শুরুটা নিয়েই থাকে পাঠকের কৌতূহল। তাই শুরুটাই জানতে চাইছি শুরুতে।
'প্রকৃতি ও জীবন' এর শুরুর পরিকল্পনা হয়েছিল ২০০৯ সালের শেষের দিকে। চ্যানেল আইয়ের জন্য আমরা 'চ্যানেল আই পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড' নামে একটা অনুষ্ঠান করতাম আরব আমিরাতের শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। পুরো ইভেন্টের দায়িত্ব ছিল আমার।
অনুষ্ঠানে ভিন্নমাত্রা আনতে মূল অনুষ্ঠানের সঙ্গে যোগ করলাম 'রোড টু শারজা' নামে একটা অনুষ্ঠান। ২০০৮ সালে তাতে তুলে ধরলাম ইউএই-এর বায়োডাইভারসিটি ও ইকোসিস্টেম। দেখালাম, মরুভূমির মতো একটি দেশে তারা ওয়াটারবডি তৈরি করে, গাছ লাগিয়ে, পশুপাখি এনে ইকোসিস্টেম ব্যালেন্সের চেষ্টা করছে। অনুষ্ঠানটি করতে গিয়ে ভেতরে ভেতরে একটা ধাক্কা খেলাম। আমাদের গাছপালা, পশুপাখি, নদ-নদী, পাহাড়, অরণ্য সব সবকিছু থাকার পরও সচেতনতার অভাবে তা আমরা ধ্বংস করছি।
২০১০ সালের আগস্ট মাস থেকে শুরু হয় 'প্রকৃতি ও জীবন'।
প্রকৃতি ও জীবন শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, একটি ফাউন্ডেশন। বর্তমানে তার কী অবস্থা?
শুধু এটাই বলতে পারি যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। 'সুন্দর প্রকৃতিতে গড়ি সুস্থ জীবন' এই বার্তাটিকে সামনে রেখে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছি। প্রকৃতি ও জীবন টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচার ছাড়া প্রকৃতি সংরক্ষণে অনেক গণসচেতনতামূলক কাজ চলছে।
দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম বারবার উঠে আসছে। আসলে এর জন্য আমরা কতটুকু দায়ী?
বিভিন্ন জরিপে দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবেই বাংলাদেশ চিহ্নিত হচ্ছে। কিন্তু এর জন্য আমরা যে খুব বেশি দায়ী তা কিন্তু নয়। চীন, ভারতের মতো জনবহুল ও দ্রুত শীর্ষ উন্নতির দিকে অগ্রসরমান দেশের পাশাপাশি আমেরিকা ও ইউরোপের বহু উন্নত দেশ বৈরী জলবায়ুর জন্য মূলত দায়ী। আর এর ভুক্তভোগী হচ্ছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো।
ডারবান ও দোহার বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ও সাম্প্রতিক পোল্যান্ডের ওয়ারশ জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি, আসলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার সমাধান রাতারাতি করে ফেলা সম্ভব নয়। এটি একটি বিশাল প্রক্রিয়া। পৃিথবী নামক গ্রহটা রক্ষা করার দায়িত্ব সবার। সবাই এক যোগে কাজ না করলে ভবিষ্যতে আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অক্ষম হয়ে পড়ব।
দেশের প্রকৃতির বর্তমান অবস্থা কি?
এককথায় বলতে গেলে খুবই নাজুক।
প্রকৃতি ধ্বংসের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। এটা হয়েছে আমাদের মানবসৃষ্ট কারণে। ভাবতে অবাক লাগে যে বিজ্ঞানী প্রথম 'গাছেরও জীবন আছে' বলেছিলেন, তারই জন্মস্থান মুন্সীগঞ্জের রাঢ়ীখালে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ইনিস্টিটিউট প্রাঙ্গণে বহুতল শিক্ষা ভবন নির্মাণের অজুহাতে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটি ১০০ মেহগনি গাছ কাটতে নিলাম আহ্বান করেছিল। পরে অবশ্য একটি জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশের পর গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়। কদিন আগে দেখলাম সিলেট বন বিভাগের ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪৭ দশমিক ১৯ একর জমির মধ্যে ৮২ হাজার ৭৬৬ একর জমি দখল করে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
আবার গাজীপুরের সখীপুর উপজেলার কথাই ধরা যাক। সম্প্রতি এই উপজেলার ১৪টি বিটে ৬৫টি করাতকল বসিয়ে প্রকাশ্যে শাল ও গজারি গাছ চেরাইয়ের কাজ করে যাচ্ছে প্রভাবশালী মহল। সঙ্গে যোগ দিয়েছে কিছু অসাধু বন কর্মকর্তা। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাইরে ১০ কিলোমিটারের ভেতর করাতকল নিষিদ্ধ হলেও এমন গর্হিত কাজ কিন্তু আমরাই করছি। তবে তার চেয়েও বড় কথা হলো এই যে হরতাল-অবরোধে রাস্তার দু'পাশের হাজার হাজার গাছ ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হচ্ছে তা দেখার কেউ নেই।
নদী দখল ও ভরাট হচ্ছে, বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে, বসতবাড়ি, বিভিন্ন স্থাপনা, শিল্প-কলকারখানা নির্মাণেও চলছে নির্বিচারে প্রকৃতি ধ্বংসের খেলা।
সচেতনতা বাড়াতে কী করা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
প্রকৃতি রক্ষায় সচেতনতা তৈরির বিকল্প নেই। এই প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে আমাদের গণমাধ্যমগুলো। জাতীয় যেকোনো দুর্যোগ বা সমস্যা মোকাবিলায় মিডিয়া বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছে। এই কাজে এগিয়ে আসতে হবে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, সর্বোপরি গণমাধ্যমের সবাইকে।
সবার সম্মিলিত প্রয়াসই নিয়ে আসতে পারে সাফল্য। প্রকৃতি সংরক্ষণ কাজে গণমানুষ অন্তভর্ূক্তির জন্য প্রয়োজন প্রচারমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা। অনেক ক্ষেত্রেই তারা সেটা পালন করছে। এখন জাতীয় দৈনিকে 'মূল শিরোনাম' হচ্ছে প্রকৃতির ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে। প্রকৃতি নিয়ে লেখার আগ্রহ বাড়ছে লেখকদের মধ্যে।
এটা খুব ভালো দিক। তবে যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা সেভাবে যাচ্ছে না। আরও বেশি দরকার।
* শোবিজ প্রতিবেদক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।