বিন্দুসমষ্টি ভালবাসার জিম্মাদারি হয়ত তাবৎ ঠাট্টায় মিলায়িত। ।
:::কসাই নেপথ্যে:::
(সত্যঘটনা অবলম্বনে)
বাংলাদেশের প্রান্তীয়
জেলা শেরপুরের একটি গ্রামে জন্ম
হয়েছিল সিরাজের
(পরিবর্তিত নাম)
অশিক্ষিত বাবা একজন দিনমজুর,পাঁচ
ভাই-বোনের মধ্যে সিরাজ ২য়,খুব কষ্ট
করে পড়াশুনা চালিয়ে যায় বাবার
সাথে দিনমজুরি করে,জীবনের প্রথম
ধাক্কা টি খায় যখন
সে সিক্সে পড়ে,তার বড় বোনের
বাচ্চা ডেলিভারির সময় গ্রামে কোন
ডাক্তার ছিলনা,সারা রাত তীব্র
ব্যাথায়
কাতরাতে থাকি বোনকে সকালে নিয়ে যাওয়া হয়
হাসপাতালে,
ডাক্তার বললেন সিজার করতে হবে সেই
জন্য পাঁচ হাজার টাকা লাগবে,
টাকা দেওয়া হল অনেকের কাছ
থেকে ধার কর্য করে,কিন্তু
বেশি দেরিতে হাসপাতালে নিয়ে আসায়
বাচ্চাকে বাঁচানো গেলেও
মাকে (সিরাজের বোন) বাঁচানো সম্ভব
হয়নি।
এভাবে কষ্ট
করে ধুকতে থাকা সংসারের কলুর
বলদেরর মত খাটতে থাকা সিরাজের
বাবা অসুস্থ্ হয়ে যায়,
পড়ালেখা,সংসার সব দায়িত্ব এসে যায়
সিরাজের উপর,দুই শতাংস
ভিটে ঘরটা ছাড়া সিরাজদের আর কিছু
ছিলনা।
তবু সিরাজ হাল ছাড়েনা,নিজের ও
ছোট ৩ ভাই-বোনের পড়া সে নিজেই
চালিয়ে যাচ্ছে,
বাবা মারা গেলেন
বিনা চিকিৎসায়,গ্রামের কেউ
তাকে সাহায্য করেনি,এমনকি বাবার
কাফনের কাপড়ের টাকাটাও বাবার
মৃত্যুর দিন তারই গ্রামের একজনের
বাড়িতে আধাবেলা কাজ
করে জোগাড় করতে হয়।
দেখতে দেখতে সিরাজ এইচ এস সি পাশ
করে,মা সারাদিন অন্যের
বাড়িতে কাজ করে। সিরাজ ছিল
মেধাবী ছাত্র,তৎকালীন সময়ে কোন
কোচিং ছিলনা,নিজ যোগ্যতা দিয়েই
সে চান্স পায় বাংলাদেশের অন্যতম
একটি মেডিকেলে,কিন্তু সেটা শেরপুর
থেকে অনেক
দূরে,সে চলে গেলে সংসার
চালাবে কে???
কিন্তু মায়ের অনুরোধে সে ভর্তি হয়
মেডিকেলে,সেখানেও সারাদিন
ক্লাস করে রাতের
বেলা একটা অফিসের দাড়োয়ানের
কাজ করে।
সেই টাকার প্রায় পুরোটাই গ্রামে তাঁর
মাকে পাঠিয়ে দিত,
জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাত পায় যখন
সে ৩য় বর্ষে পড়ে,তাঁর
মা পা পিছলে পড়ে গিয়ে মেরুদন্ডে প্রচন্ড
আঘাত পায়,অপারেশনের জন্য অনেক
টাকা দরকার, সিরাজ তখন দ্বারে-
দ্বারে টাকার জন্য মিনতি করেছে,কেউ
দেয়নি টাকা,বরং মানুষ উল্টো বিদ্রুপ
করেছে যে নূন আনতে পানতা ফুরায় আর
সে হবে ডাক্তার,এইরকম অনেক
কথা তাঁকে শুনতে হয়েছিল,কিছু উপায়
না দেখে সে পঙ্গু মা আর ছোট ভাই-
বোনদের নিয়ে শহরে চলে যায়।
এভাবে সিরাজ দিনের
বেলা মেডিকেলের পড়া পড়ে আর
রাতে দাড়োয়ানের
চাকরি করে,দাড়োয়ানের চাকরির
সুবিধা ছিল
ঐখানে বসে বসে পড়া যায়।
এভাবে কষ্টের পর কষ্ট করে সিরাজ
ডাক্তারি পাশ
করে,সে বর্তমানে অনেক বড়
ডাক্তার,তার প্রতিদিনের আয় প্রায় ৭০
হাজার টাকা,তার ফিঃবাবদ
সে একটাকাও কম নেয় না,কারণ টাকার
জন্য তাঁকে যে কত কষ্ট
করতে হয়েছে এটা কেবল সেই জানে,শুধু
সে নয় তাঁর ছোট তিন ভাই-বোনের দুই
জনই এখন ডাক্তার,তার ছেলে মেয়েরাও
বর্তমানে মেডিকেলে পড়ছে,এখন তাঁর
টাকার অভাব নেই,তবু সে জনগণের কাছ
থেকে একটাকাও কম নেন
না( নেহায়েত গরীব না হলে)
কিন্তু তিনি যে কাজটি করেন
তা হচ্ছে সপ্তাহের একদিনের
উপার্জনের টাকা তিনি এতিমখানায়
দান করেন,কারণ তিনি নিজেও
বাবা কে হারিয়ে এতিমের কষ্ট
তিলে তিলে সহ্য করেছেন।
এইভাবেই জন্ম হয় একজন কসাইয়ের,
কসাই বলে মানুষ ডাক্তারদের
গালি দেয়,কিন্তু
ভেবে দেখেনা যে একজন কসাই সৃষ্টির
পিছনে দায়ী ত আমরা মানুষরাই। । । ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।