আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোথাও কেউ নেই .।।কসাই ভার্সন.।.।.।.।.।

রাত ৩,২০ মিটফর্দ হাসপাতাল ,শিশু বিভাগ NCU (নবজাতক জরুরি বিভাগ ) টেবিলে ওরাকল বিসিএস গনিত বই । চেয়ারে বসা তরুন ডাক্তার ভাবছে এই বিসিএস গনিত এর তৈলাক্ত বাশের আর বাদরের অংক তার ডাক্তার জীবনে কতটুকু কাজে লাগবে । কিংবা কবি জসিমুদ্দিন এর সোজন বাদিয়ার ঘাট কাব্যের সোজন এর প্রেমের স্বরূপ নির্নয় তার রোগীর আরোগ্য লাভে কি ভুমিকা রাখবে ? না বাবা এত কিছু মাথাই ঢোকে না । কর্তারা চেয়েছেন তাই এই গলধকরন । তানা ৪০ ঘন্টা ডিউটি তে আছে ।

এরি মাঝে আধা ঘন্টা বিরতিতে ৪ বার আধা ঘন্টা করে ঘুমাতে পেরেছে । ঘুম ত নয় যেন আরেকটি খারাপ রোগি আসার আতংকে থাকা । রাতে ডিউটি করা যে কি কষ্ট তা যদি আমলা রা জানত তা হলে BCS এর ছাইভশ্ম ডাক্তার দের গেলাত না । ভেবেই বা কি লাভ? চারপাশ নিরব। রুম ছেড়ে করিডরে হাটছে।

সেহেরি করতে ক্যান্টিনে যেতে হবে । কাল এই সময় রোগী আসে নি । কিন্তু আজ যদি আসে । মনটা খচ খচ করতে লাগলো। কেন যেন মনে হচ্ছে একটু পর রোগী আসবে।

ভাবতে ভাবতে লিফট এর সুইচ টা টিপল । লিফট আসার শব্দ হল । দরজা খুলে গেল। ১২ থেকে ১৫ জনব্যক্তি বের হয়ে এল। সামনে এক মহিলার কোলে ছোট একটা বাচ্চা ।

মুখে মিষ্টি হেসে রনি আর সামনে পা বাড়াল না । জনতার পিছন পিছন সে তার ওয়ার্ডে ঢুকল। তার থেকেও লম্বা আর সুঠাম দেহের অধিকারি djuice প্রজন্মের খাস মডেল হাক ছাড়ল - এই ডাক্তার কই? ডাক্তার নেই? Nurse তাররুম থেকে বের হয়ে এল -জি আছে। দাড়ান । ডেকে দিচ্ছি ।

পিছন থেকে আরেক জনআস্তে করে টপ্পনি কাটল -শালার ডাক্তার । ডিউটি বাদে শুধু ঘুম। রনি কথাটা শুনেও না শুনার ভান করে বলল.................. --কই কি হয়েছে। নতুন রোগি। দেখি সরেন।

বলতে বলতে পিছন থেকে সামনের টেবিল পর্যন্ত গেল। ন --আপনাদের টিকেট টা দেখি......। মাঝারি বয়সের এক লোক বলে উঠল -টিকেট কাটি নাই --টিকেট কেটে আনুন বাচ্চার বয়স কত -২ ঘন্টা আগে হয়েছে --সীজার না নরমাল এ হয়েছে -সীজার -- এখানে রাখেন (বিছানা ইঙ্গিত করে) সমস্যা কি? মহিলা উত্তর দিল -কান্দে নি রনি বাচ্চাতা কে এক নজর দেখে নিল। এরপর হাত দিয়ে পরীক্ষা করতে লাগল। No congenital anomally On G/E Skin blackish ..respiratory distress....respiretory rate 60br/min Convulsion present এরপর নার্স কে বললেন বাচ্চার ওজন নিতে 900 gm ততক্ষনে টিকেট নিয়ে লোকটি ফিরে এসেছে।

সে লিখল Dx..Perinatal asphyxia with LBW with convulsion এখন CBG করা দরকার । lancetআর strip লিখে দিল । বাচ্চার বাবা আনতে চলে গেল । নার্স কে অক্সিজেন দেবার কথা বলে সে চেয়ারে বসল। ।

-বাচ্চা কেমন দেখলেন? -সমস্যা কি? -বাচবে তো? রনি তার হাত ঘরির দিকে তাকাল। মিনিটের কাতা ৩৫ এর দাগ পার হয়ে ৪০ ছোয়ার চেষ্টা করছে। -কি হল? --দেখুন ওর CBG করতে হবে । আর বাচ্চার অবস্থা ভাল না। ওর বাবা আসুক।

আসলে আমি উনার সাথে কথা বলব। - না ,আমাদের বলেন কি করতে হবে। গোটা দশেক লোক টেবিল ঘিরে দাঁড়িয়ে । আর ৫ ফুট ৪ইঞ্চি উচ্চতার ডাক্তার চেয়ারে বসে ক্লান্তিকর কণ্ঠে বলল............। ।

-- দেখুন ওর condition ভাল না। NICU support দরকার। ওজন অনেক কম। সবচেয়ে ভাল হয় DMC অথবা শিশু হাসাতাল এ নিয়ে যান। -না,এখানেই ভর্তি রাখতে হবে --দেখুন এখানে ভর্তি করাতে চাইলেই আমি অবশ্যই ভর্তি রাখব।

আমি ভর্তি রাখতে বাধ্য। কিন্রতু এখানে রাখলে একে হয়ত বাচান যাবে না। আমাদের যথেষ্ট পরিমান যন্ত্রপাতি নেই । Djuice বলে উঠল -কেন বাচান যাবে না --ভাই একবার বললাম ত এখানে NICU নাই। - নাই কেন? মাঝারী বয়সের লোক জ্ঞানীর মত ভাব নিয়ে বলল -উনি ছোট ডাক্তার ।

উনি জানবে কামনে। সবতো বড় ডাক্তার রা টাকা মেরে খেয়েছে । আচ্ছা NICU কি জিনিস । রনি ঘড়ির দিকে তাকাল। ৩,৪৫ ।

-- এক্তু ফোন দিয়ে দেখেন ত। উনি কতদুর আছেন?এখনও strip নিয়ে এল না। Strip নিয়ে বাচ্চার বাবা আসল। সে উঠে যেয়ে CBG মাপল। -কি দেখলেন --CBG -5.1mmol/l -সেটা কি? --রক্তের গ্লুকোজ লেভেল -এতা দেখে কি হয়? রনি র মনে হল থাপ্পর দিয়ে দাত ফেলে দেওয়া উচিত।

রোগীর কথা চিন্তা না করে CBG, NICU কি জিনিষ জানতে চাইছে। রনি গম্ভির মুখ নিয়ে বাচ্চার বাবা কে বলল --দেখুন এখানে NICU নেই । বাচ্চা কে দ্রুত NICU আছে এমন হাসপাতালে নিতে হবে। তাড়াতাড়ি নিয়ে যান। -স্যার ভর্তি রাখা যাবে না --দেখুন ভর্তি রাখা যাবে ।

কিন্তু এতে বাচ্চা বাচান যাবে না। দ্রুত বাবস্থা করেন মহিলা বলে উঠল ......-বাচ্চা বাচান না গেলে হাসপাতাল রাখার দরকার কি?জামাই এখানে ভর্তি করাও। বাচব না মানে । হাসপাতাল দিছে আবার বাচাইতে পারবে না। কইলেই হল ।

এখানেই ভর্তি হবে। রনি র শরীর রাগে জলতে থাক্ল............থিক আছে। আপ্নারা ভর্তি হতে চাইলে ত আমার কিছু করার নেই । আমি বন্ড সই দিবেন যে ,রোগীর মৃত্যু হলে ডাক্তার বা হাসপাতাল দায়ী থাকবে না। যান ভর্তি করে নিয়ে আসুন।

। এবার বাচ্চা র বাবা ভয় পেয়ে গেল। ঠিক আছে,স্যার। আমরা অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি। পাঞ্জাবী পরা এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল..................সই দিলে কি পরে পুলিশের ঝামেলা হবে।

কথা অগ্রাহ্য করে এম্বুলেন্স এর নাম্বার দিল । একজন এসে বলল ...। সরকারী এম্বুলেন্স এ কেন ৩০০ তাকা লাগবে? ঘুম ক্লান্তি সেহেরী না করতে পারার কষ্টে রনি বলে উঠল ............। । --সেটার আমি কি জানি।

এম্বুলেন্স এর লোক কে জিজ্ঞাসা করেন। তাড়াতাড়ী বাচ্চা নিয়ে যান। এবার আর তার মত দুজন শুরু করল -আপনি এভাবে কথা বলছেন কেনো?কথা ভালভাবে বলা যায় না। ডাক্তার হয়ে গেছেন বলে কি লাটসাহেব হয়দচতর। ভদ্রতা শেখেন নি।

রনি উত্তর দিতে যেয়ে দাড়িয়ে গেল...............—কিভাবে কথা বলছি মানে। আপ্নার কাছে ভদ্রতা শিখতে হবে নাকি। -হ্যা শিখতে হবে। -- - -- -চুপ একদম কথা বলবি না। আমারে চিনস ।

আমি হাযি সেলিম এর লোক। কথা বলবি ত একদম খেয়ে ফেলব। ডাক্তার রা প্রতিনিয়ত অসহায় । রনি চুপ করে গেল। এরি মাঝে এম্বুলেন্স এর বাবস্থা হয়ে গেছে ।

সবাই চলে গেল। মসজিদের ফযর এর আযান শুনা যাচ্ছে । আজ আর সেহেরি খাওয়া হল না। ওযূ করে নামায তা পড়ে নিল । বরাবরের মত এই সময় মায়ের ফো...............।

-বাবা ,duty তে --হুম -রাতে রোগির চাপ বেশি ছিল? --না -সেহেরি করেছিস --হ্যা -কি দিয়ে খেলি? --এইত প্রতিদিন যা খাই -নামায পড়েছিস --হ্যা -সকালে তো রুম এ যাবি, না? --হুম -আবার duty কখন? --এই ত সকাল ৮ টা থেকে -কাল বিকালে duty আছে? --না.........। ঠিক আছে ............আম্মা একটু rest নিব রাখি .. রনি বাইরে তাকায়। একটু পরেই ঘন কাল আধার হারিয়ে যাবে ,আলোকিত হয়ে উঠবে পৃথিবী। রাতের নির্জনতা ভেঙ্গে জেগে উঠবে আরেকটি নতুন সকাল। নতুন করে শুরু হবে আরেকটি দিন ।

কিন্তু রনি র কষ্টের দিন কি আর কখনও শেষ হবে?BCS এর বইয়ের দিকে তাকিয়ে কাদতে ইচ্ছা করে। কিন্তু এই কান্না দেখার কেউ নেই। কোথাও কেউ নেই................................ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.