"অপার্থিব অপূর্নতা শব্দটা আমার বিশেষ প্রিয়। আভিধানিক ভাবে কী অর্থ তা ঠিক জানা না থাকলেও আমি আমার মত একটা ব্যখ্যা বানিয়ে নিয়েছি বৈকি। অপার্থিব অনূভূতির ক্ষেত্রে আমার মন-এ হয় যে, আমরা সব সময় অপূর্নতা বয়ে বেড়াই।
বিশালাকার টেবিলে বসে আছেন তারা ।
সংখ্যায় এগার বা পনের (অন্য সময় এখানে বসেন গোটা পঞ্চাশেক)।
অনেকেই পার করেছেন অর্ধশত বসন্ত, কেউবা আরও বেশী।
কয়েকজন প্রজাতন্ত্রের নিয়মিত কর্মকর্তা আর অন্যরা মাত্র কয়েক মাসের জন্য এসেছেন। সবার দৃষ্টি টেবিল সভাপতির দিকে।
পোষকের দিক থেকে খুবই সাধাসিধে ভদ্রলোক। কোথাও কোন অহংকারের ছাপ নেই।
তারপরও কী যেন আছে তার মাঝে? হয়তো দৃঢ় বাক্তিত্ত আর সতাতর আলো সেটি। এই আলোর প্রখরতা এতই বেশী যে, টেবিলের একপাশে বসে থাকা সেনাপতিদের কেতাব-ধুরস্থ পোশাকের কাঁধে থাকা তারকাগুলো ম্রিয়মাণ।
বৈঠকের সচিবের মাঝে কিছুটা সাবলীলতার অভাব কারো দৃষ্টি এড়ায় না। সাবলীলতার অভাব হবেইবা না কেন ? প্রজাতন্তের সব চেয়ে উঁচু পদে আসীন এই নিয়মিত কর্মকর্তার সামনে আছেন যারা তাদের মাঝে একাধিক জনই কয়েক দশক আগেই এই পদে ছিলেন। তাদের কাছেই তিনি শিখেছেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মাঝে দিয়েও কিভাবে জনগণের কাছে আসা যায়, ভালবাসাযায় দেশকে-মাটিকে-মানুষকে।
আরও কয়েকজন আছে যারা ছিলেন তার শিক্ষক বা শিক্ষিকা, যাদের কাছে থেকে তিনি শিখেছেন ন্যায় আর অন্যায়ের পার্থক্য। আর আছেন এক সওদাগর, যিনি মুনাফা করতে এসে মানুষকে শিখিয়াছেন কীভাবে শ্রমিকের মর্যাদা কীভাবে দিতে হয়।
কয়েক মাসের জন্য আসা এই মানুষগুলোর মাঝে আর এক মহিলা, পরনে সুতির শাড়ি, দৃষ্টিতে শিশুর মত সরলতা। সারাটা জীবন তিনি পার করেছেন মানবতার সনদ বাক্যের সেবা করে। তারপাশে বসে থাকা এলোমেলো চুলের মানুষটির কথা না বললেই চলে না।
খাদির ম্যাটম্যাটে রঙের পাঞ্জাবি পরা এই কবি সাহিত্য চর্চা করেছেন, লিখেছেন গল্প–নাটক-প্রবন্ধ । সাংবাদিকতায় তার দক্ষতা আর প্রজ্ঞা নিয়ে গত কয়েক দশকে কোন প্রশ্ন আসেনি। তিনি প্রমান করেছে একটা সামান্য বলপেন নিয়ে যুদ্ধ করা যায় সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে।
‘এটাই হয়তো আমাদের শেষ সুযোগ’ মৃদু কণ্ঠে বললেন সভাপতি। নাতিদীর্ঘ ভাষণের জন্য তার সুনাম কারো অজানা নয়।
‘এই তিন মাসের মাঝে আমাদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে জনগণের স্বাধীনতা, আর তারা বেছে নিবে তাদের প্রিয় নেতাদের’।
সেনাপতিদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘বন্দুকের নল আর জনগণের ব্যল্যাট, দুটোর মাঝে পরেরটা সবার চাহিদা। ’
‘কাজ শুরু করা যাক’ বলে তিনি ব্যাস্ত হয়ে পরলেন।
পাঁচ বছর পর
----------
কবির বৈঠকখানায় বসে আছেন তারা কয়েকজন । বয়সের ছাপ প্রকট চেহারায়।
সেই ছাপও চাপা পরছে তাদের দৃষ্টির হতাশায়। শান্ত গলায় কবি পাঠ করলেন
‘মুসাফির ছিলাম মোরা এগার জন,
আগলেছি ভাণ্ডার, খুঁজেছি কাণ্ডারি...
তোমাদের মতের মাঝে চিনেছি সুজন
তারপরও কেন আজ আহাজারি?
দাহকালের হৃদ্যতা এখন নাহয় থাক বাদ
তবু জাতির কাঁধে কেন ভূত নিয়ে সিন্দাবাদ’
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।