১০০ গজের মধ্যে সংরক্ষিত বন। পাশে ধানি জমির ওপর পাকা দেয়ালের ঘেরাও। এর ভেতর তৈরি হচ্ছে তিনটি ইটভাটার চিমনি। একটু দূরে তৈরি হচ্ছে আরও চারটি। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের রাবেতা হাসপাতালের পশ্চিম পাশের গড়ে উঠছে এই ইটভাটাগুলো।
রাবেতা হাসপাতাল এলাকার এই চিত্র পুরো জেলার। টেকনাফ, রামু, উখিয়া ও সদরের বিভিন্ন স্থানে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দু-তিনফসলি জমিতে ইটভাটাসহ নানা স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। এতে পরিবেশ বিপন্নের পাশাপাশি ফসল উৎপাদনে ধস নামার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা।
রাবেতা হাসপাতাল এলাকায় নির্মাণাধীন তিনটি ইটভাটার মালিক রামুর ধেচুয়াপালং এলাকার আবদুল গণি, আবদুস সালাম ও সৈয়দ হোসেন জানান, নিয়মকানুন মেনেই তাঁরা ফসলি জমিতে ইটভাটা তৈরি করছেন। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাছাকাছি ইটভাটা স্থাপন করা হলেও তাতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।
অথচ আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের তিন কিলোমিটারের মধ্যে ও ফসলি জমিতে ইটভাটাসহ পাকা স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ।
রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যার আবদুল মাবুদ বলেন, তাঁর ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসলি জমিতে একাধিক ইটভাটা, পাকা ভবনসহ নানা স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২০টির বেশি স্থাপনা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে পরিষদ থেকে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত কেউ জবাব দেয়নি। নির্মাণকাজও বন্ধ রাখেনি।
কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী।
টেকনাফের সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান বলেন, ফসলি জমিতে স্থাপনা তৈরি করতে হলে পরিষদের অনুমতি লাগে; আরও লাগে ভূমি, বন, স্বাস্থ্য, কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনাপত্তিপত্র। কিন্তু কেউ এসবের তোয়াক্কা করছেন না।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলায় বর্তমানে ৭০টির বেশি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৪২টি তৈরি করা হয়েছে ফসলি জমি ও সংরক্ষিত বনের তিন কিলোমিটারের মধ্যে।
এসব ইটভাটার বিপরীতে পরিবেশ ছাড়পত্র নেই।
অনুমতিপত্রও মেয়াদোত্তীর্ণ। তা ছাড়া নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে জেলার আটটি উপজেলার ফসলি জমিতে তিন হাজারের বেশি পাকা ও বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম বলেন, সংরক্ষিত বন ও ফসলি জমিতে যাঁরা ইটভাটা তৈরি করেছেন, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু জনবলসংকটের কারণে কিছুই করা যাচ্ছে না।
কক্সবাজার (দক্ষিণ) বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বিপুল কৃষ্ণ দাস বলেন, ফসলি জমি ও সংরক্ষিত বনের পাশে যখন ইটভাটা তৈরি হয়, তখন অনাপত্তি জানিয়ে জেলাপ্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে অভিযোগপত্র পাঠানো হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ হয় না। ফসলি জমিতে বসতবাড়ি, বহুতল ভবন নির্মাণের হিড়িক পড়লেও দেখার কেউ নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তা আশীষ কুমার বলেন, পুরো জেলায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে ইটভাটা ও বসতবাড়ি গড়ে উঠেছে। তবে উৎপাদন ভালো হওয়ায় ঘাটতি দেখা দিচ্ছে না।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, পর্যটন শহর কক্সবাজারের পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য একটি ‘মহাপরিকল্পনা’ তৈরি করা হলেও তা আলোর মুখ দেখছে না। জেলা প্রশাসককে প্রধান করে ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হলেও তা কোনো কাজ দিচ্ছে না। যত্রতত্র নানা অবকাঠামো গড়ে তুলে পরিবেশ বিপন্ন করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন বলেন, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।