আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভোটের আহ্বান জানিয়ে গেলেন সুজাতা

ভারতের শীর্ষ কূটনীতিকের দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফর শেষে বৃহস্পতিবার সকালে নয়া দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন সুজাতা।
সাংবাদিকদের কাছে তিনি এই ভ্রমণকে কেবল ‘শুভেচ্ছা সফর’ বললেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট অচলাবস্থার মধ্যে সুজাতার সফর ছিল সংকট উত্তরণে ভারতীয় চেষ্টার অংশ।
প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে বৈঠক করে সুজাতা সাংবাদিকদের বলে গেলেন, ‘সর্বোচ্চ’ সংখ্যক দলের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন দেখতে চায় ভারত, যার ফলাফল বাংলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করণীয়, তা নির্ধারণের ভার বাংলাদেশের জনগণের ওপরই বলে মন্তব্য করেন সুজাতা সিং।
“আমরা চাইব, এমন একটি নির্বাচন হবে, যেখানে জনগণ তাদের মতামতের প্রতিফলন স্বাধীনভাবে ঘটাতে পারবে।


তার ভাষায়, ভারত তার স্বার্থেই স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ দেখতে চায়, সেই সঙ্গে চায় যেন প্রতিবেশী দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে।
সুজাতা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র চর্চার ধরন ভিন্ন। এক দেশের সঙ্গে এক দেশের মিল নাও থাকতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধরন কী হবে এই দেশের মানুষই তা ঠিক করবে।
“নির্বাচন না হলে আপনারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার রীতি কিভাবে গড়ে তুলবেন? গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যেই আপনাদের নির্বাচন হওয়া দরকার।


নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই প্রধান দলের মুখোমুখি অবস্থানে দেশে যখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে তখনই আকস্মিক এই সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের টানা অবরোধে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি রেলপথে চলছে ধারাবাহিক নাশকতা।
এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান নাভি পিল্লাই। অবস্থা এরকম চলতে থাকলে তা বাংলাদেশকে একটি ‘বিপজ্জনক সংকটের’ মধ্যে ফেলতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।


বাংলাদেশে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুনও কয়েকবার দুই দলের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছেন। সর্বশেষ উদ্যোগ হিসেবে শনিবার পাঠাচ্ছেন তার দূত অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকোকে।
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘মিত্র’ হিসেবে পরিচিত এইচএম এরশাদের জাতীয় পার্টিও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা থেকে তার দলের মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার বিকালে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমার শেষ কথা হচ্ছে, আমি নির্বাচনে যাচ্ছি না।


এরশাদ বলেন, তার সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন না হলে ‘অগণতান্ত্রিক শক্তি কিংবা জামায়াত-শিবিরের’ উত্থান ঘটতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সুজাতা সিং।
“আমি তাকে বলেছি। জামায়াত-শিবিরের উত্থান হোক, এটা আমিও চাই না। যদি উত্থান ঘটে, তাহলে সে দায় সরকারের, আমার নয়। ”
এদিকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদলে জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থার উত্থান নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে ভারতের এবং এ উদ্বেগের কথা তার ‘কৌশলগত মিত্র’ যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।


বিশ্লেষকদের মতে বাংলাদেশের বর্তমানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে  প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার জন্য এই সফর করেন সুজাতা সিং, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার আগামী বৈঠকে যা আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে।
শিগগিরই ওয়াশিংটন সফর করার কথা রয়েছে সুজাতা সিংয়ের। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শেরম্যানের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা তার। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে ‘জটিল’ এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র সচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নয়া দিল্লির সুনির্দিষ্ট বার্তা নিয়ে এসেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।


শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সুজাতা সিং বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সফলতার’ প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
এই কঠিন সময়ে ভারতের ‘সমর্থন ও সংহতির’ বার্তা তিনি নিয়ে এসেছেন।
বিরোধী দলের নির্দলীয় সরকারের দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।
তবে বলেছেন, একটি ‘সংহত গণতন্ত্রের’ প্রেক্ষাপটে তিনি বলতে পারেন-এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই ভারতের গণতন্ত্র এগিয়ে চলেছে।

   
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বুধবার সকালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ উড়োজাহাজে ঢাকায় নামলে তাকে  স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।
এরপর প্রথমেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।