প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, ৬ ডিসেম্বর রাজারহাট হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজারহাট হানাদার মুক্ত হয়। প্রতিবছর দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ের এই দিনে বাংলার মুক্তিকামী দামাল ছেলেদের প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানী হানাদাররা রাজারহাট ছেড়ে পালিয়ে যায়। হানাদার মুক্ত হয় এই অঞ্চল।
৭১’র ২৮ মার্চ কুড়িগ্রাম সংগ্রাম কমিটির নেত্বেত্বে স্থানীয় গওহর পার্ক মাঠে এক বিশাল জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখান থেকে আহম্মদ আলী বকসী, অধ্যাপক হায়দার আলী, তাছাদ্দুক হোসেন ও মহির উদ্দিন আহম্মদকে নিয়ে স্থানীয় কমান্ড গঠন করা হয়। তাদেরই নির্দেশে বিভিন্নি থানা থেকে গোলা-বারুদ , অস্ত্র সংগ্রহ করে তৎকালীন মহকুমা আওয়ামীলীগের সভাপতি আহম্মদ হোসেন সরকারের রাজারহাট উপজেরাধীন টগরাইহাট গ্রামের বাড়ীতে অস্ত্র মজুদ করা হয়। এর পর ওই বাড়ীতে স্থানীয় যুবক ও ছাত্রদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কলাকৌশল শেখানো হয়। পরবর্তীতে রাজারহাটস্থ ওই বাড়ী থেকে প্রথমে পুলিশ আনসার ছাত্র ও স্থানীয় যুবকদের মধ্যে অস্ত্র বিতরন করে কুড়িগ্রাম অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করা হয়।
২৮ মার্চ রংপুরের ই পি আর উইং এর সহকারী অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিন রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গার এক বাড়ীতে উঠেন। সেখান থেকে সংবাদ পাঠান রাজারহাট আওয়ামীলীগ নেতাদের কাছে। ২৯ মার্চ সকালে তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতা জহির উদ্দিন আহমেদ , আছমত উল্লাহ্ ব্যাপারী ও মরহুম আলী মনসুর সেখানে যান। ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিনের সাথে বৈঠক শেষে কুগ্রিাম আওয়ামীলীগকে বিষয়টি অবগত করেন। ৩০ মার্চ ক্যাপ্টেন নওয়াজেশের নির্দেশে ওই উইং এর অধিনস্থ অীধনায়ক সুবেদার নুর মোহাম্মদ, সুবেদার আঃ মান্নান, সুবেদার আরব আলী ও বোরহান উদ্দিন তাদের সহযোদ্ধা ই পি আর-দের নিয়ে রাজারহাট হয়ে কুড়িগ্রামে যান।
১ এপ্রিল পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমন ঠেকাতে তিস্তা ব্রীজের অপর পাশে মুক্তিযোদ্ধারা একটি শক্তিশালী ঘাটি তৈরি করে। এসময় ই পি আর সদস্যরাও রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্যাম্প তৈরি করে। ৪ এপ্রিল পাক বাহিনী হারাগাছ দিয়ে তিস্তা নদী পার হয়ে লালমনিরহাটে অবস্থান নিলে মুক্তিযোদ্ধারা তিস্তার পূর্বপাড়ের ঘাটি রাজারহাট ও কুড়িগ্রাম নিয়ে আসেন। এরপর পাকবাহিনী দু’বার রাজারহাট আক্রমন করে। অবশেষে মধ্য এপ্রিলে হানাদার বাহিনী রাজারহাট দখল করে নেয়।
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী রাজারহাট দখল করে ঠাটমারী রেল ব্রীজের পাশে আস্তানা তৈরি করে। সেখান থেকে তাদের দোসরদের সহযোগীতায় সাধারন মানুষের ঘর-বাড়ীতে আগুন, লুটপাট করে নিরীহ মা-বোনদের নিয়ে এসে ধর্ষনের পর গণহত্যা চালায়। এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদেরকেও সেখানে নিয়ে এসে পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। অবশেষে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিগ্রেডিয়ার যোশীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৬ষ্ঠ মাউন্টেড ডিভিশনের সহযোগীতায় পাকবাহিনীর উপর পাল্টা আক্রমন চালিয়ে ৬ ডিসেম্বর রাজারহাট মুক্ত করে। দীর্ঘদিন পর ঠাটমারী বধ্যভূমিতে স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি হয়।
সেখানে প্রতি বছর এইদিনে শহীদদের স্বরণে পু®পমাল্য অর্পন সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হয়ে আসছে। #
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।