পরিকল্পনাটা হটাৎ করেই হয়ে গেল। অথচ সামনেই 3rd year final পরীক্ষা। আমার ইচ্ছা ছিল পরীক্ষার পরে সিলেট যাবো। বর্ষার পরপর সব ঝর্নায় পানি থাকবে, লাউয়াছড়া বন, জাফলং, নদী সবকিছুর আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে এই সময়টাতে। কিন্তু মইনুল আর রুপকের উৎসাহ এবং যখন দেখলাম অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছে তখন এই সুযোগ মিস করার কোন মানে হয় না।
কারন বান্দরবান যেতে হলে ১০ জনের উপরে অবশ্যই থাকতে হবে, আমারা প্রাথমিকভাবে হলাম ১৪ জন।
কিন্তু ঝামেলা হল পরীক্ষা শেষ হবার পর। অনাকাঙ্খিত কারণে কেউ কেউ যেতে পারলো না,আবার নতুন কিছু যোগ হয়ে অবশেষে AFMC, ১২ ব্যাচের ১২ জন তৈরি হলাম এক বিশাল thrilling অভিযানের জন্য। You Tube থেকে বান্দারবান নিয়ে “বাংলার পথে” অনুষ্ঠানের সবগুলো পর্ব download করে ফেললাম। কি আগ্রহে যে বাকি দিনগুলো কাটল তা বুঝানো যাবে না।
(১১ ব্যাচের শরফুদ্দিন ভাইকে অজস্র ধন্যবাদ বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্য)
*অচেনা রহস্যের পথে*
যাত্রা শুরু, কলেজ গেট,এ এফ এম সি
(১৮/০৯/১২) সবার মধ্যে যেন নতুন প্রানের সঞ্চার হয়েছে। মনে হচ্ছে এভারেস্ট জয় করতে চলেছি। রাত ১১.০০- ট্রেনের জন্য অপেক্ষা............ বাংলাদেশের এই ট্রেনের উন্নতি কোনদিন হবে না ...... ১ ঘণ্টা লেট করে অবশেষে মহাশয় স্টেশনে পদার্পণ করলেন। সাথে সাথে সবাই তার উপর পদার্পণের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লো।
ট্রেনের জন্য অপেক্ষা
ট্রেন অবশেষে...
আগে আগে দখল করলাম বাম পাশের সিট।
যাতে সকালে সীতাকুণ্ডের পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি। অনেকে এই দৃশ্য দেখার জন্য বসেছে ডান পাশে। তাদেরকে বুঝাইতেই পারলাম না,মনে মনে বললাম সকাল হোক তারপর নিজের চোখেই দেখবি।
ঘুমানোর চেষ্টা চলছে। কোন লাভ হলনা।
বিকট শব্দে ট্রেন চলছে। এই একটা দিক দিয়ে আমাদের উত্তরাঞ্চলের ট্রেন জার্নি মজার। ঐদিকের লাইন এর মাঝে রাবার দেয়া, তাই এই বিশ্রী শব্দটা হয় না। আধো আধো ঘুম ভাঙল মোবাইলের ভাইব্রেশনে। অজু করতে যেয়ে দেখি পানি ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ছে,তার উপর লাইট ও নাই।
চারিদিকে এত পানি, কিন্তু আমাদের ভাইয়েরা এত ব্যাস্ত পানি ভরারও সময় পান না। নামাজ পরে বাইরে তাকালাম। সকালের এই পবিত্র, স্নিগ্ধ রুপ আমরা কি হেলাতেই না মিস করি??
নতুন সকাল
দূরে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপর মন্দির ভেসে উঠলো। BMA তে ক্যাডেটদের কুচকাওয়াজ চলছে... ফৌজদারহাট... পাহাড়তলি... অবশেষে চট্টগ্রাম।
আমাদের বগি...
BMA, প্যারেড গ্রাউন্ড
চট্টগ্রাম রেলওয়ে ষ্টেশন
নাস্তার পালা।
কেউ কেউ পেট ভরার পরে আবার পেট খালির কাজে মনোনিবেশ করলো। মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, এমনিতেই packed শিডিউল।
তারপর আবার বদ্দারহাট যাওয়ার উদ্দেশ্যে ১ নং বাসে উঠে বুঝলাম এর কথা সারাজীবন মনে থাকবে। এমন তার গতি, রিকশাও ওভারটেক করে। দোকানের সামনেও থামায়,কবরস্থানের সামনেও থামায়।
যখন বিরক্তির শেষসীমায় তখন ড্রাইভার একটু দয়াপরবেশ হয়ে বাসের গতি ঘণ্টায় ৫ থেকে ২০ করলো।
বদ্দারহাট পৌঁছলাম। ফ্লাইওভার তৈরির কাজ চলছে তো চলছেই। সেন্ট মারটিন যাওয়ার সময় ১০ মাস আগে যা দেখছিলাম মোটামুটি তাই আছে। সামনে লেখা-“ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াদাকৃত কাজ এগিয়ে চলেছে”।
বুঝলাম না?? কাজ কি আগাচ্ছে? ধুলা দিয়ে পুরো এলাকা গোছল করছে।
বদ্দারহাটে বাসের জন্য অপেক্ষা...
১ ঘণ্টা অপেক্ষার পর পূরবী কোচে যাত্রা আবার শুরু। কর্ণফুলী ব্রিজ,পটিয়া,সাতকানিয়া পার হয়ে বাস এগিয়ে চলল। বিজিবির ট্রেনিং সেন্টার পড়ে এই রাস্তায়। দূরে বিশাল সব পাহাড়ের সারি দেখে সবাই নড়েচড়ে বসলো।
অসাধারণ অনুভূতি,বাস ধীরে ধীরে উপরে উঠছে। হালকা বৃষ্টি দিয়ে বান্দরবান আমাদের সিক্ত অভ্যর্থনা জানালো।
সাঙ্গু নদী, চট্টগ্রাম - কক্সবাজার রোড
বিজিবি ট্রেনিং সেন্টার
চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।