মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে বসতে ভা্ল লাগে....।
বাংলাদেশে মঞ্চনাটকের আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস থাকলেও মূলত: প্রাতিষ্ঠানিক নাট্য আন্দোলন শুরু হয় ১৮৫৫ সালে। তবে ঐতিহাসিক নানা ঘটনায় এই নাটকে যেমন ভিন্নতা এসেছে, তেমনি এই নাটকই একসময় হয়ে দাঁড়িয়েছে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। আমাদের নাটকে সব সময়ই সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতির একটি চিত্র ফুটে উঠেছে।
নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে কথাও বলেছে নাটক, আবার অন্যায় ও দু:শাসনের বিরুদ্ধেও সোচ্চার থেকেছে অনেক সময়।
১৮৫৫ সালে শুরু হওয়া প্রাতিষ্ঠানিক নাট্য আন্দোলন ১৯৪৭ সালে পাকি¯ত্মান সৃষ্টির পর নতুন গতি পায়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ কর্মী নাটককে অন্যায়ের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে দাড় করাতে প্রতিবাদী নাটক শুরু করেন। ওই সময়েই উম্মুক্ত মঞ্চে কিছু কিছু নাটক হয়েছে। পরবর্তিতে উনসত্তুরের গণঅভ্যূত্থানেও নাট্যকর্মীরা একটা বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে মঞ্চ নাটক এক ভিন্ন মাত্রা পায়। ঢাকা কেন্দ্রীক তরুণরা একাধিক গ্রুপ থিয়েটার গড়ে তোলেন এবং সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে নাটকের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে তা মঞ্চায়ন শুরু করেন। তবে বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে আমূল পরিবর্তন আসে গত শতাব্দীর আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে। ওই সময়ে বহু তরুণ এগিয়ে আসেন নাট্যচর্চায়। মূলত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধেই তৈরি হতে থাকে নাটকের স্ক্রিপ্ট।
মৌলিক নাটকের পাশাপাশি অনুবাদ নাটকের স্ক্রিপ্টেও স্বৈরাচার বিরোধী শ্লোগান আসতে থাকে। বেইলী রোডের মহিলা সমিতি আর গাইড হাউজ মঞ্চ তখন স্বৈরাচারবিরোধী শ্লোগান সম্বলিত নাটকের দর্শকে ঠাসা থেকেছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উম্মুক্ত মঞ্চ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনের সামনের উম্মুক্ত চত্বরসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ এমন কি পাড়ায় মহল্লায় বহু নাটক মঞ্চ¯ত্ম হতে থাকে যার মূল শ্লোগান স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো। পথনাটকের নিয়মিত প্রদর্শণের শুরুও ওখান থেকেই।
ওই সময়ে নতুন নতুন নাট্য গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে নাট্যকার ও নাট্যকর্মী বা অভিনেতা অভিনেত্রী খুঁজতে শুরু করে বিভিন্ন গোষ্ঠী।
তবে ওই সময়ে দেশে যে এক শ্রেষ্ঠ নাট্যকারের আবির্ভাব ঘটেছিল তার সন্ধান পাননি কেউ। তিনি নিজেকে কখনও পল্লী বন্ধু সাঁজিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছেন, কখনও দেশের প্রধান কবি সেঁজে জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় কবিতা ছাপতে সম্পাদকদের বাধ্য করেছেন, কখনও বা পথকলির অভিভাবক হিসেবে টোকাইদের জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ঝরিয়ে ফটোসেশনে অংশ নিয়েছেন।
এই নাট্যকার নিজেকে নানাভাবে উপস্থাপন করলেও নতুন নতুন নাটকের জন্ম দিয়েছেন প্রতিনিয়ত। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মহান দায়িত্ব নিয়ে তিন মাসের জন্য ব্যারাক থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু তার সেই তিন মাস শেষ হতে সময় লেগেছিল নয় বছর।
অবশ্য তিনি আর ব্যারাকে ফিরে যেতে পারেননি। এই নাট্যকারের জায়গা হয়েছিল নাজিম উদ্দিন রোডে।
তবে যে তিন মাসের কথা তিনি বলেছিলেন সেই তিন মাস পরেই তিনি শুরু করেছিলেন নানা নাটক। কখনও ১৮ দফা বাস্তবায়ন কমিটি, কখনও জনদল আবার কখনও জাতীয় পার্টি নাম নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ভাগিয়ে আনার চেষ্টা করেন। আর নানা রকম টোপ দিতে থাকেন রাজনীতিকদের সামনে।
যুবসমাজকে নিয়েও তার নাটকের শেষ ছিল না। কখনও নতুন বাংলা যুব সমাজ কখনও বা যুব সংহতি নাম দিয়ে যুবকদের তার পক্ষে সংগঠিত করার চেষ্টা করেছেন। নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ কিংবা জাতীয় ছাত্র সমাজ যে নামেই ডাকা হোক না কেন তার অনুসারী এই ছাত্ররা দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে। তাদের হাতে প্রাণ দেয়া ছাত্রদের বাড়িতে গিয়ে এই নাট্যকার স্বাšত্মনা দিয়েছেন, রুমাল দিয়ে চোখের পানি মুছেছেন। শুধু তাই নয়, মিছিলে গুলি কিংবা গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যা করে আবার তাদের বাড়িতে গিয়েই চোখের পানি ফেলে শোক প্রক্শা করেছেন।
দেশব্যাপী ব্যাপক গণআন্দোলনে পরাস্ত ওই অভিনেতা প্রায় ছয় বছর কারাভোগের পর যখন মুক্তবাতাসে বেরিয়ে এলেন তখন দেশে রাজনৈতিক নাট্যমঞ্চে পরিবর্তন হয়ে গেছে অনেক। নাট্যকারের মূল চাবিটি তার হাত থেকে ফসকে গেছে। তিনি তখন আর নাট্যকার নন, অভিনেতা। তবে নাট্যকার বা নাট্য পরিচালকের নির্দেশনায় তিনি অভিনেতা হিসেবেও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন। কখনও ঐকমত্যের সরকার, কখনও চার দলীয় জোট কখনও বা মহাজোটের অংশীদার হয়ে তিনি রাজনৈতিক নাট্য মঞ্চকে কাঁপিয়ে রেখেছেন।
মাঝে একবার নাট্য পরিচালকের নির্দেশনা অমান্য করতে গিয়ে জেল খেটেছেন। অবশ্য মোটা অংকের জরিমানা দিয়ে আবার মঞ্চে ফিরে আসেন।
এই নাট্যাভিনেতার অভিনয়গুণ প্রকাশ পায় মহাজোটের নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে। নির্বাচনে অংশীদারিত্ব নিয়ে সকালে এক কথা আবার বিকেলে আর এক কথা বলতে শুরু করেন তখনই। নির্বাচনের পর কি পেলেন আর কি পেলেন না এই হিসেব নিকেষে তিনি অনেকটাই মুষরে পড়েন।
নানা জায়গায় নানা ভাষণ দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন অনেকবার। মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণাও দিয়েছেন বহুবার। শেষ পর্যšত্ম তিনি মহাজোট ছেড়েও দিয়েছেন অনেক নাটকের জন্ম দিয়ে। মহাজোটে মন্ত্রীত্ব পেয়েছিলেন মাত্র একটি। আর মহাজোট ছেড়ে সর্বদলীয় মন্ত্রিসভায় দখল করেছেন চার মন্ত্রী, দুই প্রতিমন্ত্রী ও এক উপদেষ্টার পদ।
স্ত্রীকেও ঠকাননি তিনি। এনে দিয়েছেন মন্ত্রীর পদ।
তবে সর্বশেষ যে অভিনয়টি করলেন এই অভিনেতা তাতে মানুষ বিস্মিত হয়নি; বরং রাজনৈতিক অঙ্গনে হাস্যরসের উৎস তৈরি হয়েছে। তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, পরিবেশ নেই। নির্বাচনে যে সব দল আসছে না তা তিনি এত দিন বুঝতে পারেননি।
যখন বুঝতে পারলেন তখনই তিনি বললেন, সব দল এলেই তিনি নির্বাচনে যাবেন। দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র তুলে নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এক হাজার কোটি টাকা নেয়ার কথাও অস্বীকার করেছেন। তিনি সকালে এক কথা আর বিকেলে আর এক কথা বলেন বলে যারা তার নিন্দা করেন তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তারা দেখুক আমি আমার কথা রেখেছি, প্রতিশ্রুতি রেখেছি।
আজ থেকে ৩১ বছর আগে আমাদের রাজনৈতিক নাট্যমঞ্চে যে নাট্যাভিনেতার আবির্ভাব ঘটেছিল সেই অভিনেতা স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে আজ অনেক পরিপক্ক, দক্ষ ও অভিজ্ঞ।
তার অভিনয়গুণে আমাদের রাজনৈতিক মঞ্চে অনেক নাটকের জন্ম হয়েছে, অনেক চমক দেখেছেন দর্শক। তবে এখন যে নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে তার যবনিকাপাত কেমন হবে সেই অপেক্ষায় রয়েছে দেশবাসি।
তথ্যসূত্র:
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।