আজ অনেকদিন পর রাজনীতি নিয়ে লিখছি । ব্যক্তিগত একটি বিশেষ কারনে মনটা ভাল না তারপরও রাজনৈতিক নানা নাটক এত দ্রুত মঞ্চস্থ হোল যে ভাবতেও অবাক লাগে । তারানকো সাহেব আসার পর অনেকেই যারা মনে করেছিলেন যে একটি মিমাংসা অনিবার্য তাদের আশাকে গুড়েবালি দিয়ে জাতিসংঘ আওয়ামীলীগের একক নির্বাচনকে বৈধতা দিয়ে গেল । সেটা মিঃ তারানকোর স্টেটমেন্ট থেকেই বোঝা যায় । আলোচনা চালিয়ে যাওয়া আশাবাদ মানে নির্বাচনের গাড়ীর চাকা থামবে না ।
অন্যদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব মিঃ বানকিন মুন প্রধান মন্ত্রীকে ফোন করে বলেন " বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন দেশের সংবিধান অনুযায়ী হবে এবং গণতন্ত্র সমুন্নত থাকবে,” (বিডিনিউজ২৪-১১/১২/১৩) , সেই সাথে তিনি চলমান সহিংসতার সমালোচনা করেন । বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট যে ২৪শে জানুয়ারির একদলীয় নির্বাচন এর পর যে সরকার হবে তাতে জাতিসংঘের সমর্থন আছে । তাহলে ধরে নেয়া যায় জাতিসংঘ একদলীয় নির্বাচনের স্বীকৃতি বিএনপির কাছ থেকেও আদায় করেছে । বিএনপি হয়তো মেনে নিয়েছে যে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর যে সংসদ বসবে সেই সংসদ বিএনপির দাবী অনুযায়ী একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এর বিল পাশ করবে এবং সেই সংসদের এবং সরকারের মেয়াদ হবে স্বল্প সময়ের জন্য । কিন্তু এখানে একটি প্রস্ন থেকে যায় যে সেই স্বল্প সময় কত দিনের ? মাসের না বছরের ।
যদি বছর গড়ায় তবে দেশের অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হবে ।
অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি প্রধান মন্ত্রী ও শেখ হাসিনার ফোনালাপে বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আইসিটি ও উচ্চ আদালতে যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকর করা নিয়ে আলোচনা হয় । সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কাঠোর অবস্থান নিয়েও কথা হয়। সেই সাথে হরতাল, অবরোধ ও চলমান সহিংসতায় গভীর উদ্যাগ প্রকাশ করেন । এতে পরিষ্কার বোঝা যায় যে কাদের মোল্লার ফাঁসি কেন কার্যকর হয় নাই ।
যদি মার্কিনের হস্তক্ষেপে কাদের মোল্লার ফাঁসি স্থগিত হয় তবে জামাত আন্তর্জাতিক লবিং এ অথবা মার্কিনের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনায় ( বাংলাদেশকে নিয়ে ) বিএনপি থেকে ভাল পজিশনে ও এগিয়ে আছে । আমার ছোট বেলার বন্ধু বিএনপির সাবেক ছাত্রনেতা মেহেদী গতকাল হাসতে হাসতে একটি ভবিষ্যৎ বানীর মত করে মজা করছিল এই বলে যে অদূর ভবিষ্যতে লিবারেল পার্টি হিসেবে আওয়ামীলীগ ও কট্টরপন্থী দল হিসেবে জামাত টিকে থাকবে । যেমনটা ভারতে কংগ্রেস ও বিজেপি , আমেরিকায় কংগ্রেস ও রপাবলিকান । কথাটা হাসতে হাসতে বললেও আমি বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে চিত্না করে বর্তমান বাস্তবতার সাথে অনেক মিল খুজে পেয়েছি । আমার আরেক বন্ধু সাবেক জাসদ ছাত্রনেতা আকরাম সকালে ফোনালাপে বলল যে বিএনপি যদি আগামীতে নির্বাচনে আসে তবে জামাতকে কমপক্ষে ৮০ টি আসন ছাড়তে বাধ্য হবে ।
আকরামের এই কথাটি এক বছর আগে একটি লেখায় আমিও বলেছিলাম যে বিএনপি যদি জামাতের উপর নির্ভর করে আন্দোলন করে তবে নির্বাচনের সময় জামাত সেই হিসাব কড়ায় গণ্ডায় আদায় করে নিবে । এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে যদি আওয়ামীলীগ কাদের মোল্লার ফাঁসি স্থগিত করে তবে বিনিময়ে মার্কিনের কাছে কিছু আদায় করেনি তা নয় । আর তা যদি হয় জামাতকে বিএনপি জোট থেকে বের করে আনা , তবে আগামী ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ হাসতে হাসতে জিতে বেড়িয়ে আসবে । ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তো একতরফা হচ্ছে এবং তার স্বীকৃতিও আওয়ামীলীগ আদায় করে নিয়েছে । ফলে বিএনপি যদি দীর্ঘ সময় বিরোধী দলে থাকে তবে দলটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পরবে ।
তবে পরিশেষে এটুকু বলা যায় যে আওয়ামীলীগ যা করছে তা রাজনীতি নয় , তা হচ্ছে ষড়যন্ত্র । আর রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র সব সময় ক্ষণস্থায়ী । বিএনপি যদি তার সঠিক রাজনীতি করতে পারে অর্থাৎ উন্নয়নের পক্ষে একটি সঠিক কর্মসূচী হাজির করতে পারে তবে আরেকবার ক্ষমতায় আসলে এই দলকে নির্বাচনে হারানো কঠিন হয়ে যাবে । তবে দলের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে । বর্তমান বিএনপি আজকের এই দুর্দশায় পরেছে শুধু যোগ্য নেতার অভাবে ।
আওয়ামীলীগ মাঝখানে এই সমস্যায় পরলেও এখন তা কাটিয়ে উঠেছে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।