আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা (ডরমেটরী-আমার প্রথম নিবাস)- পর্ব ২



আমার লেখা এতজন পড়বে আমি ভাবতেই পারিনি। আপনাদের উৎসাহে আমি আজ আবার লিখতে বসছি। আমার আগের লিখার লিংক হচ্ছে পর্ব-১ বাংলাদেশ থেকে যখন রওনা হয় তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। জাপানে এসে যখন ডরমেটরীতে নামলাম তখনও বৃষ্টি হচ্ছে। ডরমেটরীর ফ্রন্ট গেট ডরমেটরীর ভিউ রাস্তা থেকে।

ডরমেটরীতে নামার পর আমরা ব্যাগপত্র নামিয়ে ডরমেটরীর ফ্রন্ট অফিসে ওয়েট করতেছিলাম তখন ডরমেটরীর ম্যানেজার মিস্টার তানাকা তার দুজন স্টাফ নিয়ে আমাদের রিসিভ করেন। তার সাথে একজন ইউনিভার্সিটির রিপ্রেজেনটেটিভ ছিল। উনি আমাদেরকে পরেরদিনের সিডিউল দেন। তারপর আমাদেরকে ম্যানেজারের হাতে বুঝায় দিয়ে উনি চলে গেলেন। এরপর ম্যানেজার আমাদের নিয়ে গেলেন মিটিং রুমে।

আমি ছাড়াও আরও চারজন স্টুডেন্ট ছিল আমার সাথে যাদের সাথে আমার বাসে দেখা হয়। মিটিং রুমে আমাদেরকে ১টা খাম দেয় যার মধ্যে ডরমেটরীর নিয়মাবলীসহ অনেকগুলা ফরম ছিল। এরপর ম্যানেজার আমাদের পুরা একঘন্টা লেকচার দেন। এই লেকচারে উনি আমাদের ডরমেটরীর ইতিহাস, এখানকার নিয়মাবলী, শহরের চলাচলের নিয়মসহ যত নিয়মকানুন ছিল সব ব্যাখা করেছেন। এই লেকচারে জানতে পারলাম এই ডরমেটরী এই বছর শুরু হয়েছে এবং আমরাই এখানকার প্রথম স্টুডেন্ট।

এরপর আমাদের ফরম পুরণ করতে বলেন। ফরম পুরন শেষে আমাদেরকে রুমের চাবি দিলেন এবং একটা কী কার্ড দিলেন। এই কী কর্ডের মজেজা অবশ্য পরে বুঝেছি। আমি ভাবলাম যাক অবশেষে সব ঝামেলা শেষ হচ্ছে। কিন্তু না এরপর ম্যানেজার সাহেব আমাদেরকে স্টাফদের কাছে বুঝায় দিলেন।

স্টাফরা আমাদের নিয়ে গিয়ে শুরু করল নিয়মাবলীর প্রাকটিকাল ডেমোনেসট্রেশান। শুরু করল কিচেন দিয়ে। স্টোভ কিভাবে চালাতে হবে, বেসিন কিভাবে ইউজ করতে হবে ইত্যাদি। তবে টেনশেনে পড়ে গেলাম ময়লা ফেলার সিস্টেম দেখে। আমাদের দেশে তো সব ময়লা এক সাথে ফেলতাম, কিন্তু এখানে ময়লা আলাদা আলাদা করে ৬ রকম বাক্সে ফেলতে হবে।

ময়লা আলাদা করার জন্য একটা চার্ট আছে। এরপর নিয়ে গেল গোসলখানায়, তারপর লন্ড্রী রুমে। সব জায়গায় ব্যবহার করার ডেমোনেসট্রেশান শুনা লাগছে। অবশেষে দুপুর আড়াইটার দিকে আমাকে আমার রুমের সামনে নিয়ে আসেন। আমার রুমের দরজা আমার রুম রুমের জানালা থেকে দেখা বাইরের দৃশ্য রুমে ঢুকার পর আমার প্রথম রিঅ্যাকশান এ আমি কোথায় আসলাম ! এই রুমের সাইজ আমাদের বাসার স্টোর রুমের সমান।

স্টাফ আমাকে কিভাবে টয়লেট, এসি ব্যবহার করতে হবে শিখিয়ে দিয়ে চলে যান। এদিকে আমার খিদায় পেট চোঁ চোঁ করছে। গতকাল দুপুরে বিমানে খাওয়ার পর এখনও পেটে কিছু পড়েনি পানি ছাড়া। এদিকে আমি জাপানিজ জানি না, আর হালাল খাবার কোথায় পাওয়া যায় তাও জানি না। ভাবলাম এক বাংলাদেশী ভাইকে জানি, ওনার সাথে নেটে যোগাযোগ করি।

ল্যাপটপ বের করে লাইন দিতে গিয়ে দেখি বিরাট মুসিবত। এখানকার সকেটে বাংলাদেশের প্লাগ ঢুকে না। এখন যোগাযোগ করব কিভাবে! আমার কাছে তো ফোনও নাই। নিচে গিয়ে ম্যানেজার অফিসে যোগাযোগ করলাম। তারা আমাকে একটা পে-ফোন দেখায় দিল।

এই পে-ফোন ব্যবহার করতে গিয়ে বুঝলাম জাপান কত এক্সপেন্সিভ। প্রতি ২০ সেকেন্ডে ১০ ইয়েন লাগে। আমি যখন আসি তখন ১ইয়েন মানে ১.২৪ টাকা। কিন্তু আমি পে-ফোন ঠিকমত অপারেট করতে পারি নাই। ২০০ ইয়েন গচ্ছা দেওয়ার পর আরেকজন স্টাফ ইউকো-সান আমাকে তার মোবাইল থেকে যোগাযোগ করতে বলল।

এই ইউকো-সানের সাথে পরে আমার খুব ভাল সম্পর্ক হয়েছিল। যদিও উনি আমাকে ভারতীয় মনে করেছিল। উনার ফোন থেকে আমি বাংলাদেশী ভাই, যার নাম সাব্বির, কে ফোন করলাম। উনি ফোন পাওয়ার পর আমার ডরমেটরীতে চলে আসেন। উনি আমাকে তখনই ইউনিভার্সিটি শপে নিয়ে গেলেন।

ডরমেটরী থেকে ইউনিভার্সটিতে যাওয়ার রাস্তা দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল। ডরমেটরী থেকে ইউনিভার্সটিতে যাওয়ার রাস্তা রাস্তা হচ্ছে একটা পাহাড় পেরনো। দুইদিক মিলায়ে সর্বমোট ২৪২টা সিড়ি। প্রথমদিনই আমাকে ৬বার এই সিড়ি পেরনো লাগছিল। সাব্বির ভাই আমাকে শপে নিয়ে গিয়ে কেবল কিনে দিল।

তারপর খাবার হিসাবে তিনকোনা ভাত কিনে দিল। ভাতের মাঝখানে অল্প একটু মাছ, আর পুরাটা সামুদ্রিক শ্যাওলা দিয়ে মুড়ানো। রুমে ফিরে ঐ তিন কোনা ভাত খেয়ে রুমটা গুছালাম। তিনদিন ঐ তিন কোনা ভাত খেয়ে থেকেছি। এই সব করতে করতে ৬টা বেজে গেল।

সবশেষ করে ঘুমাতে গেলাম। (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।