গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পোশাক কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নিহত হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে শ্রমিকদের উত্তেজিত করার পর শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার গভীর রাতে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পোশাক কারখানাসহ কয়েকটি ভবনে অগি্নসংযোগ করেন। এতে ৭ তলা দুটি ও একটি ১০ তলা ভবন, তৈরি কাপড় এবং কারখানার মেশিনপত্র, দুটি প্যাকেজিং শেডের মালামালসহ কমপক্ষে ২০টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কর্তৃপক্ষের দাবি, বহিরাগত লোকজন আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এ সময় কারখানা ছুটি ছিল।
কারখানার ম্যানেজার মুশফিকুর রহমান জানান, কারখানায় তিনটি ভবনে প্রায় ২৭ হাজার শ্রমিক কাজ করে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় কারখানা ছুটি হলে সবাই চলে যায়। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে ৩৫ জন পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল। রাত ১১টার দিকে কারখানার বাইরে কিছু শ্রমিক জটলা করলে পুলিশ সরে যাওয়ার নির্দেশ দিলে তারা তর্কে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ সময় শ্রমিকরা উত্তর পাশের একটি মসজিদ থেকে মাইকে পুলিশ একজন শ্রমিকের পেটে গুলি করে হত্যা করেছে, সবাই বেরিয়ে আসুন- বলে প্রচার করে। হত্যার খবর শুনে সাড়ে ১১টার দিকে আশপাশের শত শত শ্রমিক জড়ো হয় এবং ভেতরে প্রবেশ করে কয়েকটি কাভার্ড ভ্যান ও তিনটি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই আগুন ভয়াবহ দাবানলের রূপ লাভ করে। এ সময় শ্রমিকরা কারখানায় যাওয়ার রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ও ঝুট কাপড়ে আগুন ধরিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। খবর পেয়ে কারখানার কর্মকর্তা ও মালিক পক্ষের লোকজন ছুটে আসেন।
ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা গেলেও আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিতে পারছিলেন না। পরে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের সরিয়ে দিয়ে প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু হয়।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান লিটন জানান, আগুনে মালামাল ও যন্ত্রপাতিসহ একটি ১০ তলা ভবনের সম্পূর্ণ মালামাল, মেশিনপত্র ভস্মীভূত, পাশের আরও দুটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া কয়েকটি গাড়িও পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট চেষ্টা করে রাত ৩টার দিকে দুটি ৭ তলা ভবনের এবং পাশের দুটি প্যাকেজিং শেডের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
কিন্তু পানিস্বল্পতার কারণে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ১০ তলা ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি ভবনেই আগুন দেওয়া হয়। কারখানার পিএম দুলাল উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে বহিরাগত কিছু শ্রমিক বিক্ষোভ করতে করতে এসে কারখানার কর্মীদের বেরিয়ে এসে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে বলে। কিন্তু সাড়া না দিলে বহিরাগতরা ঢিল ছুড়ে চলে যায়। রাত ১০টার দিকে নিরাপত্তারক্ষীদের পালাবদলের সময় আবারও কিছু বহিরাগত শ্রমিক এসে ঢিল ছুড়তে শুরু করলে কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি দেয়।
পুলিশ এসে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় গুলিতে দুই শ্রমিক নিহতের গুজব ছড়িয়ে কয়েক হাজার লোক জড়ো করা হয়। রাত ১২টার দিকে তারা কারখানায় ভাঙচুর চালায় এবং আগুন দিয়ে সরে পড়ে। কারখানার মহাব্যবস্থাপক নূর ই আলম জানান, ১৮টি কাভার্ড ভ্যানও হামলাকারীরা পুড়িয়ে দিয়ে যায়, যার মধ্যে সাতটিতে পোশাক বোঝাই ছিল। ইসলাম গ্রুপের জিএম রফিকুল ইসলাম জানান, ইসলাম গ্রুপের একটি কারখানায় একই সময়ে শ্রমিকরা একটি কাভার্ড ভ্যান ও নিরাপত্তাকর্মীদের কক্ষে আগুন দেন।
গতকাল দুপুরে গাজীপুর জেলা প্রশাসক মো. নুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. আবদুল বাতেন কারখানা পরিদর্শন করেন। মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে তাণ্ডব চালানো হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানান। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিনকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন ও চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান কিংবা দায়িত্বশীল কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।