়তে থাকে।
গোয়েন্দা পুলিশের অন্য একটি দলও গলিতে অবস্থান নিয়ে রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে। এরপর আশেপাশে অলি-গালিতে অবস্থান নেয় অবরোধকারীরা।
সংঘর্ষ চলাকালে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে আটকা পড়ে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও রোগীরা। এক পর্যায়ে পুলিশের বাধার মুখে দুপুর ১টার দিকে এ কে খান মোড় সংলগ্ন রেল লাইন ধরে পালিয়ে যায় অবরোধকারীরা।
সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে ছিল বিজিবি ও র্যাব। এ কে খানে সংঘর্ষ শেষ হলেও কর্নেলহাট এলাকা অবরোধকারীদের তাণ্ডব চালিয়ে গেছে দীর্ঘ সময়।
কর্নেলহাট মোড় থেকে সিটি গেইট পর্যন্ত সড়কে টায়ার, কাঠ ও অন্যান্য সামগ্রী জড়ো করে আগুন দেয় অবরোধকারীরা।
তবে পুলিশের ধাওয়া পিছু হটার সময় সিটি গেইট এলাকায় চারটি মোটর সাইকেলে আগুন দেয় তারা।
এসময় তারা সিটি গেইট পুলিশ বক্সের ভেতর আগুন দিলে পুলিশ বক্সের আসবাব এবং পুলিশের একটি মোটর সাইকেল পুড়ে যায়।
বিকাল সোয়া তিনটার দিকে পুলিশ পুরো এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নগরীর আকবর শাহ, পাহাড়তলি, ডবলমুরিং, পাঁচলাইশ, খুলশী, বন্দর থানার পুলিশ সদস্য এবং বিভিন্ন অঞ্চলের সহকারী কমিশনার ও অতিরিক্ত কমিশনাররা অংশ নেন।
বিকাল চারটার পর থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কয়েকশ পুলিশ আশেপাশে এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি চালায়।
নগর পুলিশের পশ্চিমাঞ্চলের উপ-কমিশনার সুজায়েত ইসলাম বলেন, সংঘর্ষে ১১ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শটগানের গুলি ও টিয়ার সেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
অটোরিকশায় আগুন, ব্যবসায়ী দগ্ধ
বুধবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন কাজীর দেউড়ি মোড়ে যাত্রীবাহী অটোরিকশায় আগুন দেয় অবরোধকারীরা।
এ সময় অটোরিকশায় থাকা ব্যবসায়ী আব্দুল আলম (৩২) অগ্নিদগ্ধ হন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কোতোয়ালী অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মির্জা সায়েম মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কাজীর দেউড়ি এলাকার ভিআইপি টাওয়ারে আলমের দোকান রয়েছে।
“সকালে দোকানে যাওয়ার পথে তাকে বহনকারী অটোরিকশায় আগুন দেয় অবরোধকারীরা।
”
ঘটনার পর কাজীর দেউড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাত জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
টেম্পো উল্টে চালকের মৃত্যু
এদিকে পটিয়া উপজেলার এ জে চৌধুরী কলেজ বাজারের অদূরে অবরোধকারীদের ধাওয়ায় টেম্পু উল্টে মারা যান চালক মোহাম্মদ এরশাদ আলী (২৫)।
নিহত এরশাদ উপজেলার বরিয়া গ্রামের তৈয়ব কোম্পানির ছেলে।
নিহত এরশাদের ভাই সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল ১০টার দিকে কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু এলাকা থেকে ফেরার সময় কলেজ বাজার এলাকায় পিকেটারদের ধাওয়ায় টেম্পোটি উল্টে যায়।
এসময় টেম্পো চাপায় গুরুতর আহত হন এরশাদ।
পিকেটাররা এরশাদকে মারধরও করে। পরে চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক এরশাদকে মৃত ঘোষণা করেন।
সীতাকুণ্ডে দুই পুলিশ গুলিবিদ্ধ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড থানাধীন বটতল ইয়াকুব নগর এলাকায় বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে অবরোধকারীরা।
এ সময় পুলিশ বাধা দিলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে অবরোধকারীদের ছোড়া গুলিতে সীতাকুণ্ড থানার দুই উপ-পরিদর্শক (এসআই) অনোয়ার হোসেন ও মিজানুর রহমান আহত হন।
সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ায় সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় দুই পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এক অবরোধকারীও গুলিবিদ্ধ হয়।
তবে গুলিবিদ্ধ অবরোধকারীর নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।
পরিদর্শক আমিনুল জানান, সংঘর্ষে আরো দুই অবরোধকারী আহত হয়েছেন।
ঘটনাস্থল থেকে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অন্যদিকে নগরীর বন্দর থানাধীন নিমতলা এলাকায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মিছিল করার চেষ্টা করে অবরোধকারীরা।
এ সময় পুলিশ বাধা দিলে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ২০টি ট্রাক ও কভার্ডভ্যানে নির্বিচারে ভাংচুর চালায় পিকেটাররা।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নির্বিচারে ২০টি গাড়ি ভাংচুর ও ২০টি ককটেল ছোড়ার পর আমরা বাধ্য হয়ে গুলি করি। ২০ রাউন্ড টিয়ার সেল ও ৪৩ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।