আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘাটতির মুখে এনবিআর তবু বিশাল লক্ষ্য

সরকারের শেষ অর্থবছরে (২০১৩-১৪) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওপর রাজস্ব আদায়ের বিশাল লক্ষ্য চাপানো হচ্ছে। এবারের পরিকল্পনা হচ্ছে প্রায় এক লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়। এর অর্থ হচ্ছে, নতুন অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৩ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা বা ২৩ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে।
অথচ এই সরকারের আমলে প্রথমবারের মতো রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির মুখে পড়তে যাচ্ছে এনবিআর। চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে।

এক লাখ ১২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা আদায়ের মোট লক্ষ্য থাকলেও তা অর্জন নিয়ে এখনো শঙ্কা রয়েছে।
ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগামী অর্থবছরে এনবিআরের জন্য এই বিশাল লক্ষ্য চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার শেষ বাজেট বলে ব্যয়েরও নানা ধরনের চাপ রয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই বড় লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্রমহ্রাসমান গতিশীলতার কারণে প্রাথমিকভাবে এনবিআরের পক্ষ থেকে এই লক্ষ্য নির্ধারণের বিষয়ে আপত্তি ছিল বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।


গত মে মাসের শুরুতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাজেট নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে এক লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন তিনি। বৈঠকে এনবিআরের কর্মকর্তারা অর্থমন্ত্রীকে জানান, আগামী অর্থবছরে সম্ভাব্য অস্থির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে এনবিআরের পক্ষে এক লাখ ২৫ হাজার থেকে এক লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে।
বৈঠকের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, অর্থমন্ত্রী এনবিআরের কর্মকর্তাদের আশ্বাস দেন, প্রথম ছয় মাসের রাজস্ব আদায়ের গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেওয়া হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এই বিশাল লক্ষ্য অর্জন এনবিআরের জন্য বেশ কঠিন হবে।

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা ও রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত হচ্ছে এবং বিনিয়োগ, আমদানি ও উৎপাদন কমেছে। ব্যাংকগুলোর মুনাফাও কমেছে। আবার হরতালের কারণে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের দোকানপাট বন্ধ থাকছে। এসব কারণে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।

চলতি অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ে কমপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে বলে তিনি মনে করেন।
মির্জ্জা আজিজ মত দেন, সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন না হলে নির্বাচন-উত্তর একই ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা অব্যাহত থাকবে। প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়িয়েও এসব সমস্যার সমাধান করা যাবে না। তাই আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায় করা বেশ কঠিন হবে।
এদিকে, এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য মূল্য সংযোজন কর (মূসক) খাতে ২৬ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে সবচেয়ে বেশি ৫১ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের মূসক খাতের আদায় লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা বেশি।

চলতি অর্থবছরে এই খাতে ৪০ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে।
তবে এ-যাবৎকালের সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে আয়কর আদায়ের ক্ষেত্রে। নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে ৪৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আয়কর আদায় করতে হবে, যা চলতি অর্থবছরে এই খাতে আদায়ের লক্ষ্য থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা বেশি।
তবে বিভিন্ন ধরনের শুল্ক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা তেমন বাড়ানো হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের তুলনায় মাত্র ৪৫০ কোটি টাকা বাড়িয়ে লক্ষ্য হচ্ছে ৩৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, আবগারি শুল্ক, রপ্তানি শুল্কসহ বিভিন্ন ধরনের শুল্ক আদায় করা হয়। আর এসব শুল্ক আদায় করা হয় পণ্য আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে। আগামী অর্থবছরের রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিবেচনা করে শুল্ক খাতে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়নি বলে এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান। এ ছাড়া টার্নওভার কর, ভ্রমণ করসহ বিভিন্ন কর ও শুল্ক বাবদ আরও ৯০০ কোটি টাকার লক্ষ্য থাকবে।
এনবিআরের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন সম্প্রতি এই প্রতিবেদককে জানান, হরতাল, সহিংসতাসহ রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে এবং অর্থনীতিতে স্বাভাবিক গতিশীলতা থাকলে শুধু চলতি অর্থবছর নয়, আগামী অর্থবছরেও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।

যদি দোকানপাট খোলা না থাকে, বন্দর দিয়ে পণ্য খালাস করা না যায়, তবে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হবে না।
তিন বছর পর ঘাটতি: লক্ষ্য অর্জনে টানা তিন অর্থবছরে সফলতার মুখ দেখেছে এনবিআর। কিন্তু এবারই প্রথম রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির মুখে পড়তে যাচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটি।
২০১১-১২ অর্থবছরে এনবিআরের লক্ষ্য ছিল ৯২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, আদায় হয় ৯৪ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে ৭৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয় ৭৯ হাজার ৯২ কোটি টাকা।

২০০৯-১০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৬২ হাজার ৭ কোটি টাকা। সে বছর এনবিআরের লক্ষ্য ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা।
কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি চার হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। এই সময়ে আয়কর, মূসক ও শুল্ক খাতে মোট ৮৩ হাজার ৩১ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে এনবিআর। অথচ আদায় করার কথা ছিল প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা।


জুলাই-এপ্রিল সময়ে স্থানীয় পর্যায়ে মূসক, সম্পূরক শুল্ক, টার্নওভার কর, আবগারি শুল্কে আদায় হয়েছে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। আর আমদানি পর্যায়ে আদায়ের পরিমাণ ২৬ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। আয়করসহ প্রত্যক্ষ কর আদায় হয়েছে ২৬ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা।
এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, বছরের শেষ দিকে রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়ে। আর সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা বকেয়া আদায় করা সম্ভব হলে বছর শেষে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার মধ্যে থাকবে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।